দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : অন্যান্য বছরের ন্যায় এবছরও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাশ্ববর্তী জেলা মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদম বাড়ীতে মহামানব শ্রী শ্রী গনেশ পাগল সেবাশ্রমে উপমহাদেশের অন্যতম শত-বর্ষের ঐতিহ্যবাহী ৩দিন ব্যাপি কুম্ভ মেলা সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। আজ ২৮মে মঙ্গলবার পূজা ও মূল মেলা অনুষ্ঠিত হবে। ৩দিন ব্যাপি এ মেলায় ১০ লক্ষাধিক লোকের সমাগম হওয়ার ধারনা করছেন অনেকেই। প্রতি বছর মেলায় আগত আশ্রমের সেবায় ২শ বস্তা চিড়া,১২মন গুড় ও ৫শ মন চালের খিচুড়ি করা হয় বলে জানা যায়। এ প্রসাদ ভক্তদের মাঝে বিতরন করা হয়। মেলায় দেশ বিদেশের ভক্তসহ সকল ধর্মের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। হাজার হাজার ভক্ত ঢাক-ঢোল, কাশিসহ নানা ধরণের বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে জয় গনেশ পাগল ধ্বনিতে মুখরিত করে তুলে আশ্রম এলাকা। এ উপলক্ষে বসেছে বাউল শিল্পীসহ বিভিন্ন আধ্যাত্মিক শিল্পীদের আসর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শ্রী শ্রী গণেশ পাগল আশ্রমের এই কুম্ভ মেলা ছিল মুলত এক রাতের আয়োজন। কিন্তু এখন এই মেলা চলে টানা ৩ রাত ৩ দিন। মঙ্গলবার ভোরেই মন্দির প্রাঙ্গণে লাখো ভক্তের সমাগমের মাধ্যমে মেলা শুরু হয়। সন্ধ্যার পর রাতের প্রহর বাড়ার সাথে সাথে আশ্রমে সকল ধর্মের ভক্তদের মহাস্রোত নামে। অন্তত ১০/১২ লাখ ভক্ত জড়ো হয় এই মেলা প্রাঙ্গেণে। বল হরিব্বল ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে চারদিক। মেলাকে ঘিরে কয়েক স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা বেস্টনি গড়ে তোলা হলেও পুলিশ ভিড় সামলাতে হিমশিম খায়। মেলায় প্রায় ৩ সহস্রাধিক ছোট বড় স্টল বসে। প্রায় ৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পুরো কদমবাড়ি এলাকার বাড়িঘর মাঠ ঘাট ক্ষেত খামারে বৃহৎ এ মেলা বসে। এ মেলায় আসা হাজার হাজার সাধু সন্যাসী ও তার ভক্তরা গাঁজার দমে একতারা আর দোতারায় সুর দিয়ে সারা রাত মেতে থাকে। দেশ বিদেশ থেকে আসা এসব সাধু সন্যাসী ও ভক্তরা বাহারী কলকি হাতে গাঁজায় দম দেয়ার পাশাপাশি ধর্মীয় সঙ্গীত, নৃত্য-বাদ্য বাজনা পরিবেশনার মধ্য দিয়ে রাত কাটায়। ভক্তবৃন্দরা জানায়, কথিত আছে যে জ্যৈষ্ঠ মাসের ১৩ তারিখে ১৩ জন সাধু ১৩ কেজি চাল ও ১৩ টাকা নিয়ে এ পূজা শুরু করে। দেবতারা সমুদ্র মন্থণ করে হরিদ্বার, প্রয়াগ, উজ্জয়িনী ও নাসিক এ চারটি স্থানে অমৃতসুধা চারটি কুম্ভ পাত্রে রাখে। সেই থেকে প্রায় ১৩১ বছর পূর্বে ভারতের কুম্ভমেলা অনুকরণে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ীতে শ্রী শ্রী গণেশ পাগলের আশ্রমে এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলার আয়োজন কমিটি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর এক রাতের মেলা হলেও এবার চলবে ৩ দিন। শনিবার পর্যন্ত ৩ দিনের বিশেষ কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে শ্রীমদ্ভগবদ গীতা পাঠ, আলোচনা সভা, ১৩ টি মন্দির গেটে দেব দেবীদের পুজা, গণেশ পাগলের পূজা, আরতি, প্রার্থণা, প্রতিমা দর্শন, ভজন সঙ্গীত, পদাবলী কীর্ত্তন, বাউল সংগিত, নাটক, যজ্ঞানুষ্ঠান, প্রসাদ বিতরণ, পবিত্র স্নান ও নর-নারায়ন সেবা। এছাড়াও মঙ্গলবার বিকেলে সাবেক নৌপরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খানসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা মেলা পরিদর্শণ করবেন বলে মেলা কমিটি জানান ।