করোনার ভয় নেই জনজীবন স্বাভাবিক

জাতীয় রাজধানী

আহমেদ হৃদয় : মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপ এখনো কমেনি; কিন্তু কমেছে মানুষের আতঙ্ক। করোনায় দেশে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। কিন্তু রাজধানী ঢাকার রাস্তায় বের হলে বোঝার উপায় নেই যে, এ দেশে করোনাভাইরাস নামক কিছু আছে। রাস্তায় গাড়ীর জানযট, ফুটপাতে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক চলাচল এবং রাস্তার পাশের ছোট ছোট দোকানগুলোই স্বাভাবিক জনজীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন আর কেউ মাস্ক পড়ে না, মানছে না কেউ সামাজিক দূরত্ব এবং গণপরিবহনগুলোতেও নেই সামাজিক দূরত্ব। প্রতি সিটে একজন করে বসার নিয়ম থাকলেও মাঝে মাঝে কিছু বাসগুলোতে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এইতো সেদিনের কথা, গণপরিহনগুলোতে জীনাবুনাশক স্প্রে করা হতো; এখন আর তা করা হয় না। কোনো যাত্রী গাড়িতে উঠলে তার হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করা হতো, এখন তাও করা হয় না।
গতকাল পুরানা পল্টন মোড়ে জ্যামে আটকে থাকা বিকল্প সিটি সার্ভিসের কন্ড্র্যাক্টর মো. সেলিম মিয়ার মুখে মাস্ক ছিল না। মুখে মাস্ক নেই কেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এখন তো কেউ আর মাস্ক পড়ে না। সবকিছুই তো এখন স্বাভাভিক। আর অনেক যাত্রীরাও তো এখন আর মাস্ক পড়ে না।
বিহঙ্গ পরিবহনের এক যাত্রী রাসেল সকালের সময়কে বলেন, পাবলিক বাসগুলো এখন সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক। কারণ এক সিটে বিভিন্ন যাত্রী বসে, কিন্তু কন্ড্র্যাক্টররা কোনো জীবানুনাশক স্প্রে করে না। আর আমাদেরও বাধ্য হয়েই বাসে উঠতে হয়।
গতকাল বিকেলে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে জ্যামে আটকে শিকড় পরিবহনে ৩-৪ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বাসের কন্ড্র্যাক্টরকে জিজ্ঞেস করলে তিনি এক কথায় বলেন, যাত্রীরা জোর করে উঠলে আমরা কি করবো।
করোনাকে ভয় করি না, কিন্তু প্রশাসনের ভয় হয়। মাঝে মাঝে দোকান রেখে আমাদের পালিয়ে যেতে হয়। রাজধানীর পুরানা পল্টনে ফুটপাতের এক দোকানদার লাল মিয়া এসব কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসকে ভয় করে কী হবে, ঘরে তো খাবার নেই। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে তো আর না খেয় মরতে পারবো না। তাই বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে দোকান করি।
ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ সদু সকালের সময়কে বলেন, রাজধানী ঢাকাতে গণপরিবহন সেক্টরে এত শ্রমিক আছে যা আমাদের হিসাবের বাইরে। আর এত শ্রমিক তো আর সবাই আমাদের নাগালের ভিতরে নয়। তারা সারাদিন রাস্তায় থাকে, আর এসব শ্রমিকরা শিক্ষিত না; যে কারণে তারা অনেক কিছুই বোঝে না। স্বাস্থবিধি তারা বোঝে না, আর যদি বুঝতো তাহলে অবশ্যই তারা স্বাস্থবিধি মেনে চলতো।
তিনি বলেন, আমরা শুধু গণপরিবহনের শ্রমিকদের দোষটাই দেখি, কিন্তু বাসে সিট না থাকা সত্তেও অনেক যাত্রী আছে তারা জোর করে গাড়িতে উঠে। আবার অনেক কন্ড্র্যাক্টররা আছে যারা বাড়তি কিছু আয়ের জন্য বাসে নিয়মের বাইরেও অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে। তবে সবদিক বিবেচনা করে আমাদের সবাইকেই সচেতন হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, গণপরিবহনের কোনো শ্রমিক যদি মাস্ক না পড়ে কিংবা সরকারের দেয়া নির্দেষ অমান্য করে তাহলে পুলিশ তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে পুলিশ তৎপর নয়। তাই আমি মনে করি আমাদের সবাইকেই সতর্ক হতে হবে।


বিজ্ঞাপন