!! বিশেষ প্রতিবেদন !! যুব উন্নয়ন প্রকল্পে ২৯৭ কোটি টাকার হরিলুট: আখের–মাসুদ সিন্ডিকেটের কাহিনি!

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের নামে তরুণদের কর্মসংস্থানের স্বপ্নকে বাণিজ্যে পরিণত করেছে এক ভয়ংকর দুর্নীতি চক্র। “ফ্রিল্যান্সার প্রশিক্ষণ প্রকল্প” — তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির নামে নেয়া এই প্রকল্পের মধ্যেই ঘটেছে ২৯৭ কোটি টাকার হরিলুট।


বিজ্ঞাপন

এই হরিলুটের দুই মূল কারিগর — সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল–এর ঘনিষ্ঠ আমলা এম এ আখের (পরিচালক প্রশাসন) এবং তথাকথিত যুব কাউন্সিলের সভাপতি ও ব্যবসায়ী মাসুদ আলম। তাদের যৌথ কারসাজিতে প্রকল্পের অর্থ বণ্টন, দরপত্র প্রক্রিয়া, প্রশিক্ষণ পরিচালনা—সবকিছুই রূপ নেয় এক অদৃশ্য কমিশন বাণিজ্যে।

কীভাবে সাজানো হয় ২৯৭ কোটি টাকার নাটক : সূত্র বলছে, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের “ফ্রিল্যান্সার প্রশিক্ষণ প্রকল্প” হাতে নেয়া হয় তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তি দক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। কিন্তু শুরু থেকেই পুরো দরপত্র প্রক্রিয়া সাজানো হয় মাসুদ আলমের মালিকানাধীন “ই–লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড”–এর অনুকূলে।


বিজ্ঞাপন

এই প্রক্রিয়ার পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল এম এ আখেরের হাতে, যিনি তখন পরিচালক (প্রশাসন) পদে ছিলেন। তিনি দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে মূল্যায়ন কমিটির সদস্য নিয়োগ পর্যন্ত সব জায়গায় নিজের প্রভাব খাটান।


বিজ্ঞাপন

অবশেষে পরিকল্পনামাফিক ২৯৭ কোটি টাকার বিশাল চুক্তি পায় মাসুদ আলমের প্রতিষ্ঠান—যার যোগ্যতা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। অভিযোগ রয়েছে, ওই প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, জনবল বা অবকাঠামোর কোনোটিই রাখেনি।

আখের–মাসুদ ঘনিষ্ঠতা: দুর্নীতির অদৃশ্য চেইন  : এম এ আখের ও মাসুদ আলম শুধু প্রশাসনিকভাবে নয়, ব্যবসায়িকভাবেও একে অপরের পরিপূরক। আখেরের প্রভাব, মাসুদের অর্থ ও রাজনৈতিক যোগাযোগ—এই জুটিই যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরকে পরিণত করেছে এক “কমিশন বাণিজ্যের ফ্যাক্টরি”–তে। অভ্যন্তরীণ সূত্রের ভাষায়, “এম এ আখেরের অনুমতি ছাড়া অধিদপ্তরে একটা ফাইলও নড়ে না।”

শেখ হাসিনার পতনের পর বর্তমান “জুলাই চেতনার” সরকারের সময়ও এই সিন্ডিকেট অক্ষত আছে। বরং এখনো তারা এক “সমন্বয়ক” নাম ব্যবহার করে প্রকল্প পরিচালনার ছদ্মবেশে থেকে যাচ্ছে।

অর্থপাচার, ভুয়া সার্টিফিকেট ও ডিজিটাল প্রতারণা :  এম এ আখেরের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক গুরুতর অভিযোগ—ভুয়া শিক্ষাগত সনদ ব্যবহার করে পদোন্নতি। বিদেশে অর্থ পাচার এবং  ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি তহবিল স্থানান্তর।

অন্যদিকে, মাসুদ আলমের প্রতিষ্ঠান ই–লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড–এর বিরুদ্ধেও দুর্নীতি দমন কমিশনে তদন্ত চলছে। অভিযোগ অনুযায়ী, প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশি ব্যাংকে পাচার করা হয়েছে।

প্রশিক্ষণ নেই, তরুণদের স্বপ্ন ছাই : প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের তরুণদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া—কিন্তু মাঠ পর্যায়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ছিল কাগজে-কলমে। ভুয়া তালিকা, অনুপস্থিত প্রশিক্ষক, এবং নকল উপস্থিতি শিটে ভরা ফাইল এখন তদন্ত কর্মকর্তাদের হাতে।

প্রকল্পের নামে যেসব তরুণদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল, তাদের অনেকেই এখন বলছেন, “আমরা শুধু নিবন্ধন করেছি, প্রশিক্ষণ পাইনি। কিন্তু প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে আমরা কোর্স সম্পন্ন করেছি!

দুদকের রাডারে আখের–মাসুদ চক্র : বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই ২৯৭ কোটি টাকার প্রকল্পের তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মিলেছে কয়েক কোটি টাকার ভুয়া বিল, অব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, এবং অকার্যকর প্রশিক্ষণ সেন্টারের।

তদন্ত কর্মকর্তারা মনে করছেন, “এই সিন্ডিকেটের জাল অনেক গভীর। অনুসন্ধান বাড়লে আরও চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ পাবে।”

শেষ কথা : যুব উন্নয়নের নামে যুবদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে এক শক্তিশালী চক্র। ফ্রিল্যান্সার তৈরি নয়, তারা বানিয়েছে ফাইল–ফ্রিল্যান্সার সিন্ডিকেট, যার কাজ—প্রকল্পের অর্থ লুট, প্রভাব বিস্তার ও কমিশন ভাগাভাগি।

দেশের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ যেখানে গড়া উচিত ছিল, সেখানে আখের–মাসুদ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে দুর্নীতির সাম্রাজ্য।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *