তিস্তা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে উদ্যোগ : সন্ত্রাসী হামলায় সংবাদদাতা পরিবারসহ মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি (নীলফামারী) :  নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার ১১নং কৈমারী মডেল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মৌজা ছিঁড়াবদী এলাকায় তিস্তা নদীতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছিল। দিনে-দুপুরে ও গভীর রাতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বাঁধ থেকে মাত্র ২০ ফুট দূরে বালু তোলা হচ্ছিল। স্থানীয়ভাবে এসব বালু ব্যবহার করার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও বিক্রি করা হচ্ছিল।


বিজ্ঞাপন

প্রথমে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু উত্তোলনকারীদের সতর্ক করে কার্যক্রম বন্ধ করেন। কিন্তু রাতের আঁধারে আবারও বালু উত্তোলন শুরু হলে বিষয়টি ৮ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানানো হয়। ইউএনও’র নির্দেশে এসিল্যান্ড ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেন এবং কিছু পাইপ ভেঙে দেন। এসময় উত্তোলনকারীদের কঠোরভাবে সতর্কও করা হয়।

এরপর ক্ষুব্ধ বালু ব্যবসায়ী চক্র ইউএনওকে তথ্য দেওয়ার অভিযোগে স্থানীয় সংবাদদাতা মো. সিয়াম ইসলামকে হুমকি দেয়। তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার কথাও বলা হয়। এ ঘটনায় সিয়াম ইসলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে পোস্ট দেন এবং জলঢাকা থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেন।


বিজ্ঞাপন

অভিযোগ দায়েরের মাত্র দুই দিন পর, গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে দেশীয় অস্ত্র দা, কুড়াল ও লাঠি নিয়ে বালু ব্যবসায়ী চক্র সংবাদদাতা সিয়াম ইসলাম ও তার পরিবারের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এতে সিয়াম, তার বাবা এবং ছোট ভাইসহ চারজন গুরুতরভাবে আহত হন।


বিজ্ঞাপন

আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। পরে চিকিৎসকরা অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। বর্তমানে তারা সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

হামলায় সিয়ামের বাবার মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তার মাথায় ২৫টি সেলাই দিতে হয় এবং একটি হাত ভেঙে যায়। সিয়ামের মাথায়ও ২২টি সেলাই দিতে হয়েছে। ছোট ভাই সিহাবও হাত ভেঙে গুরুতর আহত হয়েছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, তিস্তা বাঁধ সংলগ্ন একটি ছোট্ট ঘরে সিয়াম তার পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। তার বড় ভাই রুহুল কুদ্দুস বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।

ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এক হামলাকারীকে আটক করে। তবে বাকি আসামিরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার। তাদের অভিযোগ, প্রভাবশালী একটি মহল মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।

জলঢাকা থানার ওসি বলেন, “এই ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং দোষীরা শাস্তি ভোগ করবেই।”

বর্তমানে আহত সংবাদদাতা সিয়াম ইসলাম ও তার পরিবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *