রিয়াজুল হক সাগর, (রংপুর) : উজান থেকে হু হু করে ধেয়ে আসছে পানি। এতে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে টানা তিন দিন ধরে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ে।

বৃহস্পতিবার(১৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬ টায় হাতীবান্ধা উপজেলার সেচপ্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৩ মিটার। যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ৮ সেন্টিমিটার ওপরে।

নদীপাড়ের মানুষ ও বন্যা সতর্কিকরণ কেন্দ্র জানায়, চারদিনের ভারী বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ সোমবার রাত থেকে বাড়তে থাকে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে টানা তিন দিন ধরে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা নদীর উভয় পাড়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় জেলার প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

তিস্তার পানি বাড়ার ফলে লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী উপজেলার বেশ কিছু অংশ বন্যায় ডুবেছে। এর মধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, বাহাদুরপাড়া, পলাশী এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিচু অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

টানা তিন দিনের বন্যায় পানিবন্দি পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছে। গবাদি পশুপাখি, বৃদ্ধ শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। ঘরের ভেতর বিছানায় মাচাং বানিয়ে সারাদিনের রান্না একবারে করছেন গৃহকর্মীরা।
কেউ কেউ পাশের উঁচু রাস্তা বাঁধে চুলা বসিয়ে রান্না করে নিচ্ছেন। বাঁধ আর রাস্তার ধারে পলিথিনের তাবু সাটিয়ে রাখা হচ্ছে সন্তানতুল্য গবাদি পশুগুলোকে। সব চেয়ে বড় বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি পরিবারের নারীরা। পায়খানা ডুবে যাওয়ায় শৌচ কাজ সাড়তে বেশ বিড়ম্বনায় পড়ছেন নারীরা। প্রায় সব বাড়ির টিউবয়েল ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানিরও চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
তিস্তাপাড়ের গোবর্দ্ধন গ্রামের এমদাদুল হক বলেন, তিনদিন ধরে পানিবন্দি রয়েছি। চার তিকে শুধু পানি আর পানি। উজানের ঢলে তিস্তা নদী গর্জে উঠেছে। ভয়ঙ্কর রুপ নিয়েছে তিস্তা নদী। নির্ঘুম রাত কাটছে বন্যা কবলিত পারিবারগুলোর। পানির কারণে সাপ, পোকামাকড়ের উপদ্রুত বেড়েছে।
উত্তর ডাউয়ামারী গ্রামের আকলিমা বেগম জানান, রাস্তা ঘাট ডুবে গেছে। আমাদের গ্রামের সব বাড়িতে হাঁটু বা কোমড় পানি। রান্না করা, খাওয়া, থাকা, প্রস্রাব পায়খানা করা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়েছে। রাতে ঘুমাতে পারিনি। কখন যে পানিতে কে পড়ে যায়? আতঙ্কে থাকি বাচ্চাদের নিয়ে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। তিনদিন ধরে বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তাপাড়ের নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে।
বন্যার উন্নতি হতে কিছুটা সময় লাগবে। তাই এসব অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যা ৬টায় কিছুটা কমে গিয়ে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার বলেন, পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে কিছু প্যাকেটজাত শুকনো খাবার ও জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, খুব দ্রুত বিতরণ করা হবে। আরও কিছু শুকনো খাবারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকা সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে।