৬ মাস ধরে বেতন বন্ধ সিলেট সরকারি ইউনানী আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজের শিক্ষকদের

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ সিলেট স্বাস্থ্য

বিশেষ প্রতিবেদক  : সুরম্য ভবন আছে, অবকাঠামো আছে। আছেন ৮৬ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু তাদের ক্লাস নেয়ার জন্য কোনো বেতনভোগী শিক্ষক নেই। সরকারি আদেশে শিক্ষকদের নিয়োগ আদেশ বাতিল হওয়ায় এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে সিলেটের প্রাচীনতম ইউনানী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিলেট সরকারি ইউনানী আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজে।


বিজ্ঞাপন

কলেজের ২৬ জন শিক্ষক ছয় মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। সরকারি দুটি আদেশে তাদের চাকরি বাতিল হওয়ার পর আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও তাদেরকে কাজে যোগদান থেকে বিরত রাখা হয়েছে। ফলে কলেজের ৮৬ জন শিক্ষার্থী যেমন ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি বেতন-ভাতাহীন শিক্ষকদের পরিবারের সদস্যরাও মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নানা সংশয় দেখা দিয়েছে দেশের প্রাচীনতম এই বিদ্যাপীটের ভবিষ্যত নিয়েও।


বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, সিলেট সরকারি তিব্বিয়া কলেজ ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালে এটি উপশহরে বর্তমান নিজস্ব ভূমিতে স্থানান্তর হয়। এরপর থেকে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে থাকেন এ কলেজে। বর্তমান সেশনে কলেজটিতে ৮৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন বলে কলেজের একাডেমিক শাখা সূত্রে জানা গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অলটারনেটিভ মেডিসিন কেয়ার প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ৩৫১ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এ নিয়োগ থেকে সিলেট সরকারি তিব্বিয়া কলেজে ১২ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়।

এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরাসরি কলেজের জন্য ২০১২ সালে ১৪ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর থেকে এ কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমে নতুন গতি আসে। কিন্তু ২০১৬ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হয়। বাতিল করা হয় তাদের নিয়োগ আদেশ। তাদের চাকুরিচ্যুতি বা অব্যাহতির কোনো কারণ এ পর্যন্ত জানায়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে শিক্ষকরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।

রিটের প্রেক্ষিতে আদেশ আসে শিক্ষকদের পক্ষে। হাইকোর্ট তাদেরকে চাকরিতে পুনর্বহালের আদেশ দেন। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য শিক্ষ অধিদপ্তরের আদেশ না পাওয়ায় শিক্ষকদের পক্ষে আসা আদেশ আমলে নেননি। ফলে আদালতের আদেশ নিয়েও নিজ কর্মস্থলে যোগদান করতে পারছেন তারা।

এরই মধ্যে হাইকোর্ট থেকে আরেকটি সম্পূরক আদেশ এসেছে এ ব্যাপারে। গত ১৯ আগস্ট আসা আদেশে ১৪ জন শিক্ষকের চাকরি আত্মীকরণের মাধ্যমে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরেরও আদেশ আসে। কিন্তু এ যাবৎ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা না আসায় শিক্ষকরা পড়েছেন বিপাকে। তারা না পারছেন কাজে যোগদান করতে, না পারছেন এই মধ্য বয়সে অন্য কোনো পেশায় সম্পৃক্ত হতে।

আদেশপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহাম্মদ জাফর হোসেন খান বলেন, এক চরম অমানবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা। বিশেষ করে ১৪ জনের মধ্যে বেতন ভাতা বঞ্চিত কয়েকজন শিক্ষক আর কোনো উপার্জনের উপায় না থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অপরদিকে অলটারনেটিভ মেডিসিন কেয়ার প্রকল্পের আওতায় নেয়া ১২ জন শিক্ষকও তাদের প্রকল্প বাতিল হয়ে যাওয়ায় কাজে যোগদান করতে পারছেন না। ফলে এখন কার্যত পুরো কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমই অচল রয়েছে। গত জুন মাস থেকে কলেজের এই ১২ জন শিক্ষকের কেউই বেতন পাচ্ছেন না।

এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ (চলতি দায়িত্ব) ডা. মো. ময়নুল ইসলাম চৌধুরী নান্না বলেন, ১৪ জন শিক্ষকের পক্ষে একটি আদেশ আদালত থেকে এসেছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশ ছাড়াতো আমি তাদেরকে কাজে যোগদান করতে দিতে পারি না। আর অলটারনেটিভ প্রকল্পের যে ১২ জন শিক্ষক ছিলেন তারাই এখন ক্লাস নিচ্ছেন। তবে তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *