নিজস্ব প্রতিবেদক : গণপূর্ত অধিদপ্তরের মহাখালী অফিসে সম্প্রতি এক “মিরাকল” ঘটেছে—যেখানে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও একজন নির্বাহী প্রকৌশলী এখনও বহাল তবিয়তে, যেন তিনি সরকারি নয়, অমরত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি ! নাম তাঁর— ফয়জুল ইসলাম ডিউক। সহকর্মীদের ভাষায়— “কমিশনের ক্যালকুলেটর”।

কমিশনের পরশ পাথর : ডিউক সাহেবের আশ্চর্য ক্ষমতা হলো, যে প্রকল্পে তিনি হাত দেন, সেখানেই “কমিশনের ফুল ফোটে”।কখনো ২০%, কখনো ৩০%, আবার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের কাছে সেই হার ছুঁয়েছে ৫০%!
কাজের মান? আল্লাহ ভরসা ! ইটের বদলে বালু, রডের বদলে লোহার তার, আর সিমেন্টে মিশে থাকে “বিশ্বাসের গুঁড়া”।

টেন্ডার না হলে টেন্ডার, কমিশন থাকলেই কনফার্ম ! দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের কাজ দরপত্রের আগেই শুরু করার নির্দেশ দেন তিনি।কারণ— “সময় বাঁচানোই উন্নয়ন!” অবশ্য সূত্র জানায়, “সময়” নয়, কমিশনের সময় নষ্ট করতে চাননি ডিউক।

পরে ওটিএম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করে নিজের পছন্দের কয়েকজন আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেন— যেন “টেন্ডার” নয়, “টেন্ডার নাটক”!
প্রক্সি টেন্ডারের জাদু : মহাখালী অফিসে এখন এক নতুন খেলা চলছে— প্রক্সি টেন্ডার লিগ। একই ঠিকাদার তিনটি কোম্পানির নামে দরপত্র জমা দেয়—প্রতিযোগিতা কাগজে, বাস্তবে সবাই একই টেবিলের চা খায়। এভাবে সরকারি প্রকল্প পরিণত হয়েছে “বন্ধুদের পার্টি”তে।
নিম্নমানের রাজত্ব : কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভবনের কাজ শেষ না হতেই এডভান্স বিল ছাড় হয়ে যায়—যেন “কাজের আগে ক্যাশ” স্কিম চালু হয়েছে গণপূর্তে। ইট, রড, টাইলস সব নিম্নমানের, তবুও ফাইলে লেখা থাকে— “কাজ সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন”।
পোষা সাংবাদিকের প্রপাগাণ্ডা অভিযান : এখন আসি “মিডিয়া সেল” অংশে। ডিউক সাহেবের গৃহপালিত এক দালাল সাংবাদিক, যিনি আগে ফাইল বহন করতেন, এখন কলমের জোরে “ডিউককে ফেরেশতা” প্রমাণে উঠেপড়ে লেগেছেন।
সেই সাংবাদিক সম্প্রতি একটি প্রবন্ধ লিখেছেন—“নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল ইসলাম ডিউক: সৎ, নির্লোভ ও সেবাপরায়ণ কর্মকর্তা”। প্রতিবেদন দেখে সাধারণ মানুষ ভেবেছে, হয়তো নতুন “বঙ্গবন্ধু পদক” ঘোষণা হয়েছে !
তবে জানা গেছে, এ প্রশংসার বিনিময়ে সাংবাদিক মহাশয় পেয়েছেন মোটা অঙ্কের খুশির তহবিল— মানে কমিশনের কমিশন!
দুদকের নড়াচড়া : দুদকের কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী জানিয়েছেন, “গণপূর্ত অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত করা এখন এক চ্যালেঞ্জ।” ডিউক সাহেব শুনে নাকি হেসে বলেছেন—“চ্যালেঞ্জটা নিন, কিন্তু আগে আমার কমিশন দিন!”
জনরোষে ফেটে পড়ছে অফিস : নিয়মিত অনুপস্থিতি, অফিসে না এসে হজ্জ ক্যাম্প বা সার্কেল অফিসে বসে সই দেওয়া, আর বঞ্চিত ঠিকাদারদের ক্ষোভ—সব মিলে মহাখালী অফিস এখন “গণপূর্ত না, গণপুতুল অধিদপ্তর”!
ডিউকের নীরবতা— নাকি প্রমাণের ভয়? তাঁর বক্তব্য জানতে ফোন দিলে তিনি চুপ। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিলে নীরব।হয়তো ফোনের স্ক্রিনে এখনো লেখা আছে— “ইনকামিং কল: দুদক”!
উপসংহার : মহাখালী গণপূর্তে এখন নতুন প্রবাদ— “কাজে নয়, কমিশনে উন্নয়ন।”আর সাংবাদিক ভাইদের জন্য বিশেষ ঘোষণা—“সত্যের কাগজে ছাপা হয় কমিশনের রঙ!”
দুদক যদি সত্যিই সাহস দেখাতে চায়, তবে প্রথমেই দেখা দরকার,
ডিউকের পকেট নয়— তাঁর ‘পোষা সাংবাদিকদের’ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট!