সাবেক আওয়ামীলী ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রেতাত্মা খ্যাত চট্টগ্রামের জেলা রেজিস্ট্রার মিশন চাকমা।
নিজস্ব প্রতিবেদক (চট্টগ্রাম) : তহবিল গোছানোর মিশনে মরিয়া হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের জেলা রেজিস্ট্রার মিশন চাকমা। চাকরির অবসরকে সামনে রেখে তিনি এই মিশনে নেমেছেন। লক্ষ্য একটাই, ঘুষ-দুর্নীতির বিষ দাঁত বসিয়ে বিদায়ের আগে ‘যা পাই, লুটেপুটে খাই’ এমন মিশনে তিনি এখন বেপরোয়া।
জেলা রেজিস্ট্রারের চাকরির শেষ সময়ে এমন দূরন্ত অনৈতিক চাহিদার সঙ্গে খাপ-খাইতে ত্রাহী এাহী অবস্থা তার অধীনস্থদের। একই অঞ্চলে দীর্ঘদিন চাকরির সুবাধে আইনি ফাঁক-ফোঁকর ও অবৈধ পথে অর্থ উপার্জের কৌশল আগেই রপ্ত করা আছে সচতুর এই কর্মকর্তার। এ বিষয়টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন থেকে কর্মকর্তা কারো কাছে অজানা নই।
এই মিশন বাস্তবায়নের ক্যাশিয়ার তারই প্রধান সহকারী জাফর উল্ল্যাহ বলে জানা গেছে। বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ইনকামের ছক অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেলার সকল সাব রেজিস্ট্রি অফিসগুলো থেকে তিনিই আদায় করেন। আর অবৈধ আয়ের ভাগ-বাটোয়ার করে নেন গুর-শিষ্য দু’জনে মিলে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা রেজিস্ট্রার মিশন চাকমা তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে ধোয়া তুলসী পাতা দাবি করেন । তিনি বলেন, আমার অবৈধ কোনো সম্পদ নেই। নিজের না, স্ত্রী-সন্তান কিংবা কারো নামেই নেই। এর আগেও এমন অভিযোগ উঠেছিল; কিন্তু সম্পদের প্রমাণ দিতে পারেনি। সম্ভব হলে, আপনি পুরনো স্টেশন নারায়নগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ও মেহেরপুর খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন; আমি কেমন সজ্জন অফিসার ছিলাম। যা-হোক। আমার চাকরি শেষ হবে চলতি বছরে। এ সময়ে একটা নিউজ করে আমার ক্ষতি করার মানে হয় না।
অভিযোগ রয়েছে, আধু নগরের সাব -রেজিস্ট্রার ইসমাইল হোসনের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে তাকে সন্দ্বীপ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছেন জেলা রেজিস্ট্রার মিশন চাকমা। নিয়ম অনুযায়ী, কোন অফিসে সাব রেজিস্ট্রারের পদ শূন্য থাকলে কাজের সুবিধার্থে নিকটবর্তী অফিসের কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু বিধি লঙ্ঘন করে দূরে অবস্থান করা সাব রেজিস্ট্রার ইসমাইলকে সেখানে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
আই জিয়ার অফিসের অনুমোদন ছাড়াই সন্দ্বীপ অফিসের সহকারী মাহফুজুর রহমানের বরখাস্ত (সাসপেন্ড) আদেশ প্রত্যাহার করেন । এছাড়া ও ঐ মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়-বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মামলা দায়ের করেছে। মামলাটি চলমান থাকাবস্থায় মোটা অংকের টাকা নিয়ে দুর্নীতিবাজ সহকারী মাহফুজুরকে সন্দ্বীপ অফিস থেকে চট্টগ্রাম সদরে বদলির জন্য সুপারিশসহ আবেদন পাঠিয়েছেন জেলা রেজিস্ট্রার , যা বিধি-বর্হিভূত।
তাছাড়া বাঁশখালীর নকল নবীশ মায়া রানী বড়ুয়াকে প্রায় বিশ লাখ টাকার বিনিময়ে টিসি মহোরার পদে পদোন্নতি দিয়ে চট্টগ্রাম সদরে বদিল করা হয়েছে। এ অবৈধ লেনদেনের নেপথ্যে জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের সহকারী সাইফুল জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে।
ও দিকে চান্দ্যঁগাঁও সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সামনের লিজ প্রাপ্ত একটি ভাতের হোটেল ও চায়ের দোকান ভেঙে জন প্রতি ৫ লাখ টাকা করে উৎকোচ নিয়ে ২০জন দলিল লেখকের চেম্বার করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই মিশন চাকমার বিরুদ্ধে।
জানা যায়, স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার বিশেষ আর্শিবাদ পুষ্ট হওয়ার সুবাধে সাব রেজিস্ট্রার এর চাকরির শুরু থেকেই ঘুরে ফিরেই চট্টগ্রাম অঞ্চলেই চাকরি করেছেন এই মিশন চাকমা।
পরে পদোন্নতি পেয়ে জেলা রেজিস্ট্রার হওয়ার পর উপর মহলকে ম্যানেজ করে চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেন। এই পদে বসেই ঘুষের মহৎসবে মেতে উঠেন তিনি। এভাবেই অবৈধ ও অনৈতিক পথেই হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই তিনি সাবেক আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রেতাত্মা ও একান্ত আস্থাভাজন হিসেবে চট্টগ্রামের জেলা রেজিস্ট্রারের লোভনীয় পদটি বাগিয়ে নেন।
নিবন্ধন অধিদপ্তরের অনুমতির তোয়াক্কা না করেই বাহাদুর মিশন চাকমা এক কলমের খোঁচায় ৮০জন নকলনবিশ নিয়োগ দেন সন্দ্বীপ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে । এই ঘটনায় আইন মন্ত্রণালয় ও নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেন। খবরটি সে সময় পুরো দেশজুড়ে হইচই পড়ে যায়। এই অবৈধ নিয়োগ থেকেই তার পকেটে ঢোকে চার কোটি টাকা বেশি।
এক পর্যায়ে এ ইস্যুতে বিতর্ক তুঙ্গে পৌছালে এবং চাকরি খোয়ানোর ভয়ে নিয়োগটি বাতিল করলে ও ঘুষের টাকা ফেরত দেননি বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া জমি রেজিস্ট্রির দলিলে নানা ভুল-ভ্রান্তি কারণে অনেক সময় সাব রেজিস্ট্রাররা দলিলটি করতে রাজি হন না। তখন জেলা রেজিস্ট্রার মিশন চাকমা ঐ সব দলিল রেজিস্ট্রি করতে ও চাপ প্রয়োগ করেন।
চাকরির এসিআরে উদ্ধর্তন কর্মকর্তার নেতিবাচক মন্তব্য লাগার ভয়, বদলি আতঙ্ক এবং চাকরি হারানোর ভয়ে অনেক জুনিয়র সাব রেজিস্ট্রার কাগজপত্রে ঘাপলা সত্ত্বেও জমির দলিল রেজিস্ট্রি করতে বাধ্য হন। অনেক সময় বিব্রত হলেও নিরুপায় হয়ে বসের অনৈতিক কাজে সমর্থন দেন। এখান থেকেও মোটা অংকের অর্থ আদায় করে নেন মিশন চাকমা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রারে অধীনে ২২টি সাব-রেজিস্ট্রিার অফিস রয়েছে। প্রতিটি অফিস থেকে দলিল প্রতি ৩০০ টাকা, দলিলের নকল প্রতি ২৫০ টাকা এবং জমি রেজিস্ট্রির কমিশনের অনুমতির জন্য দলিল প্রতি আদায় করা হয় ৩০০০ টাকা।
এই ঘুষের মাসোহারা তার প্রধান সহকারী ও ক্যাশিয়ার জাফর উল্ল্যাহ মাধ্যমে সপ্তাহের শেষে অধীন সব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জেলা রেজিস্ট্রারে পকেটে ঢোকে। মাসিক বেতনের বাইরে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বাড়তি আয় করেন চট্টগ্রামের জেলা রেজিস্ট্রার। এসব অবৈধ আয় ওপেন সিক্রেট হলেও সবাই থাকেন নিঃশ্চুপ।
বসের ঘুষের ক্যাশিয়ার হিসেবে প্রধান সহকারী জাফর উল্ল্যাহ নিজেও এখন কোটিপতি বনে গেছেন। প্রতি মাস শেষে ২২ টি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কোন একটি থেকে পাঠানো ঘুষের মাসোহারা কম হলে হুমকি-ধমকিও শুনতে হয় সাব রেজিস্ট্রারদের বলেও আলাপে জানা গেছে। এতে তার অধীনে কর্মরত অনেকেই স্টেশন বদলাতে করছেন স্ব-উদ্যোগে তদবির।
দু’হাতে এভাবেই পয়সা কায়িমে মিশন চাকমা করেছেন একাধিক প্লট-ফ্ল্যাট ও রিসোর্ট। এর মধ্যে ঢাকার কমলাপুর, উত্তরায় ফ্ল্যাট, চট্টগ্রামের চান্দ্যঁগাঁওয়ে আবাসিক বাড়ি এবং নিজ জেলা রাঙামাটিতে বিলাসবহুল আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট গড়ে তুলেছেন বলেও জনশ্রম্নতি রয়েছে। এছাড়া রয়েছে নামে-বেনামে জমি। তবে এগুলো মানতে রাজি নন মিশন চাকমা। যদি এ ধরণের সম্পদের হিসাব কেই দিতে পারে তাকে ওই সম্পদগুলো দিয়ে দিবো বলে দাবী করেন এই জেলা রেজিস্ট্রার।
এছাড়া এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে দুদকে ডজন ডজন অভিযোগ জমা হলেও অর্জিত অবৈধ কালো টাকা দিয়ে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করা কর্তৃপক্ষ ম্যানেজ করে ফেলায় আজ অবধি একটি অভিযোগ ও আলোর মুখ দেখেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত বুধবার তার এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা হয় নিবন্ধন অধিদপ্তরের সহকারি মহা-পরিদর্শক (এআইজিআর) মোঃ আব্দুস ছালাম আজাদ এর সঙ্গে। চট্টগ্রামের জেলা রেজিস্ট্রারের বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যম কে তিনি বলেন, এ ধরণের অভিযোগের বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।
বলেন, আপনার করা অভিযোগটির বিষয়ে আমি ওনার সঙ্গে কথা বলবো। যদি কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে মহা পরির্দশক নিবন্ধন নুরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান আমি নতুন ঘুষ দুর্নীতির বিপক্ষে আমার কোন মন্তব্য নেই।