কুষ্টিয়ায় বিপুল পরিমাণ সিগারেট ফিল্টার জব্দ  :  কাস্টমসের  রহস্যজনক প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি (কুষ্টিয়া) :  কুষ্টিয়ায় তামাকের দুটি গুদামে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সিগারেটের ফিল্টার জব্দ করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তবে এ নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।


বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার জুগিয়া মন্ডলপাড়া ও কদমতলা এলাকার দুটি তামাকের গুদামে অভিযান চালায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। অভিযানে জব্দ করা মালামাল কার্টুনে ভরে দুটি বড় কাভার্ডভ্যানে তোলা হয় এবং অভিযানের শেষে গুদাম দুটি সিলগালা করা হয়।

তবে সবচেয়ে প্রশ্নবিদ্ধ বিষয় হলো, জব্দকৃত মালবাহী কাভার্ডভ্যান দুটি পরদিন শুক্রবার সকাল থেকে কাস্টমস অফিস চত্বরে আর দেখা যায়নি।


বিজ্ঞাপন

গত শুক্রবার সকালে সেখানে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীর ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি গাড়িগুলোর প্রবেশ কিংবা বের হওয়ার ব্যাপারে কিছুই জানেন না।


বিজ্ঞাপন

সিলগালা করা গুদামগুলোর পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা কেবল অভিযান ও মাল জব্দের দৃশ্য দেখেছেন। কিন্তু মালামালের প্রকৃত পরিমাণ ও বিস্তারিত কিছুই জানেন না। অভিযানে জব্দকৃত মালের তালিকা তৈরি না করে সরাসরি অফিসে নিয়ে যাওয়া এবং এরপর তার কোনো হদিস না পাওয়াকে ‘সন্দেহজনক ও উদ্বেগজনক’ বলে মনে করছেন তারা।

অতীতেও এ ধরনের অভিযানের পর কাগজে-কলমে অনেক কিছু দেখানো হলেও বাস্তবে তা মিলেনি। পরে ‘সমঝোতা’র মাধ্যমে ঘটনাগুলো ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে বলে জানান বাসিন্দারা। ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে অভিযানের নেতৃত্বে থাকা কর্মকর্তারা তড়িঘড়ি করে গাড়িতে উঠে পড়েন।

ঘটনার কিছুক্ষণ পর কাস্টমস অফিসে গিয়ে সাক্ষাৎ করলে ঐ কর্মকর্তা জানান, তারা ১৫৭টি কার্টুন জব্দ করেছেন। তবে কোন গুদাম সিলগালা করা হয়নি। একইসঙ্গে মালিকদের পরিচয় সম্পর্কেও কিছু জানাতে গড়িমসি করেন। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মালের পরিমাণ ও ধরন নির্ধারণে সময় লাগবে বলে পরদিন উপস্থিত সাংবাদিকদের যাওয়ার কথা বলেন।

কিন্তু পরদিন শুক্রবার অফিসে গিয়ে আর কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। কাভার্ডভ্যানেরও কোনো খোঁজ মেলেনি

কুষ্টিয়া কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তারা ১৫৭টি কার্টুন সিগারেটের ফিল্টার জব্দ করেছেন। তবে কোন গুদাম সিলগালা করা হয়নি। একইসঙ্গে মালিকদের পরিচয় সম্পর্কেও কিছু জানাতেও অপারগতা প্রকাশ করেন।

এদিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে গুদাম সিলগালা করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলগালা করা গুদাম দুটি জামিল নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন। যিনি ‘গ্লোবাল লিফ ট্যোবাকো’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি “জামিল টোব্যাকো” নামেই পরিচিত। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির মালিকসহ একাধিক ব্যক্তি তামাকজাত পণ্যের অবৈধ ব্যবসায় জড়িত। এই সিন্ডিকেটে পবন, শ্যামসহ আরও কয়েকজন রয়েছেন। যারা নকল সিগারেট উৎপাদন এবং রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।

তামাক ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের অভিযোগ- কুষ্টিয়ার বিভিন্ন টোব্যাকোর নাম দিয়ে নকল গোল্ডলিফ ও বেনসন সিগারেট তৈরি করা হয়৷ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, প্রভাবশালীদের দিয়ে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর ধরে নকল সিগারেট তৈরি করে বাজারজাত করে আসছে পবন নামের এক ব্যবসায়ী।

সবাইকে ম্যানেজ করে বেশ কয়েক বছরের পর বছর ধরে নকল সিগারেট তৈরি ও বাজারজাত করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন চক্রটি। বিভিন্ন জায়গায় গড়ে তুলেছেন নকল সিগারেট তৈরির শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

এদিকে ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া তীব্র হয়। অনেকেই মন্তব্য করেন, এ দেশে টাকা থাকলে বাঘের দুধও পাওয়া যায়।

তারা কাস্টমস দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বলেন, সরকারি রাজস্ব আদায়ের নামে নিজেদের পকেট ভারী করেন তারা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *