উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে পাশে আছে জাপান

অন্যান্য অর্থনীতি আন্তর্জাতিক এইমাত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে শিনজোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং দেশটির সঙ্গে ২৫০ কোটি ডলারের উন্নয়ন সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাপান বাংলাদেশের জনগণের হৃদয়ে এক বিশেষ জায়গা দখল করে আছে।
বুধবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে শিনজোর কার্যালয়ে এ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও চুক্তি সই হয়। এরপর আবের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দেন শেখ হাসিনা।
বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে জাপান যে পর্যায়ের আন্তরিকতা দেখিয়ে আসছে সেটা সত্যিই অবিস্মরণীয়। আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং উন্নয়নের যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিলেন, তার পেছনে বড় অনুপ্রেরণায় ছিল জাপানের উন্নয়ন ইতিহাস। স্বাধীনতালাভের ৪৮ বছর পরে এসে আমরা এখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, জাতির জনকের সেই স্বপ্নপূরণে আমরা সঠিক পথেই এগোচ্ছি। আর এক্ষেত্রে আমরা সবসময়ই জাপানকে পাশে পেয়ে আসছি।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আলোচনার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ সরকারপ্রধান বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবে ও আমি আজ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সব পরিসর নিয়ে আলোচন করেছি এবং আমাদের দু’দেশের সহযোগিতার পর্যায় দৃঢ় ও জোরদার করতে কিছু নতুন ধারণায় একমত হয়েছি।
উন্নত দেশ গঠনের স্বপ্নে সরকারের অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নত হওয়ার সব মানদ-ে উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। এই লক্ষ্য অর্জনে জাপান সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী আবে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে শিনজোর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়দু’পক্ষই লাভবান হতে পারে এমন সম্ভাব্য সব সহযোগিতার ক্ষেত্র উন্মোচনের ব্যাপারে আলোচনায় মতৈক্য হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আলোচনার বড় অংশজুড়ে ছিল আঞ্চলিক যোগাযোগ জোরদার করা, যার মাধ্যমে অংশীদার দেশগুলোর সব সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায়। কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভৌত অবকাঠামো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী আবে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে জাপান তার সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে উন্নয়নের গুরুত্ব বিবেচনায় আমরা ওই অঞ্চলে মানসম্মত অবকাঠামো গড়ে তোলার উপায় নিয়েও আলাপ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার ক্ষেত্রে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রবাহ প্রধান উপায়।
দআঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি বজায় রাখার ওপরও আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি আলোচনায়। সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট ঝুঁকি কমানো, আমাদের সন্তানদের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিতকরণ এবং সর্বোপরি শান্তির জন্য এবং জ্ঞানের দিগন্ত উন্মোচনে পরস্পরের প্রচেষ্টাকে সহায়তার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক পরিসরে পারস্পরিক সহযোগিতাকে দৃঢ় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বৈঠকের পর উন্নয়ন সহায়তা চুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণে উন্নয়ন সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেছি। এই ঋণ প্যাকেজের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী আবেকে ধন্যবাদ জানাই। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাপানের সহায়তার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার থেকে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসার ফলে যে মানবিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, তার দীর্ঘস্থায়ী ও দ্রুত সমাধান পেতে প্রধানমন্ত্রী আবে এবং আমি আলোচনা করেছি। জাপান এটা অনুধাবন করেছে যে এই সংকটের সমাধান বাস্তুচ্যুত মানুষগুলোর স্বদেশ মিয়ানমারে শিগগির নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে প্রত্যাবর্তনের মধ্যেই রয়েছে এবং সেজন্য মিয়ানমারেরই উচিত রাখাইনে এমন সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা। এই সংকট সামলাতে এবং বাস্তুচ্যুত মানুষগুলোর স্বদেশে প্রত্যাবাসনে জাপান সরকারের উদার সহায়তার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই।
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার সম্পর্ককে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নিজেদের প্রতিশ্রুতির ওপরও জোর দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *