নিজস্ব প্রতিবেদক : আত্মঘাতী করোনাভাইরাসের উৎপত্তি চীনে হলেও এটি এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। মারাও গেছে বেশ কিছু মানুষ। এ অবস্থার বাইরে নয় দ্বীপ দেশ সিঙ্গাপুরও। দেশটিতে ৯০ জনকে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। যাদের মধ্যে একই নির্মাণস্থলে কর্মরত ৫ বাংলাদেশি শ্রমিকও আছেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’ বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছে।
সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে ফিলিপিনো ও ইন্দোনেশীয় গৃহকর্মীদের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক বাংলাদেশি গৃহকর্মীরও এ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
দক্ষিণ এশিয়া থেকে সিঙ্গাপুরের আসা নির্মাণশ্রমিকরা সাধারণত ১২ শয্যার ডরমিটরিতে থাকেন, যেখানে তাদের সবার জন্য একটাই বাথরুম থাকে। কারাগার ও ক্রুজ শিপের মতো মানুষের ভিড়েই এই ভাইরাস ছড়ায় বেশি।
এসব নির্মাণ শ্রমিকদের মধ্যে অন্যতম ২৪ বছর বয়সী কাকন মিয়া বলেন, তার অনেক বন্ধু দেশে ফিরে গেছেন, কারণ সেখানে ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কোনো ঘটনা নেই। সিঙ্গাপুরকে বিপদমুক্ত ঘোষণার পরই তারা ফিরবেন।
কয়েকজন সহকর্মীর পাশে দাঁড়িয়ে মাতৃভাষায় এই তরুণ বলেন, আমরা এখন আছি। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হলেই দেশে ফিরে যেতে পারি।
সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাই কমিশন বলছে, তারা অনলাইনে শ্রমিকদের দেশে ফিরে যেতে বারণ করছেন। একইসঙ্গে সশরীরে ডরমিটরিতে গিয়ে তাদের মধ্যে মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ ও বাংলায় লেখা সতর্কতামূলক প্রচারপত্র বিলি করছেন।
হাই কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের দেশে ফেরা ঠেকাতে আমরা বেশ সক্রিয় রয়েছি। খামোখা অযৌক্তিক ভয় যাতে তারা না পান সে বিষয়ে আশ্বস্ত করছি।
সিঙ্গাপুরে আসা-যাওয়ায় বাংলাদেশ সরকার কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। হাই কমিশনের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যমতে, এই নগররাষ্ট্রে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি কাজ করে।
বাংলাদেশের যখন সিঙ্গাপুরে যাওয়ার জন্য পা পাড়ায় তখন অনেকের ঘারেই থাকে বিশাল ঋণের বোঝা। এজেন্সিগুলোকে এত টাকা দিতে হয় যে তা সিঙ্গাপুরে তার অনেক মাসের বেতনের সমান। একারণেই অনেকে দেশে ফেরার চিন্তা করেও পিছিয়ে আসেন।
এমনই একজন ২৫ বছর বয়সী মজিদুল হক, যিনি বাংলাদেশ এক মাসের ছুটি কাটিয়ে সোমবার ফিরেছেন। বাবা-মা তাকে আসতে দিতে না চাইলেও পরিবারের অর্থনৈতিক চাহিদা তাকে ফিরতে বাধ্য করেছে।
কৃষক বাবার আয় দিয়ে স্কুলগামী ভাইবোনসহ ছয় সদস্যের পরিবারের দিন চলে না জানিয়ে এই তরুণ বলেন, আমার উপার্জন ছাড়া চলবে না।
সিঙ্গাপুরের উন্নত চিকিৎসা সেবা এবং দিনে দুই বার তাপমাত্রা মাপা ও সন্দেহভাজনদের আলাদা করে রাখার মতো প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ তাদের থেকে যাওয়ার আস্থা যুগিয়েছে বলে বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানান।
রউফ নওশার্দ লেম্বু রোডে একটি ট্রাভেল এজেন্সি চালান, যেখানে সাধারণ বাংলাদেশি শ্রমিকরাই সেবা নিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, গত ১৪ দিনে বুকিং ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এর মধ্যে অনেকেই একদিনের নোটিশে ঢাকায় ফিরতে চাচ্ছেন। আগে কখনোই এমন হয়নি। তারা সবসময় পরিকল্পনা করে দেশি ফিরতো। এখন তারা তাৎক্ষণিকভাবে সিঙ্গাপুর ছাড়তে চায়।