দর্শনা কেরু এন্ড কোম্পানীর এমডি সরব রাব্বিক হাসানের সুপার  পাওয়ার অব বগুড়া  : তার বিরুদ্ধে  সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে শ্রমিকদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ 

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত কর্পোরেট সংবাদ খুলনা গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

কেরু অ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর রাব্বিক হাসান।


বিজ্ঞাপন

 

বিশেষ প্রতিবেদক  : বিভিন্ন প্রকারের অনিয়ম ও  দুর্নীতিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সাম্প্রতিক বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো চিনি ও খাদ্য শিল্প করপারেশনের চেয়ারম্যান লিপিকা ভদ্রের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত বগুড়ার  বাসিন্দাখ্যাত দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলা মদ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর রাব্বিক হাসানের খোলস বদল করে তার বিভিন্ন প্রকারের অনিয়ম ও  দূর্নীতি’র বিষয়  থামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।


বিজ্ঞাপন

তিনিসহ পতিত স্বৈরাচার সরকারের দোসরদের কাছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ ও অসহায় হয়ে পড়েছেন বলে এক অভিযোগ উঠেছে । গত ৫  আগস্ট ২০১৪ তারিখে  বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন সংগ্রামের ফলে সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দুর্নীতিবাজ চক্র  ও তাদের দোসরদের অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও মীর রাব্বিক হাসান বগুড়ার সন্তান পরিচয়ে এখনো বহাল তবিয়তে থেকে বিভিন্ন প্রকারের অনিয়ম ও দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন।


বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত মদ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লিমিটেড এখন অনিয়ম, প্রশাসনিক কর্তৃত্বের অপব্যবহারের নানা অভিযোগ রয়েছে মীর রাব্বিকের বিরুদ্ধে।


বিজ্ঞাপন

তার একচ্ছত্র আধিপত্য ও অদৃশ্য শক্তির কাছে জিম্মি সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেখানে ডিএনসিকে তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যাচ্ছে দেশী মদ বোতলজাতকরণ। এ ক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও অ্যালকোহল বিধিমালাকে কোন পাত্তাই দিচ্ছেন না রাব্বিক হাসান।

তার এসব অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করেছেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. লিপিকা ভদ্র। সম্প্রতি ১শ’ এবং ৫শ’ এমএল বোতলজাতকরণের ক্ষেত্রে ডিএনসি হতে পেশীশক্তি ব্যবহার করে কান্ট্রি স্পিরিট বা দেশী মদ বোতলজাতকরণের অনুমোদন নেওয়া হলেও বোটলিং লাইসেন্স নেয়া হয়নি ,  এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিক ও বেশ কজন গণমাধ্যম কর্মীর অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গণমাধ্যম কর্মীদের  অনুসন্ধান বলছে , প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মীর রাব্বিক হাসানের মদদে এক বছর ধরে অবৈধভাবে মদের বোতলজাতকরণ হচ্ছে। আর কেরুতে মদের বোতলজাতকরণে ব্যবহৃত নতুন মেশিনের অনুমোদন ছিল শুধুমাত্র পরীক্ষামূলক উৎপাদনের জন্য। কিন্তু গত ২০২৩ সালে এক বছর মেয়াদের জন্য পরীক্ষামূলক উৎপাদনের অনুমতি থাকলেও এ শর্ত ভেঙে নিয়মিতভাবে বাণিজ্যিকভাবে মদ বোতলজাত করা হচ্ছে, যা সরাসরি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিধি লঙ্ঘন।

অপরদিকে অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ আইনে রিকশনের মাধ্যমে উচ্চ সুরাশক্তির অ্যালকোহল নিম্ন সূরা শক্তিতে এনে সরবরাহ করতে হলে ডিস্ট্রিলারির আঙ্গিনায় পৃথক বন্ডেড পণ্যাগার স্থাপন করার বিধান থাকলেও কেরু কোম্পানীকে পৃথক একটি দেশী মদের বন্ডেড পণ্যাগার ও পাইকারি বিক্রয়ের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে।

তবে এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। আবার বোটলিং ফি প্রদানের বিষয়ে বলা হলেও লাইসেন্স প্রদান, গ্রহণ কিংবা পরবর্তী অর্থ বছরে কোন প্রক্রিয়ায় লাইসেন্স নবায়ন হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি। উচ্চ সুরাশক্তির অ্যালকোহল নিম্ন শক্তিতে আনার পর ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি আন্ডার প্রুফ দেশী মদ বোতলজাত করে সরবরাহের ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক লেভেলের রং ও ব্যাচ সংযুক্ত করতে হবে।

তাছাড়া দেশী মদ বোতলজাত করে পণ্যাগারে সরবরাহে কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের ল্যাবে টেস্টের রিপোর্টও প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দর্শনার ডিস্ট্রিলারী অফিসার পরিদর্শক ছানোয়ার হোসেন কেরুর এসব অমান্য করায় বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বিভিন্ন নির্দেশনা ও পরামর্শ চেয়ে গত ২৮ এপ্রিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছেন।

উক্ত আবেদনের পরই গত ১২ মে ছানোয়ারকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। তড়িঘড়ি করে আইনের বেড়াজালকে পাশ কাটিয়ে, নিয়ম-নীতি না মেনেই সম্প্রতি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. লিপিকা ভদ্র দেশী মদ বোতলজাতকরণ কার্যক্রম উদ্ধোধন করেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

অপরদিকে কেরুর কৃষিখাতে বড় ধরণের অনিয়ম ধরা পড়েছে। শত শত কৃষকের কাছ থেকে লিজ নেওয়া জমিতে দেওয়া হচ্ছে লোকসানী সবজির বীজ। কেরুর কুমড়া চাষ প্রকল্পে প্রতিবছরই লোকসানে পড়ছেন কৃষকরা। তবুও সরকারি লিজকৃত জমিতে তাদের দিয়ে কুমড়া চাষ করানো হচ্ছে।

তাছাড়া, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে সৃষ্টি হয়েছে চরম অস্থিরতা। প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতায় একাধিক কর্মকর্তা ও চিনিকল কর্মচারীকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বদলি করা হয়েছে। যেসব পদে বদলি হচ্ছে, সেগুলোর অনুমোদনই নেই সরকারি কাঠামোতে। কেউ কেউ বদলির আদেশ হাতে পেয়েছেন মধ্যরাতে, কেউ আবার অফিসে এসে জেনেছেন নিজের বদলির খবর।

এইসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই হাইকোর্টে রিট দায়ের হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরে যারা মুখ খুলছেন, তাদের চাকরি ঝুঁকির মুখে ফেলা হয়। আর এর নেপথ্যে বর্তমান এমডি মীর রাব্বিক, যা নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন।

ঐতিহ্যবাহী ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বিভিন্ন ব্রান্ডের ফরেন লিকারসহ (মদ) এ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন মালামাল চুরি, গায়েব ও নানা অনিয়মই যেন এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ নামমাত্র তদন্ত কমিটি করে দোষীদের সাময়িক শাস্তি দিলেও কিছুদিন পর তারা আবার সেই কারবার করে বহাল তবিয়তে থেকে যাচ্ছে। ফলে তৈরি হয়েছে সিন্ডিকেট। আর এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন বর্তমান এমডি মীর রাব্বিক।

সূত্র বলছে , রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর মধ্যে একমাত্র লাভজনক প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড। এটি একটি সমন্বিত কারখানা। এখানে চিনি, ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন ধরনের স্পিরিট ও দেশি-বিদেশি মদ উৎপাদন করা হয়।

কারখানার মূল পণ্য চিনি হলেও কোম্পানিকে বাঁচিয়ে রেখেছে ডিস্টিলারি পণ্য মদ। আর সেই লাভের খাত কেটে মাঝেমধ্যেই চুরির ঘটনা ঘটে কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে চোরাই মদসহ একের পর এক গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু কেরু প্রশাসন চুরি ঠেকাতে অনেকটাই নির্বিকার ছিলেন।

এর কারণে পুরো প্রতিষ্ঠানটি স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর পরিচয়ের কর্মকর্তা-কর্মকর্তাদের নেতারা জিম্মি করে রেখেছিল। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরও চুরির চেষ্টার সময় ধরা পড়ে ৬ বোতল ফরেন লিকার। দুর্গাপূজা উপলক্ষেও বিপুল পরিমাণে মদ চুরির ঘটনা ঘটে।

এছাড়া গত বছর পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে কেরু কোম্পানীর এই কারাখানায় উৎপাদিত দেশি মদ ও বিলাতি মদসহ (ফরেন লিকার) একাধিক চালান ধরা পড়ে। এমনকি বোতল ভর্তি বিলাতি মদ, মদের বোতলের লেবেল ও খালি বোতল উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে। এঘটনায় একাধিক কর্মচারী গ্রেফতারও হয়েছেন। আওয়ামী লীগের শ্রমিক সংগঠনগুলোই মূলত বছরের পর বছর এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক বলেন, কোম্পানি থেকে দেশের বিভিন্ন পণ্যাগারে দেশি মদ পরিবহনের সময় তা চুরি ও পাচারের অভিযোগে চালকসহ শ্রমিক গ্রেফতারের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। ডিস্ট্রিলারি থেকে বিলাতি মদ চুরির ঘটনাও মাঝে মধ্যেই ঘটছে। ডিস্ট্রিলারি বিভাগের কর্মকর্তারা মিলে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের যোগসাজশে সুযোগ বুঝে শ্রমিকদের দিয়ে এই চুরির কাজটি সম্পন্ন করে। যেটা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই বেশি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৩১ আগস্ট কেরুর প্রধান ফটক থেকে ১০০ লিটার দেশি মদসহ ট্রাকচালক সাইফুল ইসলাম ও তার দুজন সহকারীকে দর্শনা থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। আর একই বছরের ১৫ জুলাই দর্শনা থানা পুলিশ রামনগর থেকে ৪০ লিটার দেশি মদসহ বাদল শেখ নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। আর ১৬ফেব্রুয়ারি দর্শনা পৌর এলাকার আনোয়ারপুরে অভিযান চালিয়ে কেরুর তৈরি ৭৫০ মিলিলিটার পরিমাপের সাত বোতল বিলাতি মদসহ দুজনকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

এছাড়া গত ২০২৩ সালের ২৩অক্টোবর রাতে চুয়াডাঙ্গার লোকনাথপুরে ডিবির তল্লাশির মুখে পড়ে কেরুর একটি কাভার্ড ভ্যানে ১০ লিটার দেশি মদ পায় ডিবি। এই মদ ব্যারেল থেকে চুরি করা হয়েছিল বলেও জানা গেছে। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, কোম্পানি থেকে পণ্যাগারগুলোতে দেশি মদ পাঠানোর সময় ব্যারেলের মুখে যে নিরাপত্তা সিল লাগানো হয়, গাড়িতে পরিবহনের সময় চালক ও সহকারীরা সেটি খুলে মদ বের করে নেন।

এরপর আগে থেকে সংগ্রহ করা সিল লাগিয়ে দেন। মদ চুরি বন্ধে পণ্যাগার থেকে ফেরা পরিবহন কোম্পানির পক্ষ থেকে এর আগে তল্লাশি চালানো এবং চোরাই মদ উদ্ধার করা হলেও নানামুখী চাপে তা বন্ধ হয়ে গেছে।

এ বিষয় কেরু অ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর রাব্বিক হাসান গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্ততরের একটি অফিস আমাদের গেটে আছে। সেখানে একজন ইন্সপেক্টর ডিউটি করেন। তার অনুমতি ছাড়া এক কেজি চিনিও আমরা বিক্রি করতে পারি না। তাহলে আমরা এখানে অনিয়ম দুর্নীতি কিভাবে করবো। আবার তাদের লিজকৃত জমির বিষয় বলেন , এসব জমি টেন্ডারের মাধ্যমে লিজ দেওয়া হয়। আমাদের সব কাগজপত্র রয়েছে। আর বোতল জাত মদ বিক্রি করা হলে সরকারের ৫০ কোটি টাকা আয় বেশী হবে। আর এটি করা হলে একটি গ্রুপ লাভবান হবেন না। এজন্যই তারা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে যাবে। এই অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে না, তারা এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছেন বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনি উৎপাদন ছাড়াও রয়েছে ডিস্টিলারি, কৃষি খামার, পরীক্ষামূলক খামার ও জৈব সার। আর এখানে ৯টি ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ উৎপাদন করা হয়। সেগুলো হলো ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জরিনা ভদকা, রোসা রাম ও ওল্ড রাম।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *