নিজস্ব প্রতিনিধি : “মুজিববর্ষের শপথ, নিরাপদ রবে নৌপথ” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ থেকে শুরু হয়েছে নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ-২০২১। ৭-১৩ এপ্রিল দেশে নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ-২০২১ পালিত হবে। আজ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ-২০২১’ এর উদ্বোধন করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে ‘নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ-২০২১’ এর উদ্বোধন করেন।
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর এ জেড এম জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি (ভার্চুয়ালি) এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম (ভার্চুয়ালি), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক (ভার্চুয়ালি), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুল আলম চৌধুরী (ভার্চুয়ালি) বক্তব্য রাখেন।
অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল নিরাপত্তা, নির্বিঘœ ও নিরবচ্ছিন্ন করাসহ যাত্রীসেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নৌপরিবহনমন্ত্রণালয়েরআওতাধীন নৌপরিবহন অধিদপ্তর প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিপাদ্য ‘মুজিব বর্ষের শপথ, নিরাপদ রবে নৌপথ’ অত্যন্ত প্রাসঙ্গকি এবং সময় উপযোগী । আমাদের অনেক ইচ্ছা ছিল মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী নিয়ে; কিন্তু আমরা পারিনি। আমরা উন্নয়শীল দেশ হয়েছি, দারিদ্রের হার ২০.৫% হ্রাস পেয়েছে, খাদ্যশষ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। নদীমাতৃক বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত থেকে উত্তরণে নৌরিবহনের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের এ অর্জনকে সুসংহত ও টেকসই করতে হবে।
নৌ দুর্ঘটনা কমে আসছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, অন্যান্য পরিবহনের তুলনায় নৌপথ সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ বান্ধব। দুর্ঘটনা মুক্ত নদীপথ গড়ে তোলা নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান দায়িত্ব। যথাক্রমে আমাদের নৌদুঘর্টনাগুলো হ্রাস পাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে নৌযানের ডিজাইন, নