জুরাইনে ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বাজাজরাত

অপরাধ আইন ও আদালত রাজধানী স্বাস্থ্য

র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালতের দৃষ্টি আকর্ষন

 

আজকের দেশ রিপোর্ট : রাজধানীর জুরাইন এলাকার কয়েকটি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবৈধ, ভেজাল ও নিম্ন মানের ওষুধ প্রস্তুত ও বাজার জাতের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই সব ইউনানি আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুকারী প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন যাবত ওষুধের ব্যানারে কালার ফ্লেভার ও কেমিকেল ব্যবহার পূর্বক ওষুধ প্রস্তুত করে বাজারজাত করছে ফলে এই সব ওষুধ সেবনে জনগণের কোন উপকার হচ্ছে না। উপোরন্ত জনগণ বিরুপ প্রতিক্রায়ার শিকার হয়ে নানা রকম শারীরিক জটিলতায় ভুগছে। এই অভিযোগ ভুক্তভোগি মহলের একাধিক সূত্রের। জুরাইনের যে সকল ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবৈধ, অন-অনুমোদিত, ভেজাল ও নিম্ন মানের ওষুধ উৎপাদন ও বাজার জাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে, এর মধ্যে অনির্বান মেডিসিনাল ইন্ডাস্ট্রীজ (আয়ু), জেনেসিস ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু), দিহান ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এবং এস.এস ফার্মাসিউটিক্যালস(ইউনানী) অন্যতম। অনির্বান মেডিসিনাল ইন্ডাসট্রীজ (আয়ু) এর কারখানা আবাসিক ভবনে থাকায় এবং ভেজাল ও নিম্ন মানের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত কারর দায়ে র‌্যাবের ভ্রাম্মমান আদালত বেশ কয়েক বার হানা দেয়। গত বছর র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত অনির্বান মেডিসিনাল ইন্ডাস্ট্রীজ (আয়ু) এর কারখানায় নকল ভেজাল বিরোধী এক অভিযান পরিচালনা করে। ভ্রাম্যমান আদালত অনির্বানের কারখানায় গিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সহ নানা রকম অনিয়ম দেখতে পায়, ফলে উক্ত কোম্পানীকে ২৭,০০,০০০/- (সাতাশ লক্ষ) টাকা জরিমানা করে। সম্প্রতি দিহান ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এবং জেনেসিস ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবত ওষুধের নামে বাহারী মোড়কে ভয়ংঙ্কর পাশর্^প্রতিক্রিয়াযুক্ত ওষুধ বাজারজাত করার অভিযোগ উঠেছে। উক্ত কোম্পানী ২ (দুই) টি ভিটামিন ওষুধে ডেক্সামেথাসন, সিপ্রোহেপ্টাডিন, থিয়ভিট (গাবাদী পশু মোটা তাজা জাত করণ কেমিকেল) ও ক্যালসিয়াম ক্যার্বনেট ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যৌন উত্ত্বেজক ওষুধ সামগ্রীতে সিলড্রেনাফিন, সাইট্রেট ও ট্রাডালাফিন সাইট্রেট নামক ভায়গ্রার উপাদান ব্যবহার করছে বলে ও ওষুধ ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত একটি সূত্রের দাবি। জ¦রের ওষুধে প্যারাসিটামোল, গ্যাস্ট্রিক ও আলসারে ওষুধে এন্টাসিড, রেনিটিডিন, ওমিওপ্রাজল এবং ব্যথা ও ব্যথানাশক ওষুধে ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম বিপি নামক এলোপেথিক ওষুধের কাচা মাল ব্যবহারের খবর পাওয়া গেছে। অথচ বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক ফর্মুলারী এবং বাংলাদেশ ইউনানী ফর্মুলারীতে এলোপথিক ওষুধের কাঁচামাল বা কোন প্রকার কেমিকেল ব্যবহারের নিয়ম নেই। জুরাইনের ইউনানী-আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানীর কর্তৃপক্ষ এই সব কেমিকেল এর ব্যবহার প্রতিনিয়ত করেই চলছে। ভাবসাবে মনে হয় রাজধানী জুরাইন এলাকাটা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের আওতামুক্ত। যেন উক্ত এলাকায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কোন নিয়ন্ত্রন নেই। থাকলে দিহান ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এবং জেনেসিস ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) জনাস্বাস্থ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া ফেলে এমন সব ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করতে পারত না। গত ১৭/০২/২০২০ইং তারিখে আজকের দেশ অনলাইনে ‘ভেজাল ও নিম্ন মানের ওষুধ বাজারজাতের অভিযোগ’ শিরোনামে জেনেসিস ও ইউনিটি ফার্মাসিউটিক্যালস এর বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে অত্র প্রতিবেদন লেখা অবধি প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও মাঠ পার্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা রহস্যজনক নিরাবতা পালন করছেন। কর্মকর্তাদের এই অত্যাধিক নিরবতাকে ভিন্ন চোখে দেখছেন সচেতন মহল। সম্প্রতি জুরাইনের দিহান ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এর বিরুদ্ধে একই ডি.এ.আর নাম্বার ব্যবহার করে ২ নামে একই ভিটামিন সিরাপ প্রস্তুত ও বাজারজাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে এছাড়াও উক্ত কোম্পানী এনজয় প্লাস ক্যাপসুল, এনজয় প্লাস সিরপ, রুচিটন সিরাপ, দি-টন ও দি-গোল্ড নামক ট্যাবলেট দীর্ঘদিন যাবত অবৈধ ভাবে বাজারজাত করছে। এই বিষয়ে অভিযোগ এনে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সাবেক মাহা পরিচালক এর বরাবর একাধিক লিখিত অভিযোগ জমা হলেও কতিপয় কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে দিহান ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। উক্ত কোম্পানী বলারিষ্ট নামে ৪৫০মি.লি সিরাপ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে, যার ডি.এ.আর নাম্বার: আয়ু-৪৯-এ-০৭, ব্যাচ নাম্বার:-০০৫, মূল্য ১৪০ টাকা এবং দি-টোন (বলারিষ্ট) ২০০ মি .লি. সিরাপ এর ডি.এ.আর নাম্বার:- আয়ু-৪৯-এ-০৭, ব্যাচ নাম্বার:-০০৫, মূল্য:-৯০টাকা। এখানে প্রশ্ন উঠে যে, একই বলারিষ্ট দি-টোন এবং বলারিষ্ট নামে একই ডি.এ.আর নাম্বার (আয়ু-৪৯-এ-০৭) ব্যাবহার করে ২ নামে ভিটামিন ওষুধ উৎপাদন ও বাজরজাত করা কতটা আইন সিদ্ধ। এই সব অভিযোগ এর বিষয়ে দিহান ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এর মালিক মো. লিটন এর বক্তব্য জানতে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য প্রকাশ করা গেলো না। এই সব বিষয়ে সচেতন মহল র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সারোয়ার আলমের দৃষ্টি আকর্ষন করছেন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *