শরীয়তপুরে বন্যায় ক্ষতি ছাড়িয়েছে ১৫৫ কোটি

সারাদেশ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : এবারের দীর্ঘায়িত বন্যায় শরীয়তপুরের ৪টি উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যার পানি নামতে শুরু করে আবার বৃদ্ধি পাওয়ায় দুঃখ দুর্দশায় দিন কাটছে বন্যা কবলিত মানুষের। বন্যার পানি আবার বাড়তে থাকায় নতুন করে ব্যাপক ক্ষতির আশংকায় দিন কাটছে শরীয়তপুরের নিম্মাঞ্চলের মানুষের। এছাড়াও নড়িয়া, জাজিরা, ভেদরগঞ্জ, গোসাইরহাট ও সদর উপজেলায় পদ্মা, মেঘনা ও কীর্তিনাশার ভাঙ্গনে সহায় সম্বল হারিয়েছে নদী তীরবর্তি এলাকার হাজারো পরিবার। এসব পানিবন্দি ও নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষগুলোর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি সঠিক ভাবে নিরুপন করা সম্ভব না হলেও সরকারী দপ্তরগুলোর তথ্য অনুযায়ী ইতিমধ্যে ১শ’ ৫৫ কোটি ছাড়িয়েছে। তবে নতুন করে পানি বৃদ্ধির ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশংকা সংশ্লিষ্টদের। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় সড়ক বিভাগ, কৃষি খাত, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ বিভাগ রয়েছে সবার উপরে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর তথ্যানুসারে শরীয়তপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) ১হাজার ২শ’ ১৪ কিলোমিটার পাকা সড়কের মধ্যে ২৩০ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও ৪১০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ৮০ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর। শরীয়তপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের শরীয়তপুর জাজিরা-নাওডোবা ২৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৯ কিলোমিটার ও নড়িয়া- ডগ্রী ১২ কিলোমিটার সড়কের ৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে সড়ক বিভাগে ক্ষতি হয়েছে ৩৪ কোটি টাকা। শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে এবারের বন্যায় ১২ হাজার ৯১০ হেক্টর আবাদী আউশ ধানের মধ্যে ৫০৭ হেক্টর, ৬১৭ হেক্টর রোপা বীজতলার মধ্যে ৪৮ হেক্টর ৬৭০ হেক্টর রোপা আমনের মধ্যে ৪৮ হেক্টর ধান আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। ২ হাজার ৭৮০ হেক্টর আবাদি শাক-সব্জির মধ্যে ২০৮ হেক্টর জমির শাক-সব্জি সম্পুর্ণ বিনষ্ট হওয়াসহ আখ ও পান খাতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও অন্যান্য জমির ফসল আক্রান্ত হওয়ায় কৃষিখাতেই ক্ষতির পরিমান দাড়িয়েছে ১২ কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে পুকুর, দিঘী ও মৎস্য খামার মিলে মোট ২ হাজার ৫৬৫ টি। যার আয়তন ৪৬০ হেক্টর। ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা। জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ জানিয়েছে হাঁস-মুরগির খামার, গরুর খামার ও দানাদার খাদ্যসহ ক্ষতির পরিমাণ ৫ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা। এদিকে নদীর তীরবর্তী ১টি দুর্যোগসহনীয় নির্মাণাধীন বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, ১শ’ হেক্টর ফসলী জমিসহ প্রায় এক হাজার পরিবারের বসত বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবিব জানিয়েছেন, পদ্মাসেতুর সংরক্ষণ কাজ এর ৭০ মিটার ও সুরেশ্বর দরবার রক্ষা বাঁধের ৮০ মিটার পদ্মার ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে প্রায় ৯ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রাথমিক অধিদপ্তরের শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, পদ্মার ভাঙ্গনে ১১৮ টি প্রাথমিক বিদ্যায়ের ভিতর পানি প্রবেশ করায় এবং বিদ্যালয় মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও পদ্মার ভাঙ্গনে নড়িয়া উপজেলার বসাকের চর প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে যায় এ বিভাগের আরো ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: আমীর হামজা বলেন, এবারের বন্যা ও অতিবৃস্টির কারনে আগাম শাক-সবজি বিলম্বিত হচ্ছে। বন্যায় কৃষকের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য সরকার বিভিন্ন পুনর্বাসন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। জেলায় বন্যাত্তোর ২হাজার ৪শ’ কষককে কৃষি প্রনোদনার জন্য একটি চাহিদাপত্র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
শরীয়তপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান ফরাজী বলেন, বন্যায় প্লাবিত হয়ে অনেক সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখনো অনেক সড়ক পানির নীচে রয়েছে। বন্যার পানি না নেমে যাওয়া পর্যন্ত সঠিক ভাবে ক্ষয়-ক্ষতির নিরুপন করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সড়কের জরুরী মেরামত কাজ শুরু করেছি। খুব অল্প সময়েরে মধ্যেই আমরা ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তাঘাট নির্মান ও মেরামতের কাজ শুরু করবো। শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান বলেন, ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের ইটের সুরকি দিয়ে আপাতত যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সড়কটি সংস্কার করার জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ সড়কগুলি দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করতে সক্ষম হবো।


বিজ্ঞাপন