সুপারভাইজার থেকে কোটিপতি রাজশাহী সদর দলিল লেখক সমিতির সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি মহিদুল

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর বিশেষ প্রতিবেদন রাজশাহী সারাদেশ

রাজশাহী সদর দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি মোঃ মহিদুল হক।


বিজ্ঞাপন

 

সাগর নোমানী (রাজশাহী) :  রাজশাহী সদর দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি মোঃ মহিদুল হকের নানা অপকর্মের তথ্য পাওয়া গেছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক সিটি মেয়র লিটনের অর্থদাতা ছিলেন মহিদুল হক বলে জানা গেছে। মহিদুল সাবেক মেয়র লিটনকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে রেজিস্ট্রি অফিস ও দলিল লেখক সমিতিকে নিজের হাতের মুঠোয় রেখেছিলেন। মহিদুল যা বলতেন তাই হতো, তার কথার বাইরে কারো যাওয়ার ক্ষমতা ছিল না। সে স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেছিলেন সদর দলিল লেখক সমিতি ও রেজিস্ট্রি অফিসে।


বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে সাক্ষাৎকারে বর্তমান সদর দলিল লেখক সমিতির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব মোঃ শামীম রেজা বলেন, সাবেক সভাপতি অর্থাৎ মোহরি লীগের সভাপতি মহিদুল হক সাবেক মেয়র লিটনের ফ্যাসিবাদ ও ছাত্রগণহত্যার খুব কাছের সহযোগী ছিলেন। ক্ষমতার দাপটে রেজিস্ট্রি অফিসকে দলীয় করন করেছিলেন। তার ক্ষমতার দাপটে কেউ মুখ খুলতেন না, মুখ খুললেই জামাত শিবির, বিএনপি ও হেরোইন দিয়ে মামলা দিতেন। তার গুণ্ডা বাহিনী আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ দিয়ে নির্যাতন চালাতেন। এমনকি আমি নিজেও মহিদুলের আক্রোশ থেকে রেহাই পায়নি।

তার স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় আমি ও আমার বন্ধু মোঃ আব্দুস সামাদকে হেরোইন মামলা দিয়ে ফাঁসানো  হয়েছিল। আমার বন্ধু আব্দুস সালাম কে ৬ গ্রাম এবং আমাকে ৭গ্রাম হেরোইন মামলার পলাতক আসামি দেখায়। এই মামলায় আমার বন্ধু আব্দুস সালামকে গ্রেফতার করা হয়, খবর পেয়ে আমি থানায় যোগাযোগ করে জানতে পারি আমার নামে ৭গ্রাম হেরোইনের পলাতক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিষয়টি অবগত করি।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি আমলে নিয়ে মিথ্যা মামলা থেকে আমাকে রেহাই দিলেও আমার বন্ধু আব্দুস সালামকে ৯৬ দিন হাজতবাস করতে হয়েছে। আমার অভিযোগের ভিত্তিতে  কাশিয়াডাঙ্গা থানার ২জন পুলিশ কর্মকর্তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। মহিদুল বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক বদরুদ্দোজা (বদরকে) হুমকি দিয়ে বলতো বিএনপি রাজাকারের দল, রাজাকারের দল করলে মেরে হাত-পা ভেঙে ফেলা হবে। তার ক্ষমতার দাপটে আমরা কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পারিনি। কারন সে এই অফিস থেকে মোটা অংকের টাকা সাবেক মেয়র লিটনকে দিতেন।

আর সাবেক মেয়র লিটনের ক্ষমতার কাছে রাজশাহীবাসী অসহায় ছিলেন। মহিদুল সাবেক মেয়র লিটন সহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের অর্থ যোগান দিয়ে বহুদিন তার সভাপতি পদে বহাল ছিলেন। মহিদুল তার গুন্ডা বাহিনী দিয়ে আমাকে হাতুর, রড,জিয়াই পাইপ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত যখম করে রাস্তায় ফেলে রাখে।

থানায় মামলা করতে গেলে আমার মামলাটি গ্রহণ করা হয়নি। মহিদুল এভাবেই সাবেক মেয়র লিটনের আশ্রয় প্রশ্রয়ে   দলিল লেখক সমিতিতে রাজত্ব করেছেন। মহিদুল একজন সুপারভাইজার ছিল কিন্তু বর্তমানে সে কয়েকশো কোটি টাকার মালিক কিভাবে হলেন। ক্ষমতার দাপটে বার বার সভাপতির পথ হাকিয়ে নিয়ে তিনি সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। মহিদুল ৬ আগস্ট তার পদত্যাগ পত্র লোক মারফতে জমা দিয়ে এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন। তিনি যদি ভালো মানুষ হতেন তাহলে কেন পালিয়ে থাকবেন।

প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, অতি দ্রুত এই দুর্নীতিবাজ মহিদুলকে আইনের আওতায় আনা হোক, তাহলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। এরপর যুগ্ন আহবায়ক মোঃ বদরুদ্দোজা (বদর) সাক্ষাৎকারে বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজশাহী সদর দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি মহিদুল হক বিনা ভোটে দীর্ঘদিন সভাপতির পদে বহাল ছিলেন।

মহিদুল ক্ষমতার দাপটে কাউকে সভাপতি পদে দাঁড়াতে দিতেন না এবং আমাকেও সে সভাপতি পদে ভোট করতে দেননি। মহিদুল তার একটি দলিলের বিষয়কে কেন্দ্র করে অন্যায় ভাবে আমাকে ৩০ মাস অফিসে কার্যক্রম থেকে বিরত রাখে। আমাকে হুমকি দিয়ে বলতেন আপনারা দুজন বিএনপির রাজাকারের দলের লোক, বেশি কথা বললে দুইজনকেই চার লক্ষ টাকা খরচ করে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিব। গত নির্বাচনে আমাকে সভাপতি প্রার্থী হতে দেয়নি। গুন্ডাবাহিনী দিয়ে মারপিট করে আমাকে লাঞ্ছিত করেছে। আমাকে মেরে রাস্তায় ফেলে রেখেছিল।

মহিদুল জাল লাইসেন্স ব্যবহার করে এতদিন দলিল লেখক সমিতিতে রাজত্ব করেছে। সে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অর্থের যোগান দিয়ে সাবেক মেয়র লিটনকে সহযোগিতা করেছে। তিনি আমাদের অফিসের পিয়ন আমিনুল ইসলাম কে গুলি করে মারার হুমকি দিয়েছিলেন পবা অফিসের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। যার রাজ সাক্ষী আমি। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, এই ধরনের কুখ্যাত অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

এরপর রাজশাহী সদর দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি মহিদুল হকের মুঠোফোনে ফোন দেয়া হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *