গাড়িতে অগ্নিসংযোগ : গ্রেফতার ৬
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর দক্ষিণখান থানার আইনুসবাগ চাঁদনগর এলাকায় আব্দুর রশিদ (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। ময়না তদন্তের জন্য তার লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন আমিনুল ইসলাম হান্নান ওরফে জাপানি হান্নানের একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছেন।
ঘটনার পর পুলিশ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা হিসেবে পরিচিত আমিনুর ইসরাম হান্নান ওরফে জাপানি হান্নানসহ ছয়জনকে আটক করেছে। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আবদুর রশিদের বাসার সামনে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, নিহত আবদুর রশিদ দক্ষিণখান আইনুসবাগ এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে। তিনি এলাকায় রড-সিমেন্টের ব্যবসা করতেন। আর হান্নান বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আর জাপান-বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থার মহাসচিব। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর অন্তবর্তীকালীন নির্বাচনের সময় হান্নান ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেছিলেন। এলাকার ময়লা অপসারণের ব্যবসাসহ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ী হান্নানের সঙ্গে আব্দুল রশিদের বিরোধ চলে আসছিল। আর সেই বিরোধের জেরেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
এঘটনার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নানের সঙ্গে আব্দুর রশিদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। আর সেই বিরোধের জের ধরেই আবদুর রশিদের বাসার সামনে হান্নানের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি ও একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে হান্নান তার বাসা থেকে শর্টগান নিয়ে এসে আব্দুর রশিদকে লক্ষ্য করে একাধিক গুলি করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে আশপাশের বাসিন্দারা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় কেসি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকগণ তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার মৃত্যুর সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় ক্ষুব্ধ লোকজন হান্নানের বাড়ির সামনে তার ব্যক্তিগত গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পুলিশ জানায়, গোলাগুলির ঘটনার ঘটনার পর হান্নানের বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে একটি শটগান ও একটি পিস্তল উদ্ধার করে। এগুলো লাইসেন্স করা কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আবদুর রশিদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদকে গুলি করে হত্যার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে আসেন আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম হান্নান ওরফে জাপানি হান্নান। বুধবার বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে নিজের আইডি থেকে লাইভে আসেন তিনি। তবে লাইভে তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। তার পক্ষে তার মেয়ে লাইভটি করেন। পেছন থেকে তার মেয়েকে নির্দেশনা দিতে জাপানি হান্নানকে দেখা গেছে।
দক্ষিণখান থানাধীন আশকোনায় ময়লার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র করে সকালে আওয়ামী লীগ নেতা জাপানি হান্নান ও সোহেল রেজা গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। আগুনে পুড়ে যাওয়া গাড়িটি জাপানি হান্নানের বলে তার মেয়েকে ওই লাইভ ভিডিওতে বলছেন। আর আগুন নেভাতে ও হামলাকারীদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের সহায়তা চাইতে দেখা গেছে ভিডিওতে।
লাইভে জাপানি হান্নান তার মেয়েকে বলছেন, ‘আমাদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। গাড়িতে আগুন দিয়েছে। বাড়িতে আগুন লাগানোর চেষ্টা চলছে।’ এরপর বাবার নির্দেশনা অনুযায়ী পরিস্থিতির বর্ণনা করেন তার মেয়ে। আর যে শর্টগান দিয়ে ব্যবসায়ী রশিদকে গুলি করা হয়েছে লাইভের সময় সেটি বাসার ডাইনিং টেবিলের ওপর রাখা ছিল।
এ ঘটনায় দক্ষিণখান থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে থানার ডিউটি অফিসার সহকারি পরিদর্শক (এসআই) নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন।