বিশ্ব নেতাদের আবারো পথ দেখালেন শেখ হাসিনা
বিশেষ প্রতিবেদক : আবারো বিশ্ব নেতাদের পথ দেখালেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বিশ্বের ছোট-বড় সকল রাষ্ট্রকে রাক্ষায় নতুন পথ দেখালেন তিনি। এছাড়াও বিনিয়োগের সময় টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে পৃথিবীকে রক্ষায় চার দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন বায়োডাইভার্সিটি সামিটের সাধারণ পরিষদের।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনের সাইডলাইনে ভার্চুয়াল জীববৈচিত্র্য সম্মেলনে দেয়া বিবৃতিতে শেখ হাসিনা এই প্রস্তাব পেশ করেন।
প্রথম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবী এবং আমাদেরকে রক্ষার জন্য বিনিয়োগের সময় আমাদের টেকসই ভবিষ্যতের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ শীর্ষক এ ইভেন্টে প্রধানমন্ত্রী তার দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা ও গবেষণার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বৃহত্তর গণসচেতনতা সৃষ্টি ও জাতীয় পর্যায়ে আইন-কানুন জোরদার করা এবং নিরীক্ষণ প্রক্রিয়া জীববৈচিত্র্য রক্ষার মূল পদক্ষেপ।
তিনি তার তৃতীয় প্রস্তাবে উল্লেখ করেন, জেনেটিক রিসোর্স এবং ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানের প্রকৃত মালিকদের জন্য বিশ্বব্যাপী সুফল বাটোয়ারায় প্রবেশাধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। আর চতুর্থ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারিসের (সনদ) লক্ষ্য অর্জন আমাদের বিলুপ্তি এবং টিকে থাকার মধ্যে পার্থক্য তৈরি করতে পারে। আমাদের অবশ্যই সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নের জন্য জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ এর ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একটি আন্তঃনির্ভরশীল বিশ্বে বাস করি যেখানে পৃথিবী গ্রহের প্রতিটি প্রজাতি আমাদের বাস্তুসংস্থানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। যদিও তিনি বলেন, ডব্লিউডব্লিউএফ এবং লন্ডন জিওলজিক্যাল সোসাইটির তথ্য মতে, ১৯৭০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বন্য প্রাণীর সংখ্যা গড়ে ৬৮ শতাংশ কমেছে।
বাংলাদেশ মিঠা পানির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিঠা পানির জীববৈচিত্র্য বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত হারে হ্রাস পাচ্ছে, বৈশ্বিক জলাভূমির ৮৫ শতাংশ এরইমধ্যে শিল্প বিপ্লবের পরে হারিয়ে গেছে। ১৯৭০ সাল থেকে মিঠা পানির স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, উভচর, সরীসৃপ ও মাছের সংখ্যা প্রতি বছর গড়ে ৪ শতাংশ হারে হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়িয়ে তুলছি এবং ফলস্বরূপ, কোভিড-১৯ এর মতো ‘জুনটিক’ (প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত) রোগের ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের বর্তমান ক্রিয়াকলাপ অব্যাহত রাখা হলে আমরা কেবল অন্যান্য প্রজাতির বিলুপ্তির কারণই হচ্ছি না, মূলত আমরা মানবজাতিরও চূড়ান্ত বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে সংবিধানে রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের প্রথম দিকেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের আদেশ কার্যকর করেন।
জৈব বৈচিত্র্য সম্পর্কিত কনভেনশন বাস্তবায়নের জন্য আইন-প্রণয়নকারী অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আমাদের সংসদ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বায়োলজিকাল ডাইভারসিটি অ্যাক্ট ২০১৭ পাস করেছে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের মোট স্থলভাগের ৫ শতাংশেরও বেশি এবং সামুদ্রিক জলভাগের প্রায় ৫ শতাংশ অঞ্চলকে সংরক্ষিত ও পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করেছে।
জীববৈচিত্র্য রক্ষা না পেলে পুরো মানবজাতিই বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাবে মন্তব্য করে এই পৃথিবী ও মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বক্তব্য রাখার পরপরই বিশে^র বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স গণমাধ্যমে বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় এই চার প্রস্তাব আলোচিত হয়। বলা হয় বিশ^ যখন অস্তিত্ববিলীনের শঙ্কায় তখনও উন্নত বিশে^র নেতারা নিজেদের দাম্বিকতায় ব্যতি-ব্যস্ত। যখন সীমান্ত সঙ্কটসহ অভ্যান্তরীন নানা ইস্যুতে কথা বলছেন বিশ^নেতারা তখন প্রধানমন্ত্রীর চার প্রস্তাবনা বিশ^বাসীকে নতুন স্বপ্নের পথ দেখিয়েছে।
কিন্তু মানুষের কর্মকা-ে সেই বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা বোঝাতে ওয়ারর্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড এবং লন্ডন জুলজিক্যাল সোসাইটির তথ্য তুলে ধরেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭০ থেকে ২০১৬ সালে এসে বিশ্বে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ৬৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশ স্বাদু পানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। কিন্তু বিশ্বে স্বাদু পানির জীববৈচিত্র্য দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। শিল্প বিপ্লবের পর থেকে এ পর্যন্ত পৃথিবী তার ৮৫ শতাংশ জলাভূমি হারিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭০ সালের পর থেকে স্বাদু পানির স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, উভচর প্রাণী, সরীসৃপ এবং মাছের জনসংখ্যা প্রতি বছর গড়ে ৪ শতাংশ হারে হ্রাস পেয়েছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়কে বাড়িয়ে তুলছি। যার ফলস্বরূপ, কোভিড-১৯ এর মত জুনটিক (অন্য প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে আসা সংক্রামক ব্যাধি) রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কেবল অন্যান্য প্রজাতির বিলুপ্তির কারণ হচ্ছি না; আমাদের কর্মকা- যদি এই ধারাতেই চলতে থাকে, তাহলে আমরা প্রকৃতপক্ষে মানবজাতির বিলুপ্তির দিকেই এগিয়ে যাব। এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে, মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা করতে চার দফা পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, যে ক’টি দেশ জৈব বৈচিত্র্য সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক কনভেনশনটি বাস্তবায়নের জন্য আইন কার্যকর করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ২০১৭ সালেই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ বায়োলজিকাল ডাইভারসিটি অ্যাক্ট’ পাস হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার ভূখ-ের ৫ শতাংশের বেশি এবং সমুদ্র অঞ্চলের প্রায় ৫ শতাংশ এলাকাকে ‘ঝুঁকিতে থাকা’ এবং সংরক্ষিত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করেছে।