বিশেষ প্রতিবেদক : এবার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মো: আবু সুফিয়ান এর সেচ্ছাচারিতা ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে যথা সময়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বিনামূল্যে মাঠ পর্যায়ের খামারী/কৃষকদের মাঝে বিতরন যোগ্য প্রায় ১৬ কোটি টাকার ঔষধ/ভিটামিন /কৃমি নাশক সরবরাহে বিঘœ ঘটতে যাচ্ছে।
সুত্রমতে প্রতি বছরের ন্যয় বাৎসরিক দরপত্রের মাধ্যমে নিদিষ্ঠ কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালক কেন্দ্রীয় প্রাণিসম্পদ ঔষধাগারের মাধ্যমে ঔষধ , ভিটামিন, কৃমি-নাশক, যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য মোট ৩১টি প্যাকেজের জন্য বিগত ৪-ডিসেম্বর/২৪ এ দরপত্র আহবান করা হয়েছিল। সে প্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ গ্রহন করে। দরপত্র সমূহ জমা হওয়ার পরে নিদিষ্ঠ মূল্যায়ন কমিটি যথাযথভাবে মূল্যায়ন করার পর সুপারিশসহ কর্তৃপক্ষের নিকট জমা প্রদান করে। উক্ত ক্রয়ের অনুমোদনকারী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন। সে অনুযায়ী পরিচালক প্রশাসনের নিকট মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ এর প্রেক্ষিতে অনুমোদন প্রদান করার জন্য পরিচালক (ক্রয়কারী) প্রস্তাব করে।
পরিচালক প্রশাসন মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ ও অন্যান্য বিষয়াদি যথাযথ হওয়ায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ মোতাবেক ঠিকাদারের অনুকুলে নোয়া প্রদানসহ চুক্তিপত্র স্বাক্ষর তথা কার্য্যাদেশ প্রদান করার জন্য অনুমতি প্রদান করে। হোপ তথা পরিচালক প্রশাসনের অনুমোদনের পর পরিচালক কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ)বিগত ৩১/১২/২৪ ইং তারিখে ঠিাদারদের অনুকুলে ‘নোয়া‘( নৌটিফিকেশন অব এওর্য়াড) প্রদান করে। নোয়া পাওয়ার পরে ঠিকাদাররা সেটি গ্রহন করত: শর্ত মোতাবেক চুক্তিপত্র দাখিল করে এবং নির্দিষ্ট পরিমান টাকার গ্যারান্টিপত্র আপলোড করে। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ভারপ্রাপ্ত ডিজি ড. মো: আবু সুফিয়ান কোন কিছুই বলেন নি।
সুত্রটি আরো জানায়,পরিচালক কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (ক্রয়কারী) কর্তৃক চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের দিনই (০২/০১/২৫ইং তারিখে) ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মো: আবু সুফিয়ান বিষয়টি অবহিত হয়ে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর না করে ২/১ দিন অপেক্ষা করার জন্য পরিচালককে মোবাইলে অনুরোধ করেন এবং তিনি (ডিজি) জানান সচিব ও উপদেষ্টা মহোদয় বিষয়টি যাচাই/বাচাই করার জন্য বলেছেন। ২দিন পরে অর্থাৎ ০৪/০১/২৫ ইং তারিখে পরিচালক পুনরায় মহা পরিচালকের নিকট জানতে চান চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করবেন কি না। তখনও ডিজি ড. মো: আবু সুফিয়ান জানান, আর একটা দিন অপেক্ষা করতে। এভাবে ১২/১৩ দিন অপেক্ষা করার পর ডিজি বিগত ১৬/০১/২৫ইং তারিখে মন্ত্রণালয়ের বিগত ১৫/০১/২৫ ইং তারিখের ৩৩.০০.০০০০.১১৭.৯৯.০০৪.২৫-২৩ সংখ্যক পত্রের সুত্রে চুডে এগ্রো ট্রেডিং নামক একটি প্রতিষ্ঠানের বিগত ১৫/১২/২০২৪ ইং তারিখের একটি অভিযোগ পত্রে উল্লেখিত বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য পরিচালক, এলআরআই মহাখালীকে নির্দেশ প্রদান করেন।
