ফুলও ‘সেকেন্ড হ্যান্ড’

জাতীয় জীবন-যাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুরনো বেশ কয়টি ফুলের ঝুড়ি নিয়ে কার্জন হলের পাশে দাঁড়িয়েছে চকচকে এক প্রাইভেটকার। ড্রাইভার তড়িঘড়ি করেই সেগুলো ওখানকার ফুলের দোকানে সাড়ে ৪০০ টাকায় বেচে চলে গেলেন।
যে ফুলের ঝুড়িগুলো ওই দোকানী কিনলেন, সেগুলো সচরাচর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পর ফেলে দেয়া হয়। তাহলে কী কাজে লাগবে এসব, কেন বিক্রি হচ্ছে দাম দিয়ে? সেটা দেখার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা।
পরে দেখা গেল এগুলো দিয়ে খুব আশ্চর্যকর কিছু না হলেও পুনরায় ব্যবহার হচ্ছে। কারণ ফুল ব্যবসায়ীদের কাছে না পচা পর্যন্ত কোনো ফুলই ফেলনা নয়। ওই সব ‘সেকেন্ড হ্যান্ড’ ফুলগুলো দিয়ে আবারও তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ফুলঝুড়ি। সঙ্গে শুধু কিছু নতুন তাজা ফুল জুড়ে দেয়া হচ্ছে। আর পাল্টে দেয়া হচ্ছে ঝুড়ির মোড়ক (মোড়ানো গিফট পেপার ও পলি)। ঠিকঠাক থাকছে আধারসহ বাকিসব।
সেখানে পুরনো ফুলের কাজ করছিলেন খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, পুরনো ফুল থেকে যেগুলো নতুন করে ব্যবহার করা সম্ভব সেগুলো সবই কাজে লাগে। তবে এসব নতুন তাজা ফুলের মত বেশি দামে বিক্রি হয় না। কিছুটা কম দামে পান বলে অনেক ক্রেতা এগুলো কেনেন।
ফুলঝুড়ির ক্ষেত্রেই শুধু এমন তা কিন্তু নয়, এমন সেকেন্ড হ্যান্ড ফুলের ব্যবহার হয় হাতে তৈরি বুকে, পুষ্পার্ঘ, তোড়া থেকে শুরু করে ফুলের বিভিন্ন সজ্জার কাজেই। আর ফুলগুলো যখন এমন কোনো কাজে-ই লাগানো যায় না, তখন সেটা দিয়ে তৈরি করা হয় পাপড়ি। যা কিছু তাজা ফুলের সঙ্গে মিশে কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে অতিথি বরণে কাজে আসে।
শাহবাগ জাদুঘরের কোনায়ও এরকম পুরনো ফুলগুলো আসে। সেখানে জারবেরা থেকে কিছু পাপড়ি ছড়িয়ে নতুন তাজা পাপড়িগুলো রেখে আবার সেগুলো ব্যবহার করতে দেখা যায়। সেখানে রুহুল আমিন বলেন, অনেক অনুষ্ঠানে প্রচুর পাপড়ির দরকার হয়। সেগুলো পুরান ফুল থেকেই বেশিভাগ নেওয়া হয়। আবার ব্যবহার হয়নি কিন্তু নষ্ট হচ্ছে সেসব ফুল থেকে পাপড়ি হয়।
ফুলের এই রিসাইকেল ব্যবসা করেই চলে ঢাকার বেশ কিছু ফুলের দোকান। রাজধানীতে যেসব দোকানে একেবারে তাজা ফুল বিক্রি হয়, সেসব দোকানীও কমবেশি এমন ফুল রাখেন। আর দুই-তিন দফা ব্যবহার হওয়া এসব ফুল বারবার সংগ্রহের পেছনেও রয়েছে বেশ কিছু মানুষ। শুধু যে বাসা-অফিসের কিছু ড্রাইভার কেয়ারটেকার অথবা পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এসব পুরনো ফুল দিয়ে যান তা নয়। ফুল সংগ্রহের জন্য বিক্রেতাদেরও রয়েছে নির্ধারিত লোকজন।
অর্থাৎ বড় একটি অনুষ্ঠানে ফুল সরবরাহের পর কিছু লোকজন ওই ফুলের সাজসজ্জার কাজ করেন। তারাই আবার অনুষ্ঠান শেষে ফুল দোকানে বিক্রি করে দেন। সেক্ষেত্রে আয়োজকরা কখনো ফুলগুলো ফ্রিতে, আবার কখনো কিছু টাকার বিনিময় দিয়ে দেন। আর প্রায়শই ফুল নেয়া-দেয়া করার জন্য সাজসজ্জার লোকজনের সঙ্গে আয়োজকদের কিছু কর্মচারীর ভালোই যোগসাজশ তৈরি হয়ে যায়।
কার্জন হলের পাশে থাকা জসিমউদ্দিন বলেছিলেন, খুব বড় প্রোগ্রাম হলে আমাদের লোক ফুল সংগ্রহের জন্য থেকে যায়। ককশিট থেকে শুরু করে অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে আসে খুলে। একুশে ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বরের মতো প্রোগ্রামগুলোতে শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধে প্রচুর লোক থাকে, যারা বিভিন্ন সামগ্রী এনে ফুলের দোকানগুলোতে দেয়।
ফুল ফেরত দিলে কেমন দাম পাওয়া যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরনো ফুলের আহামরি তেমন দাম নেই। ফুলের পরিস্থিতি দেখে সেটা নির্ধারণ করা হয়। তবে নতুন ফুলের তুলনায় সেটা খুবই কম।
তিনি বলেন, যারা এসব ফুল বিক্রি করে তারা যা পায়, সেটাই লাভ। আমরা না নিলে এসব ফুল ফেলে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।


বিজ্ঞাপন