ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীর পল্লবীর বাসিন্দা রাশেদ ওরফে রোকন ৩০ বছর বয়সেই বিয়ে করেছেন তিনটি। তারপর তার এক শ্যালিকাকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন অভিনব এক ভয়ংকর অপরাধ জগৎ। নানা কৌশলে তাকে দিয়ে প্রবাসী আর ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করা হয়। সখ্য আর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে দাওয়াত করে আনা হয় বাসায়। এরপর টার্গেট ব্যক্তিকে জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে শ্যালিকার সঙ্গে তোলা হয় আপত্তিকর ছবি। এসব ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ নেওয়া হয় বড় অঙ্কের টাকা। উপস্থিতভাবে ম্যানিব্যাগ, ক্রেডিট কার্ড, দামি মোবাইল আর ঘড়ি, যা পায় তা হাতিয়ে নেয় রাশেদের ‘দাওয়াত পার্টির’ সদস্যরা। এমন অপকর্মে নিজের শ্যালিকা ছাড়াও চক্রে রয়েছে আরও দুই সদস্য। সম্প্রতি পল্লবীর বাসায় এক প্রবাসীকে দাওয়াত করে নিয়ে তার সবকিছু কেড়ে রাখা হয়। দিগম্বর করে সেই শ্যালিকার সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলে তার কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। শেষ পর্যন্ত সেই প্রবাসী সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে আর নগদ লাখ টাকা দিয়ে রক্ষা পান। পরে পুলিশকে জানালে চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে ভয়ংকর ‘দাওয়াত পার্টির’ ফাঁদ পাতার কাহিনি। গ্রেপ্তার চারজন হলো- চক্রের প্রধান রাশেদ ওরফে রোকন, তার শ্যালিকা তিথি আক্তার, সহযোগী শেখ সাব্বির আজিজ এবং সিরাজুল ইসলাম। গত শুক্রবার পল্লবী থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাদের। ঘটনার শিকার প্রবাসী পুলিশকে জানিয়েছেন, তিথির সঙ্গে বিদেশে থাকতেই তার পরিচয়। বিভিন্ন সময়ে তার সঙ্গে কথা হতো। ৬ মাস আগে বিদেশ থেকে ফেরার পর তাকে বিভিন্ন সময়ে ওই তরুণী বাসায় বেড়াতে যেতে দাওয়াত করে। ৯ জুন দুপুরে সেই দাওয়াত রক্ষা করতে পল্লবী থানার বর্ধিত রূপনগর এলাকার ৫ নম্বর লাইনের ১০ নম্বর বাসার পঞ্চমতলায় যান। এর কিছুক্ষণ পরই তিন যুবক বাসায় ঢুকে তাকে উল্টাপাল্টা কথা বলতে থাকে। তিনি বিব্রতবোধ করে বাসা থেকে বেরিয়ে আসতে চান। তখন অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জামাকাপড় খুলে ফেলা হয় তার। তরুণীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ ছবি তোলা হয়। সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন আর মানিব্যাগে থাকা নগদ ২০ হাজার টাকা নিয়ে নেয় তারা। অস্ত্রের মুখে ব্যাংক কার্ড ও পাসওয়ার্ড নিয়ে আরও ৮০ হাজার টাকা তুলে নেয়। প্রবাসী জানান, শুধু তাই নয়, একপর্যায়ে ছাড়া পেতে তার কাছে ৫ লাখ টাকার মুক্তিপণ চাওয়া হয়। তা না হলে ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। শুরুর দিকে তরুণীও ঘটনার শিকার ধারণা করলেও তিনি বুঝতে পারেন, প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন। পুলিশকে জানালে তাকে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। অবশ্য তিনি পুলিশকে জানিয়েই বড় বিপদ থেকে রক্ষা পান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার উপপরিদর্শক সজীব খান জানান, গ্রেপ্তার চারজনই প্রতারক চক্রের সদস্য। তিথি আক্তার নামের তরুণীকে ব্যবহার করে চক্রের হোতা রাশেদ দাওয়াত পার্টির নামে টার্গেট করা প্রবাসী ও ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। আপত্তিকর ছবি তুলে রাখায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি পুলিশ পর্যন্ত অভিযোগ করে না। তবে এই চক্রের সর্বশেষ শিকার প্রবাসী ব্যক্তি থানায় মামলা করায় এদের আইনের আওতায় নেওয়া সম্ভব হয়েছে।