আত্রাইয়ে লটারিতে কপাল পুড়ল কৃষকের

অর্থনীতি এইমাত্র বানিজ্য সারাদেশ

নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: নওগাঁর আত্রাইয়ে লটারির মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমুল্যে খাদ্যশষ্য (গম ও ধান) সংগ্রহ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের ভবানীপুর জিএস উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে উন্মুক্ত লটারির লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা খাদ্যশষ্য সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছানাউল ইসলামের সভাপতিত্বে এ লটারির ব্যবস্থা করা হয়। তবে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করায় একদিকে যেমন কৃষকদের কপাল পুড়ল, অপরদিকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ও ভোগান্তী থেকে কিছুটা রক্ষা পেয়েছে কৃষক এবং গুদাম কর্তৃপক্ষ।


বিজ্ঞাপন

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ মুর্শেদ মিশু, উপজেলা কৃষি অফিসার কেএম কাউছার হোসেন, আত্রাই থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোবারক হোসেন, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নুরুন্নবী, খাদ্য গোডাউন এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরুজ্জামান, ১নং শাহাগোলা ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বাবু, শাহাগোলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, ইউপি সদস্য মোসলেম উদ্দিন, আব্দুল মজিদ মল্লিক, আব্দুল মান্নান, কৃষি ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিকসহ বেশ কিছু চাষি উপস্থিত ছিলেন।


বিজ্ঞাপন

আত্রাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে অভ্যন্তরীণ ভাবে ২৬ টাকা কেজি দরে ৬১৭ মেট্রিক টন বোরো ধান সংগ্রহ করা হবে। কার্ডধারী ৬১৭ জন কৃষকের কাছ ধান ক্রয় করা হবে। আটটি ইউনিয়নে কৃষকদের কৃষি কার্ডের ভিত্তিত্বে লটারির মাধ্যমে বিভাজন করা হয়েছে। এরমধ্যে শাহাগোলাতে ৫১ জন, আহসানগঞ্জে ৯০ জন, মনিয়ারীতে ১৩৮ জন, পাঁচুপুরে ৫৯ জন, ভোঁপাড়ায় ৭২জন, হাট-কালুপাড়ায় ৫২ জন, কালিকাপুরে ৫৬ জন, বিশা ইউনিয়নে ৯৯ জন।

কৃষকরা বলছেন, এবছর ধানের ফলন কম। কিন্তু ধান উৎপাদন ও শ্রমিক খরচ বেশি। অপরদিকে বাজারে ধানের দাম কম। প্রতিমণ ধান উৎপাদন করতে যেখানে প্রায় সাড়ে ৮শ টাকা খরচ হয়েছে। সেখানে বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা মন। প্রতিমন ধানে প্রায় ৩শ টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। আবার সরকার ধান কিনছেন পরিমাণে কম। উপজেলা পর্যায়ে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা পর্যান্ত নয়। তাই লটারির মাধ্যমে ধান কেনায় কৃষকদের কপাল পুড়ছে। বলতে গেলে ধানের আবাদ করেই কৃষকদের কপাল পুড়েছে।

আত্রাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নুরুন্নবী বলেন, এ উপজেলায় প্রায় ১৮ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এখানে আটটি ইউনিয়নে কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা প্রায় ৩৭ হাজার জন। চলতি মৌসুমে বোরো সংগ্রহ ২০১৮-২০১৯ মৌসুমে অভ্যন্তরীণ ভাবে ২৬ টাকা কেজি দরে ৬১৭ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তালিকাভুক্ত চাষীদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে ৫১ জনের নাম নির্বাচন করা হয়। বুধবার পর্যন্ত ১১ মেট্রিকটন ধান কেনা হয়েছে। ঈদ পরবর্তী সময়ে বাঁকী ইউনিয়নগুলোতে লটারির মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে। লটারি ছাড়া ধান কেনা হলে হুমড়ি খেয়ে সবাই গুদামে ধান নিয়ে আসতে। ধানের গুনগত মানের কারণে আবার অনেককে ফেরত নিয়ে যেতে হতো। এতে করে কৃষকদের ভোগান্তী পোহাতে হতো। লটারির মাধ্যমে ধান কেনায় কৃষকরা তাদের ধান ভাল করে শুকিয়ে ও পরিস্কার করে ধীরস্থির ভাবে গুদামে নিয়ে আসতে পারবেন।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ছানাউল ইসলাম বলেন, স্থানীয় ভাবে কৃষকদের সাথে সমন্বয় করে লটারির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এতে করে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভবনা থাকবে না। কারণ ‘আগে আসলে, আগে ধান কেনা হবে’ এমন পদ্ধতি চালু থাকলে বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা গুদামে ধান দিতে পারতেন না। আশপাশে যেসব কৃষক আছেন তারাই গুদামে ধান সরবরাহ করতেন। এতে করে অনেক কৃষকই বঞ্চিত হতেন।
তিনি আরো বলেন, মধ্যস্ত¡ভোগীরা অতপেতে ছিল। তারা কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি কার্ড নিয়ে গুদামে নিজেদের ধান সরবরাহ করতেন। এতে করে কৃষকরা বঞ্চিত ও প্রতারিত হতেন। সেখান থেকে কৃষকরা কিছুটা হলেও স্বচ্ছতার ভিত্তিত্বে গুদামে ধান দিতে পারবেন। তবে পরবতির্তে বরাদ্দ বাড়ানোর কোন সুযোগ নাই বলে জানান তিনি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *