এবছর ভবদহ জলাবদ্ধ অঞ্চলের ১ হাজার ৯শ” হেক্টর জমিতে হচ্ছে না বোরো আবাদ : কৃষকের কপালে দুঃশ্চিতার ভাজ !

Uncategorized অর্থনীতি গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন মানবিক খবর সারাদেশ

সুমন হোসেন, (যশোর)  :  যশোর অভয়নগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর জানিয়েছে, সাধারণত ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে বোরো ধানের চারা রোপন প্রক্রিয়া। উপজেলায় গত ২০২২-২৩ বোরো মৌসুমে ১৪ হাজার ৩০ হেক্টরে আবাদ হয়েছিল। গত ২০২৩-২৪ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল ধান চাষ। আর আবাদ করা হয়েছিল ১৪ হাজার ২শ” ৫০ হেক্টর জমিতে। জলাবদ্ধতার ওই বছর ২শ” ৯০ হেক্টরে বোরো আবাদ হয়নি। চলতি মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হবে।


বিজ্ঞাপন

সূত্রমতে, এবার জলাবদ্ধতার কারণে অভয়নগরে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হবে না। তবে কৃষি অফিসের ওই হিসাবকে প্রত্যাখ্যান করে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতারা বলছেন, এবার বিলে পানির পরিমান বেশি থাকায় ভবদহ এলাকার ২৫ হাজার হেক্টর এবং অভয়নগর অংশে ছয় হাজার হেক্টরে বোরো আবাদ হবে না।


বিজ্ঞাপন

এবারের বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টি আর বন্যার পানিতে ভরে যায় ভবদহ এলাকায় থাকা বিলগুলো। বিল উপচে পানি প্রবেশ করে ভবদহ সংলগ্ন এলাকার গ্রামগুলোতে। দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতার চারমাস পার হলেও বিলগুলো এখনও ভরে আছে পানিতে। ফলে যশোরের অভয়নগর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন আর একটি পৌরসভায় থাকা মোট ৮টি বিলে এবার হচ্ছেনা বোরো আবাদ। এতে উপজেলার বিল এলাকার সাধারন কৃষকেরা দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে।


বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ২০১৩ সালের পর এলাকার কোনো বিলে টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) প্রকল্প চালু না থাকায় পলি পড়ে বিলের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীর বুক উঁচু হয়ে গেছে। ফলে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না।
এ অবস্থায় গত আগস্ট মাসের ২৩, ২৪ ও ২৫ তারিখের হালকা-মাঝারি বৃষ্টি ও সেপ্টেম্বর মাসে লঘুচাপে ১৩, ১৪, ১৫ এবং ১৬ তারিখে একাধারে বৃষ্টি এবং ওই মাসের ২৫ ও ২৬ তারিখের মাঝারি বৃষ্টিতে প্লাবিত হয় অভয়নগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার (আংশিক এলাকা) ৭০টি গ্রামের বাড়িঘর, স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট ও ধর্মীয় উপসনালয়। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় কয়েক হাজার মাছের ঘের ও ফসলি জমি। জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে লক্ষাধিক মানুষ। জলাবদ্ধতার চারমাস পার হলেও মাত্র দুইফুট পানি কমেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অভয়নগরের কেদারিয়া, গান্ধিমারী, বোকড়, ঝিকড়া, কাছুরাবাদ, ছোন্দা, ডুমুর এবং ধলিরবিল পানিতে টইটম্বুর। বিলে এখনও ৪ থেকে ৬ ফুট পানি রয়েছে।

ফুলেরগাতী গ্রামের কৃষক সৌমিত্র সরকার বলেন, বিলে আমাদের ৫ বিঘা (৪২ শতকে জমিতে- ১ বিঘা জমি) জমি আছে। জলাবদ্ধতা দূর না হওয়াই ওই জমিতে আর এবছর ধান চাষের কোন সম্ভাবনা নাই।

সুন্দলী এলাকার কৃষক অলোক মন্ডল বলেন, বিল ঝিকরায় উত্তর কোনায় আমার আড়াই বিঘা (৫২ শতকে -১বিঘা জমি) জমি রয়েছে। দেখা জাচ্ছে এহনও পাঁচ ফুট জল জমির উপরে। এবার বোরো ধান রুতি পারবো না, আশা ছেড়ে দিয়েছি।

বিলে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেত অনিল বিশ্বাসের ছয় বিঘা (৪২ শতকে – ১বিঘা জমি) রয়েছে। ওই জমিতে ছিটেফোঁটা ধান হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, অভয়নগরের অন্তত ৮টি বিলে এখনও ৪ থেকে ৬ ফুট পানি রয়েছে। প্রতিটা বিলের আয়তন হাজার হেক্টরের উপরে। সেচ দিয়ে বিলের উপরের অংশের দু এক জাগায় হয়ত ফসল হতে পারে। তবে অধিকাংশ বিলে এবার ফসল হবে না। অনাবাদি থাকবে অন্তত ছয় হাজার হেক্টর জমি। যার ফলে সাধারন কৃষকরা যেখানে আবাদ করে শ” শ” টন ধান বিক্রি করেছে। এবছর তাদেরকে চাউল কিনে খেতে হবে।

জানতে চাইলে অভয়নগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, আপনারা তো জানেন এবারের ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কথা। উপজেলায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ১১০ হেক্টর। বিলগুলো এখনও পানিতে ভরে আছে। অনেক বিলে সেচ দিয়ে পানি অপসারণ করে বোরো আবাদের চেষ্টা চলছে। জানুয়ারি মাস ধরে বোরোর চারা রোপন চলবে। তারপরও প্রায় দুইহাজার হেক্টরে বোরো আবাদ সম্ভব হবে না।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *