নিজস্ব প্রতিবেদক : বাগেরহাটে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতাহার তরফদারের মুক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্বজনরা। রবিবার (০৬ ডিসেম্বর) দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে আতাহার তরফদারের স্ত্রী লকি বেগম, মেয়ে লিজা কবির, ভাই উজ্জল তরফদার, ভাতিজা জাহিদুর তরফদার উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে লিজা আক্তার বলেন, ১৯৯৬ সালে আমার বড় চাচা আকতার আলী তরফদার বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বাগেরহাট শহর থেকে বাড়িতে আসার পথে দিনের বেলায় মির্জাপুর সড়কের পাশে টেম্পুর গতিরোধ করে বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসী মকবুল মাস্টার, আবজাল মল্লিকসহ আরও কয়েক জন আমার চাচা আকতার আালী তরফদারকে জবাই করে হত্যা করে। পরবর্তিতে উপ-নির্বাচনে আমার বাবা আতাহার তরফদার ডেমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু সন্ত্রাসীরা আমার বাবাকে শেষ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালায়। না পেরে তার নামে মিথ্যে মামলা দেয়। সেই মামলায় আমার পিতা আত্মসমর্পন করে জেল হাজতে প্রেরণ করে আদালত। এর মধ্যে ১৯৯৯ সালে গেলে আমার মেঝো চাচা আনোয়ার তরফদারকে গরু গোজা মৎস্য ঘেরের বাসায় কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পরবর্তীতে আমার পিতা জামিনে মুক্ত হয়ে সুন্দর ভাবে ডেমা ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা করতে থাকেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। মিথ্যে মামলা ও হামলা চলতে থাকে আমার বাবার উপর।
এদিকে ২০০১ সালের নির্বাচনের আগ মুহুর্তে বাগেরহাট জেলা বিএনপি নেতা সিলভার সেলিম (এম.এইচ সেলিম) আমার বাবাকে আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিতে যোগদানের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, চেয়ারম্যান তুমি আমার সাথে থাকবা,আমার দল করবা ,বিনিময়ে কি চাও যত টাকা চাও আমি দেব, ব্যাংক এ্যাকাউন্ড নম্বর দেও টাকা জমা করে দিচ্ছি ,কেস কান্ড আমি দেখব। কিন্তু আমার বাবা রাজি না হওয়ায় এবং নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে যাওয়ায় শুরু হয় আমাদের পরিবারের উপর অত্যাচার,জুলুম,নির্যাতন। লুটতরাজ করে সর্বস্বান্ত করে দেয় বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।
অন্যদিকে ২০০১ সালের ১৮ জুন মোড়েলগঞ্জ থানায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় সোহরাফ নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়। ওই দিন আমার পিতা ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। আশ্চর্যের বিষয় ওই মামলায়ও আমার বাবাকে আসামী করা হয়।এজাহারে বলা হয় আমাদের লাইসেন্স করা ডবল ব্যারেল বন্দুক দিয়ে সে ভিকটিমের বুকে গুলি করেছে। অথচ আমার মায়ের নামে লাইসেন্সকৃত ডবল ব্যারেল বন্দুকটি বাগেরহাট সদর থানায় জমা ছিল।মামলায় আমার বাবা আত্মগোপনে থাকে।ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয় খুনি আবজাল মল্লিককে। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা সাজাহান শরিফ তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন সোহরাফ হত্যা কান্ডের সাথে আতাহার তরফদারের কোন সংশ্লিষ্টতা নাই সে ওই দিন কে অজ্ঞান ছিল।আমার মায়ের নামে লাইসেন্স বন্ধুকটি থানায় থাকা স্বত্তেও বিচারক ওই মামলায় আমার বাবাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন।
এছাড়া মোংলার ইলিয়াস হত্যাকান্ডেও আমার বাবাকে মৃত্যু দন্ড দেওয়া হয়। হত্যাকান্ডের এজাহারে লেখা রয়েছে ১৯৯৮ সালের ১৮ নভেম্বর তারিখে ভিকটিমকে হত্যা করা হয়। ১৮ তারিখ প্রাকৃতিক দূযোগ থাকার কারনে ১০ নম্বর বিপদ সংকেত চলছিল। সুন্দরবন ছিল তখন পানির নিচে অথচ ৪ দিন পর তদন্তে গিয়ে মাটিতে দা কুড়ালের কোপের দাগ,গাছের পাতায় রক্ত ও গাছের ডালে চুল পায় লাশ নাই কারো শিকারোক্তি নেই। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে দল ক্ষমতায় আসলে সাবেক আইন মন্ত্রী আমির খসরুর মাধ্যমে জামিনে মুক্ত হন আমার আব্বু। কিন্তু উক্ত বানোয়াট মামলায় ২০১৪ সালে ১১ মে আগ্রুমেন্টে হাজির হলে জেলা জ্বজ আদালতের বিচারক আমার আব্বুর জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সেই থেকেই আমার বাবা কারাগারে রয়েছেন। ১৮ মে আদালত কোন যুক্তিতর্ক না শুনে আব্বুকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। পরে আমরা হাইকোর্টে আবেদন করলে উচ্চ আদালত মৃত্যুদন্ড কমিয়ে ৩২ বছর সস্ত্রম কারাদন্ড দেয়। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।
কান্না জড়িত কন্ঠে লিজা কবির আরও বলেন, আমার দুই চাচার হত্যার প্রকৃত আসামীরা আদালত থেকে খালাস পেয়েছে। অথচ আমার পিতা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মিথ্যে মামলায় দীর্ঘ দিন কারাগার ভোগ শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।পাশাপাশি আমার মাসহ পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমি মিথ্যে ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা থেকে মুক্তি দিয়ে আমার বাবার মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর ভিক্ষা চাই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন লিজা কবির।