সে প্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা বিগত ১৯/০১/২৫ ইং তারিখে তদন্ত করে ২০/০১/২৫ ইং তারিখে তদন্ত প্রতিবেদন জমা প্রদান করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে দরপত্র আহব্বান থেকে শুরু করে নোয়া প্রদান পর্যন্ত কোন অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়নি তবে প্যাকেজ জনিত কারনে সীমিত সংখ্যক দরপত্র জমা পড়েছে বলে মতামত প্রদান করেন। কিন্তু অদক্ষ/অযোগ্য ভারপ্রাপ্ত ডিজি ড. মো: আবু সুফিয়ান কোন প্রকার বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহন না করেই বিগত ২০/০১/২৫ ইং তারিখেই ১৬৪ সংখ্যক স্বারকে দরপত্রে প্রতিযোগিতা সীমিত হওয়ার কথিত অভিযোগে দরপত্রগুলি বাতিল করা হলো মর্মে উল্লেখ করে পুনরায় দরপত্র আহব্বানের নির্দেশনা প্রদান করে।
পিপিআর রুল-রেগুলেশন প্রনয়নকারী প্রতিষ্ঠান সিপিটিইউ এর একাধিক বিশেষজ্ঞের সাথে আলাপ কালে জানা যায়. ইজিপি টেন্ডারে যদি অন্যান্য প্রক্রিয়া যথাযথ হয়ে থাকে তাহলে সিংগেল দরপত্রের উপর সিদ্ধান্ত গ্রহনে কোন বাধা নিষেধ নেই।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অন্যান্য দরপত্রে অংশগ্রহনকারী একাধিক ঠিকাদার জানান যে, এলআরআই মহাখালী, এআইটি প্রকল্প,এলডিডিপি প্রকল্প সহ প্রায় সকল দপ্তরে সিংগেল (একক দরপত্র) দরপত্রের উপর সিদ্ধান্ত নিয়ে নোয়া /কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে এমন শতাধিক রেকড রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত ডিজি ড. মো: আবু সুফিয়ান নিজেকে ভারমুক্ত করার জন্য ব্যক্তি বিশেষকে খুশী করার অভিপ্রায়ে এ ধরনের অনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। উক্ত কাজের নোয়া প্রাপ্ত এবং ব্যাংক গ্যারান্টি জমা প্রদানকারী ঠিকাদার নাঈম জানান, তিনি সহ অপর ঠিকাদাররা ভারপ্রাপ্ত ডিজির এহেন অনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের দারস্থ হবেন এবং আইনের আশ্রয় নিবেন।
অধিদপ্তরের একাধিক সিনিয়র কর্মকর্তা দূ:খ প্রকাশ করে জানান. ঠিকাদাররা যদি আইনের আশ্রয় নেন তবে সেক্ষেত্রে আলোচ্য ক্রয় বিলম্বিত হবে আর তার প্রভাব পড়বে দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের ক্ষুদ্র/দরিদ্র কৃষক/খামারীদের উপর। কারন তারা স্থানীয়ভাবে এ সকল ঔষধ বিনামূল্যে সরবরাহ পেয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে এ সকল খামারীদের উপর বিরুপ প্রভাব পড়বে এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। আর ভারপ্রাপ্ত ডিজি (প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মুজিব কর্ণারের প্রবক্তা) ড. মো: আবু সুফিয়ান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে এ ধরনের অনৈতিক কাজ করেছেন বলে নোয়া প্রাপ্ত ঠিকাদারা মনে করেন।
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মো: আবু সুফিয়ান এর নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, দরপত্রে অনিয়ম না হলেও সীমিত সংখ্যক দরপত্র পাওয়া গেছে। অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠান যাতে অংশ গ্রহন করতে পারে সে জন্য পুনরায় দরপত্র আহব্বানের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। একক দরপত্রের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহনে আইনগত কোন বাধা আছে কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি মতামত প্রদান থেকে বিরত থাকেন।
যে প্রতিষ্ঠান দরপত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন সে প্রতিষ্ঠান আলোচ্য দরপত্রে অংশ গ্রহন করার যোগ্যতা রাখে না বলে অংশগ্রহনকারী ঠিকাদার রা জানান। তারা আরো জানান, অনৈতিকভাবে দাবীকৃত অর্থ প্রদান না করায় ১৫/১২/২৪ তারিখের অভিযোগটি ১৩/০১/২৫ তারিখে ডিজির মাধ্যমে জমা দিয়ে প্রভাব খাঁটিয়ে এধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। এ বিষয়ে তারা প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবের পদক্ষেপ কামনা করেছেন।