হবু স্বামীদের কাছে যাচ্ছিলেন রোহিঙ্গা তরুণীরা

এইমাত্র জীবন-যাপন সারাদেশ

সেন্টমার্টিনে ট্রলার ডুবি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় মা-বাবা, ভাই-বোন সবাইকে মেরে ফেলেছে সেনাবাহিনী। তারপর বাংলাদেশে এসে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে মামার বাসায় থাকতাম। মামাতো ভাই রফিক মালয়েশিয়া থাকে। তার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে। তাই মামাতো ভাই মালয়েশিয়া থেকে আসতে না পারায় আমাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। প্রথমে বিমানে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু তা না পারায় সমুদ্রপথে যাওয়ার জন্য বলে। কারণ কয়েকটি ট্রলার মানুষ নিয়ে সম্প্রতি মালয়েশিয়া পৌঁছেছে। যার কারণে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেছি। বুধবার দুপুরে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন টেকনাফ থানা হেফাজতে থাকা সেন্টমার্টিনে ট্রলার ডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া রোহিঙ্গা তরুণী নজুমা খাতুন (২০)।
শুধু নজুমা খাতুন নন, একই অবস্থা মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টাকালে ট্রলারডুবির ঘটনায় বেঁছে যাওয়া একাধিক রোহিঙ্গা তরুণীর।
জীবিত উদ্ধার হওয়ার টেকনাফ জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তরুণী দিল জোহরা (২২) বলেন, টেকনাফের দালাল সাইফুল আর মালয়েশিয়ার দালাল ছৈয়দ আলম এই দু’জনকে ৩০ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে। আর বাকি ১৩ হাজার টাকা মালয়েশিয়া পৌঁছালে দিতে হবে এই কথা হয়।
কেন মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে দিল জোহরা বলেন, মা-বাবা নেই, গরিব এতিম মেয়ে। তাই বিয়ে করে সংসার করার জন্য মালয়েশিয়া সমুদ্রপথে যাচ্ছিলাম। আমার এক বোন মালয়েশিয়া আছে, সে এক ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
টেকনাফ জামতলী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা তরুণী জোহরা বিবি (২০) বলেন, টেকনাফে ক্যাম্পে ভাল আছি, কিন্তু মা-বাবা দুইজনই মালয়েশিয়ায়। তারা আমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য একজন পাত্র ঠিক করেছে মালয়েশিয়ায়। তাই বিয়ে করার জন্য সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাত্রা করি।
এদিকে জীবিত উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের টেকনাফ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে কোস্টগার্ড। তাদেরকে রাখা হয়েছে টেকনাফ থানার একটি কক্ষে। সেখানে দেখা যায়, উদ্ধার হওয়া ৭৩ জনের মধ্যে ৪৬ জন রোহিঙ্গা তরুণী, ২৫ জন পুরুষ ও বাকিরা শিশু।
এ ব্যাপারে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ জানান, উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে সবাই যে টাকার বিনিময়ে মালয়েশিয়া যাচ্ছিল সেটা বলা যাবে না। এরা যাচ্ছিল মূলত তাদের হবু স্বামীদের কাছে। মালয়েশিয়ায় যেসব রোহিঙ্গা যুবক রয়েছেন, তারা অনেক সময় বিয়ের জন্য পাত্রী পান না। তারাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজেরা টাকা দিয়ে রোহিঙ্গা তরুণীদের নিয়ে যান বিয়ের জন্য।
সেন্টমার্টিনে নৌবাহিনীর অফিসার ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জায়েদ বলেন, উদ্ধারদের অনেকের সঙ্গেই কথা হয়েছে, তারা যেটি বলেছে সেটি হলো মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে এরা মাথাপিছু চল্লিশ হাজার করে টাকা দিয়েছিলেন দালালকে। মূলত বিয়ের উদ্দেশ্যে অনেক রোহিঙ্গা তরুণী এই পথ বেছে নেন।
মঙ্গলবার সকালে সেন্টমার্টিন থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়াগামী একটি ট্রলার ডুবির ঘটনায় ১৫ জন মারা যান। এছাড়া জীবিত উদ্ধার করা হয় ৭৩ জনকে। এরা সবাই উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে বসবাস করে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *