নিজস্ব প্রতিনিধি : সময়টা ছিল যুদ্ধমুখর। কয়েক দশক ধরেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রাম চলছিল। একদিকে কমিউনিস্টদের বিপ্লব চলছিল, অন্যদিকে মুক্তির জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী যুদ্ধে লিপ্ত ছিল বিশ্বের বেশ কয়েকটি রণাঙ্গণ। তবে, বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রাম ছিল অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের স্বাধীনতার এই যুদ্ধ ছিল সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের একমাত্র জাতীয় নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছিল এই যুদ্ধে। দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী তথা বাঙালি জাতির দীর্ঘকালের সংগ্রামের চূড়ান্ত পরিণতি হলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ।
দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা শেখ মুজিবুর রহমান মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য যে সংগ্রামের সূচনা করেন, সেটাকে ক্রমেই এগিয়ে নিয়ে যান স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনে। দেড় যুগের বেশি সময় নিয়ে জাতির মনন প্রস্তুতের পর ঘোষণা করেন ‘বাঙালির বাঁচার দাবি’ ছয় দফা। জনগণের তুমুল অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যেতে থাকেন নেতা। পাকিস্তানি শোষক ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বহুমুখী ষড়যন্ত্র, মামলা, জেল-জুলুম মোকাবিলা করে নির্বাচনে একচ্ছত্র সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেন। এরপর ১৯৭১ সালের শুরু থেকেই জোরদার করেন গণতান্ত্রিক আন্দোলন। সাত কোটি বাঙালি প্রত্যেকে পরিণত হয় একেকটি আদমবোমায়। মার্চের শুরুতেই দেশের একক নিয়ন্ত্রণ চলে আসে বঙ্গবন্ধুর হাতে। প্রত্যেক দিন নতুন নতুন নির্দেশনা দিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য জাতিকে গড়ে তোলেন তিনি। এরপর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদাররা ঘুমন্ত বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বাংলাদেশের। শোষণের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলে, সেই থেকে আমরা বিশ্বের বুকে বীরের জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করি।