বিশেষ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন এর সচিব সাফায়াৎ মুহম্মদ শাহেদুল ইসলাম, উপসচিব (পরিচিতি নং-১৫৬৭৬) এর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও অসাদাচরণের অভিযোগ পাওয়াগেছে। তিনি ২০১৯ সালে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনে (বিএসসিতে) মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হিসেবে যোগদান করেন। এরপরই তার নামে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে অন্যতম হলো: খুলনার প্রাণকেন্দ্র বিএসসির অত্যন্ত মূল্যবান একটি জমি কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে একটি প্রাইভেট কোম্পানীকে নামমাত্র দামে ৫০ হাজার টাকায় লিজ দেন।
বিএসসি’র মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হিসেবে সম্পূর্ণ কাজটি তাঁর হাত দিয়ে সম্পাদিত হয়। এছাড়া মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হিসেবে কর্মচারীদের পদোন্নতি ও লোভনীয় পদে বদলি নিয়েও তাঁর বিরুদ্ধে অনেক অর্থ-বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।
২০২০ সালে তিনি বিএসসি হতে বদলি হয়ে যান কিন্তু পুনরায় বিএসসির মত লোভনীয় জায়গায় আসার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রি. তারিখে বিএসসিতে সচিব হিসেবে পুনরায় যোগদান করেন। বিএসসি’র সচিব পদটি মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) থেকে সিনিয়র এবং সম্মানের হওয়া সত্ত্বেও অর্থলোভী এই কর্মকর্তা সম্মানের চেয়ে বিভিন্ন আর্থিক সুবিধাকেই প্রাধান্য দেন।
বিএসসি’র আর্থিক কমিটিতে সদস্য পদে নাম না থাকায় এটা নিয়ে তিনি বিভিন্ন দেন দরবার ও বিএসসি’র মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এর সাথে ঝামেলা শুরু করেন। এমনকি বিএসসি’র কক্সবাজার পিকনিকে গিয়ে ফাইভ স্টার হোটেলে পুরো পবিরবারসহ থাকা ও খাওয়ার দাবি করেন। এর প্রেক্ষিতে তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ও নির্বাহী পরিচালক বাণিজ্য এর সাথে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করে অনুষ্ঠানকে পন্ড করে চলে আসেন। এরপর থেকে মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) বিভাগের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করতে থাকেন।
তাঁর কারণে তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) বিএসসি থেকে বদলি হয়ে চলে যান। তিনি অর্থের জন্য কোন কারণ ছাড়াই ঢাকা ভ্রমণ দেখিয়ে প্রতি সপ্তাহে ২-৩ টি ভ্রমণ বিল আদায় করেন। তিনি সব সময় বিএসসি কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ভয় দেখিয়ে থাকেন এবং এ্যাকশন নিবেন বলে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে হুমকি দেন। এছাড়া তিনি প্রায় ০২ সপ্তাহে পরপর ০২ দিন ০২ টি কাজ দেখিয়ে ঢাকা থেকে না এসে ০২ টি আলাদা ভ্রমণ বিল করেন।
বিএসসি’র বিগত টেন্ডার গুলোতে সফল না হয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি তৎকালীন বিএসসির নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) ড. পিযুষ দত্ত এর নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জন প্রশাসনে তদবীর করে ওএসডি করান। তাছাড়াও যেকোন কর্মকর্তার জিও এর জন্য তিনি উপটৌকন দাবি করেন।
কোন ধরণের টেকনিক্যাল ও কারিগরি জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও ভারতে জাহাজের ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি কর্তৃক আয়োজিত টেকনিক্যাল সেমিনার এ যাওয়ার জন্য সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বাধ্য করে জিও নেন।
এছাড়া বিএসসি’র জাহাজ মেরামত বিভাগের প্রাক্তন মহাব্যবস্থাপক ও কয়েকজন টেকনিক্যাল ব্যক্তির সহায়তায় জাহাজের ইন্সপেকশন এর নাম করে তিনি ইউএসএ ভিসা করেন এবং অবৈধভাবে ইউএসওতে থেকে যাওয়ার পাঁয়তারা করেন। গত ০১ বছরে তিনি বিএসসি থেকে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার ভ্রমণ বিল নেন এবং কর্মকর্তাদের বিভাগ পরিবর্তনের লোভ দেখিয়ে ও অর্থ আদায় করেন।
এছাড়া, প্রায়ই মন্ত্রণালয়ের ভয় দেখিয়ে বিএসসি’র কর্মকর্তাদের থেকে উপঢৌকন নেন। তাঁর এক ছেলে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ এবং এক মেয়ে প্রাইভেট মেডিকেলে পড়ে। এই বিপুল খরচ তিনি কিভাবে যোগাড় করেন তা কারো বোধগম্য নয়।
তাছাড়া তিনি বিএসসি থেকে প্রদত্ত মোবাইল, ল্যাপটপ কিছু দিন ব্যবহার করার পর নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলে পুরাতন গুলো ফেরত না দিয়ে প্রশাসন বিভাগ থেকে পুনরায় নতুন মোবাইল, ল্যাপটপ নিয়ে নেন যা সরকারী নিয়মের চরম লঙ্ঘন।
তিনি মন্ত্রণালয় থেকে তার বাচম্যাট ( উপসচিব-নাজমুন্নাহার)কে বিএসসিতে ডেকে এনে তার রুমে বসিয়ে যে সব কর্মকর্তা তার কথামত কাজ করেন না তাদেরকে ধমক দেন। যা সরকারি কর্মচারী বিধিমালার চরম লঙ্ঘন।
এ সব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আমার কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতায় বিএসসিতে সচিব পদে পদায়ন পেয়েছি। আমার বিরুদ্ধে আজ অব্দি কোন দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। কে অভিযোগ করলো? কোথায় করলো? এসবের আমি কিছুই জানি না।