নিজস্ব প্রতিনিধি : রাজশাহী জেলার পুঠিয়া থানার সাবেক ওসি সাকিল উদ্দীন আহমেদ ২০১৯ সালে পুঠিয়া থানায় কর্মরত থাকাবস্থায় দন্ডবিধির ১৬৬/১৬৭/২১৭/২১৮ ধারাসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অপরাধ করায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা কার্যালয়, রাজশাহীতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী জনাব মো: আল-আমিন, সহকারী পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা কার্যালয়, রাজশাহী। যার মামলা নং-০১, তারিখ: ২৪/০১/২০২১ খ্রি.।
অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ
মামলার আসামী সাকিল উদ্দীন আহমেদ কর্তৃক পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থেকে পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল এর প্রবিধান ২৪৩ ও ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারা সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘনপূর্বক ক্ষমতার অপব্যবহার পূর্বক অপরাধমূলক অসদাচরণ করে পুঠিয়া থানার মামলা নং ০৮, তারিখ: ১১/০৬/২০১৯ খ্রি. এর এজাহারে সুনির্দিষ্টভাবে ০৮ (আট) জন আসামীর নাম উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও উক্ত আসামীদেরকে সাজা হতে বাঁচাবার উদ্দেশ্যে এবং সংবাদদাতার ক্ষতিসাধনকল্পে আইনের নির্দেশ অমান্য করে কারসাজি (Manipulation) মূলকভাবে উক্ত এজাহার পরিবর্তন করে এবং প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (FIR) আসামীর নাম ও বাসস্থান/ঠিকানা সম্বলিত কলামে ‘অজ্ঞাতনামা’ লিপিবদ্ধ করে স্বাক্ষরপূর্বক মামলা রুজু করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন।
জনৈক নূরুল ইসলাম রাজশাহী জেলার পুঠিয়া থানার সড়ক ও পরিবহন মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত উক্ত শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনে নূরুল ইসলাম পুনরায় সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দিতা করে সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত হন। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফলাফল পরিবর্তন করে মোঃ আব্দুর রহমান পটলকে সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেন। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ করে নূরুল ইসলামসহ অপর ০৩ জন বাদী হয়ে রাজশাহী জেলার পুঠিয়া সহকারী জজ, ১ম আদালতে ০৮ জনকে বিবাদী করে একটি নির্বাচনি মোকাদ্দমা দায়ের করেন। উক্ত মোকদ্দমাটি শুনানীঅন্তে সংশ্লিষ্ট আদালত বিবাদীগণের বিরুদ্ধে পুঠিয়া থানা সড়ক ও পরিবহন মটর শ্রমিক ইউনিয়নের নবনির্বাচিত কমিটির সমস্ত কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা ও কারণ দর্শানোর আদেশ প্রদান করেন। বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক উক্ত অন্তবর্তী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রচারিত হলে উক্ত মামলার বিবাদী মোঃ আব্দুর রহমান পটল এবং তার সহযোগীরা নুরুল ইসলামকে বিভিন্নভাবে জীবন নাশের হুমকি প্রদান করেন। গত ১০/০৬/২০১৯ খ্রি. তারিখ সন্ধ্যা হতে নুরুল ইসলামের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন ১১/০৬/২০১৯ খ্রি. তারিখ সকাল আনুমানিক ১০.০০ ঘটিকার সময় নুরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন যে, নুরুল ইসলামের মরদেহ এ.এস.এস. ব্রিক ফিল্ড, পুঠিয়া এর ভেতরে পড়ে আছে। মৃত নূরুল ইসলামের কন্যা জনাব নিগার সুলতানা ঐ দিন দুপুর আড়াইটার দিকে একটি হত্যা মামলা দায়ের করার জন্য পুঠিয়া থানায় যান এবং ০৮ জনকে আসামী করে এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু উক্ত এজাহারে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনে অবৈধ হস্তক্ষেপের বিষয়টি উল্লেখ থাকায় ওসি সাকিল উদ্দীন আহমেদ এজাহারটি রেকর্ডভূক্ত না করে সংবাদদাতা জনাব নিগার সুলতানাকে তা সংশোধনপূর্বক উক্ত বিষয়টি বাদ দিয়ে পুনরায় এজাহার দিতে বলেন। তৎপ্রেক্ষিতে জনাব নিগার সুলতানা উক্ত বিষয়টি বাদ দিয়ে পুনরায় থানায় এজাহার দাখিল করলে ওসি সাকিল উদ্দীন আহমেদ তা গ্রহণ করেন এবং কিছু সাদা কাগজে জনাব নিগার সুলতানার স্বাক্ষর নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। পরবর্তীতে সংবাদদাতা জনাব নিগার সুলতানা পুঠিয়া থানা হতে এজাহার ও এফআইআর এর কপি সংগ্রহ করেন দেখেন যে, এফআইআর-এ আসামীর নাম ও বাসস্থান/ঠিকানা সম্বলিত কলামে কোন আসামীর নাম না লিখে সেখানে ‘অজ্ঞাতনামা’ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং এজাহারের বর্ণনা পরিবর্তনের পাশাপাশি আসামীর সংখ্যা ০৮ জনের পরিবর্তে ০৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
সংবাদদাতা নিগার সুলতানা উক্ত বিতর্কিত এজাহার এর বিরোধীতা করে প্রতিকারের নির্দেশনা চেয়ে মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগে রীট পিটিশন দায়ের করেন। উক্ত রীট পিটিশনের রুল নিশি ইস্যুর সময় বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, রাজশাহীকে জনাব নিগার সুলতানা কর্তৃক দায়েরকৃত পুঠিয়া থানা মামলা নং ০৮ তারিখ ১১/০৬/২০১৯ খ্রি. এর এজাহার পরিবর্তন বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক একটি প্রতিবেদন প্রেরণের নির্দেশনা প্রদান করেন। তৎপ্রেক্ষিতে বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধান শেষে জনাব নিগার সুলতানার দায়েরকৃত এজাহার গ্রহণ না করে কারসাজি (Manipulation) মূলকভাবে এজাহার দায়েরের ক্ষেত্রে পুঠিয়া থানার তৎকালীন ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদ এর সন্দেহজনক ভূমিকা রয়েছে মর্মে সুষ্পষ্ট প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। উক্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ গত ০১/১২/২০১৯ খ্রি. তারিখে এই মর্মে রায় প্রদান করেন যে, “পুঠিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাকিল উদ্দীন আহমেদ আলোচ্য মামলার রীট আবেদনকারী নিগার সুলতানা কর্তৃক তার পিতা-নুরুল ইসলাম হত্যার সাথে জড়িত ০৮ (আট) জনকে অভিযুক্ত করে প্রেরিত এজাহারটি গ্রহণ না করে পরবর্তীতে তাকে থানায় ডেকে নিয়ে জব্দ তালিকা, সুরতহাল প্রতিবেদনসহ কিছু সাদা কাগজের উপর সই করিয়ে নেয়া হয় এবং অতঃপর সইকৃত ঐ সাদা কাগজে এজাহার টাইপ করে থানায় তা রেকর্ডভূক্ত করা হয়। রীট আবেদনকারী নিগার সুলতানা কর্তৃক থানায় প্রেরিত এজাহারের বর্ণনার সাথে দায়েরকৃত এজাহারের বর্ণনার মধ্যে অসঙ্গতি বিদ্যমান। সর্বোপরি এজাহারে আসামীর কলামে ‘অজ্ঞাত’ উল্লেখ করা হয়েছে; যদিওবা রীট আবেদনকারী এজাহারে ০৮ (আট) জনের নাম অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করেছিল। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মত দায়িত্বশীল একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ নিঃসন্দেহে গুরুতর, যা দন্ডবিধির ধারা ১৬৬ ও ১৬৭ অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ”।