নিজস্ব প্রতিবেদক : কোরবানির ঈদ সামনে রেখে অন্য সময়ের তুলনায় জিরা, এলাচ, সয়াবিন তেল এবং রসুনের বাড়তি চাহিদা থাকলেও গত এক সপ্তাহে এই নিত্যপণ্যগুলোর দাম কমেছে। এর সঙ্গে দাম কমেছে ব্রয়লার মুরগিরও। কিন্তু ঈদের আগে এসব পণ্যের দাম কমলেও বাজারে সব ধরনের সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার, সুপার শপ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
কোরবানি ঈদের আগে চাহিদা কমায় কয়েকদিন ধরেই ব্রয়লার মুরগির দাম কমছে। টিসিবি জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ দাম কমে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাংস রান্নার অপরিহার্য পণ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়া এলাচের দাম ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ কমে ২৭০০ থেকে ৩৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাংস রান্নার আরেক অপরিহার্য পণ্য জিরার দাম ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমে ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকায় (কেজি) বিক্রি হচ্ছে।
লুজ সয়াবিন তেলের দাম ১ দশমিক ২০ শতাংশ কমে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা রসুনের দাম ৩ দশমিক ৩ শতাংশ কমে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় নেমেছে। এ দুটি পণ্যও মাংস রান্নার জন্য অপরিহার্য।
মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর বলেন, কোরবানির ঈদের সময় সব থেকে বেশি মাংস রান্না হয়। এ কারণে সাধারণ কোরবানির ঈদের আগে জিরা, এলাচ, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ বিভিন্ন মসলার দাম বাড়ে। কিন্তু এবার রসুন, জিরা, এলাচের দাম বাড়ার বদলে উল্টো কমেছে। তবে পেঁয়াজ, আদার দাম কিছুটা বেড়েছে। অবশ্য পেঁয়াজ ও আদার দাম মাঝে অনেক কমে গিয়েছিল।
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মাংস রান্নার অপরিহার্য কয়েকটি পণ্যের দাম কমলেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। সবজি ব্যবসায়ী ও সুপার শপের তথ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ সবজির কেজি এখন ৫০ টাকার ওপরে।
এর মধ্যে সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো। পাকা টমেটোর কেজি ১০০ থেকে ১৩০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। টমেটোর পাশাপাশি ১০০ টাকা ছুঁয়েছে গাজর। এ সবজিটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১১০ টাকা।
শুধু টমেটো ও গাজর নয় বেগুন, পটল, ঝিঙা, উসি, বরবটি, ঢেড়স, কচুর লতি কোনো কিছুই এখন কম দামে পাওয়া যাচ্ছে না। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে করলা।
বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিংগার ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঝিঙা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কচুর মুখী ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাকরোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি ৩০ থেকে ৩৬ টাকা।
সবজির পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ। বাজার ভেদে কাঁচামরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দামও চড়া। ডিমের ডজন ১০০ থেকে ১০৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
রামপুরার বাসিন্দা মামুন বলেন, সবজির বাজারে যে এখন আগুন লেগেছে। কোনো সবজি ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। কাঁচামরিচের পোয়া ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে সবজির এমন দাম আমাদের মতো নি¤œমধ্যবিত্তকে বেশ ভোগাচ্ছে।
সবজির দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী সালাম বলেন, আড়তে এখন সবজি কম আসছে। বন্যায় সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অবস্থা যা তাতে সহসা সবজির দাম কমার সম্ভাবনা খুব কম।
এদিকে গরু ও খাসির মাংস নি¤œ আয়ের মানুষের কপাল থেকে উঠে গেছে অনেক আগেই। গরুর মাংস ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি।
মাছের বাজারেও স্বস্তি নেই। তবে অন্য মাছের তুলনায় কিছুটা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে পাঙাস ও তেলাপিয়া। এর মধ্যে পাঙাস ১২০ থেকে ১৭০ টাকা এবং তেলাপিয়া ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। পাবদা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, কাঁচকি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, সরপুটি (চাইনা পুঁটি) ১৬০ থেকে ২৫০ টাকা, দেশি পুঁটি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা, শিং ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়, চিংড়ি ৪০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।