নিজস্ব প্রতিনিধি : ২৫ মার্চ ১৯৭১ এর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের তৎকালীন আবাসিক ছাত্র হরিধন দাসের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ননাঃ
তখন রাত প্রায় ১২টা। পাকিস্তানিরা সেই সময়ে প্রথম ব্রাশফায়ার করে জগন্নাথ হলের ওপর। আমার এই কক্ষ, ২৯ নম্বর কক্ষে আমি তাড়াতাড়ি প্রবেশ করি তখন। এই কক্ষে সেই সময়ে আমার দুই বন্ধু ছিল। একজন সুশীল দাস, অন্যজনের নাম আমি এখন মনে করতে পারছি না। চারিদিকে তখন এত বিস্ম্ফোরণ এবং মেশিনগানের আওয়াজ হচ্ছিল যে, কানের কাছে মুখ নিয়ে কথা বললেও কিছু শোনা যাচ্ছিল না। সে জন্য আমরা তিনজন ফ্লোরে এই জায়গাটাতে কোনোমতে বসি এবং হাতের ওপর হাত রেখে একজন অন্যজনকে প্রায় আঁকড়ে ধরি। তখন আমরা বুঝতে পারলাম যে, আমাদের শেষ-সময় এগিয়ে আসছে। আমরা একে অপরের হাত স্পর্শ করে বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। আমি এখান (কামরার মাঝখান) থেকে উঠে ঠিক এখানে (কামরার দরজার কোনায়) অবস্থান নিলাম। আমার বাকি বন্ধুরা অন্ধকারে ঠিক কোথায় ছিল, সেটা আমি জানি না; বলতে পারি না। এটা কয়েক মুহূর্তের ব্যাপার মাত্র। পাকিস্তানি আর্মিরা এর মাঝেই লাথি দিয়ে আমাদের রুমের দরজা ভেঙে ফেলে। ঠিক তখনি আমাদের কামরার ভেতরে তারা স্টেনগান থেকে ব্রাশফায়ার করে। ফায়ারিং শেষ হলে পাকিস্তানিরা একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে রুমের ভেতর; যদি কেউ ব্রাশফায়ারের মাঝেও বেঁচে যায়, তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য। পাকিস্তানিদের ছুড়ে দেওয়া গ্রেনেডটি প্রচণ্ড শব্দে বিস্ম্ফোরিত হয়। গ্রেনেড চার্জ করেই একটি পেন্সিল টর্চের সাহায্যে তারা ভেতরে দেখল- এর পরও কেউ বেঁচে আছে কিনা। কাময়ায় দু’জনের মৃতদেহ দেখে টিটকারির সুরে বলল- ‘বাতাও জয় বাংলা…!’ এই বলে কদর্য ভাষায় কিছু গালাগাল করে ওরা চলে গেল অন্য কামরার দিকে। আমি উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু দাঁড়াতে পারছি না। এর পর ভাঙা দরজার একটি অংশকে সাপোর্ট করে যখন উঠে দাঁড়ালাম, তখন বুঝতে পারলাম, গ্রেনেডের আঘাতে আমার বাম পা-টা হয় দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, না হয় মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে…।”