বাস-বাড়িতে ঝুলছে ‘টু লেট’
নিজস্ব প্রতিবেদক : সারা বিশ্বকে গ্রাস করেছে করোনার ভয়াল থাবা। বাদ পড়েনি বাংলাদেশও। দেশে করোনা শনাক্তের পর থেকেই সরকার লকডাউনসহ নানা রকম পদক্ষেপ নিচ্ছে। পরামর্শ দেয়া হচ্ছে যথাসম্ভব ঘরে থাকার। ফলে আয় কমে গেছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের। যেখানে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মানুষ রাজধানীতে পা বাড়ায় সেখানে করোনায় কার্যত নিঃস্ব হয়ে দলে দলে গ্রামমুখী হচ্ছে তারা। তাতে ভাড়াটিয়া সংকট দেখা দিয়েছে রাজধানীর অনেক বাড়িতে। এখন বাড়িতে বাড়িতে ঝুলছে বাসাভাড়া দেয়ার বিজ্ঞাপন ‘টু লেট’।
করোনার কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন, অনেক মানুষের শ্রেণি কাঠামোর পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে অনেক মানুষ হতদরিদ্র হয়েছেন। ফলে আগের ভাড়ার ভার বইতে পারছেন না তারা যার কারণে ছেড়ে দিচ্ছেন বাসা সঙ্গে ঢাকাও।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের কর্মসংস্থানের সিংহভাগ রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন কাজের সন্ধানে রাজধানীমুখী হতেন। এ নগরীর বাসিন্দার সংখ্যা দাঁড়িয়ে যায় প্রায় দুই কোটি, যাদের প্রায় ৮০শতাংশই ভাড়াটিয়া। করোনার পরবর্তী পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে বাসা ভাড়ার চিত্রও।
করোনা পরিস্থিতিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার থেকে পাঠানো তথ্যে জানা যায়, বেশিরভাগ বাড়িতেই দু’একটা ফ্ল্যাট ফাঁকা আছে। ভাড়াটিয়া চেয়ে ‘টু লেট’ লেখা বিজ্ঞাপন ঝুলানো থাকলেও বাড়ির মালিকরা খুঁজে পাচ্ছে না ভাড়াটিয়া। আবার দু’একটি ফ্ল্যাট ফাঁকা হয়ে যাওয়ার মধ্যেই বাড়ির মালিককে বাসা ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিচ্ছেন অনেক ভাড়াটিয়া।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় রাজধানীর বেশ কিছু বাড়ি মালিকের সঙ্গে। তারা জানান, ভাড়াটিয়ারা সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের কারণে অনেকেই তাদের পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেকে উচ্চ ভাড়া না দিতে পেরে ছোট বাসা বা মেসে উঠছেন। যে কারণে বাসাগুলো ফাঁকা রয়ে গেছে। ঠিক মত বেতন না পাওয়া, কাজ না থাকা এমনকি চাকরি হারানোই এমন পরিস্থিতি তৈরির ক্ষেত্রে বড় কারণ।
রাজধানীর ধানমন্ডির এক ভাড়া বাসার বাসিন্দা রবিন আকরাম। চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তিনিও বাড়ির মালিককে জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী মাস থেকে বাসা ছেড়ে দেবেন। সে অনুসারে বাড়ির মালিকও ‘টু লেট’ টাঙিয়েছেন।
কেন বাসা ছেড়ে দিচ্ছেন জানতে চাইলে রবিন বলেন, সীমিত বেতনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। যেখানে বেতনের সিংহভাগই চলে যায় বাসা ভাড়ায়। পরিবার নিয়ে ওই বাসায় থাকতাম। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিগত দুই মাস ধরে অর্ধেক বেতন পাচ্ছি। যে কারণে বাসা ভাড়া আর কুলাতে পারছি না এছাড়া সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বাড়ি মালিককে অনুরোধ করেছিলাম কমপক্ষে এক মাসের ভাড়া মওকুফের জন্য। কিন্তু সে বিষয়ে কর্ণপাত না করে বাড়ি মালিক বাসা ছেড়ে দিতে বলেছেন। এছাড়া বাসা ছেড়ে দেবো বলাতে এখন উদ্দেশ্যমূলক নানা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। দেশের এই পরিস্থিতিতেও এই অমানবিক আচরণ দুঃখজনক। তাই পরিবার গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে একটি মেসে উঠেছি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহরানে সুলতান বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে মানুষ খুব খারাপ অবস্থার অবস্থার মধ্যে দিনানিপাত করছেন। সামনে কী ঘটবে কেউ আন্দাজ করতে পারছে না। এমতাবস্থায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে সাধারণ আয়ের মানুষগুলো। ঠিকমত পরিশোধ করছে পারছে না বাড়ি ভাড়া। আমরা প্রথম থেকেই দাবি জানিয়ে আসছি নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য কিছুটা হলেও বাড়ি ভাড়া মওকুফ করার জন্য, কিন্তু আমাদের কথা কেউ শুনছেন না। অনেক মানুষ বেকার এবং আয় কমে যাওয়ার কারণে তাদের পরিবারকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন, আর আয়ের আশায় তিনি নিজে কোনো একটি মেসে বা কম টাকা ভাড়ার বাসায় উঠেছেন।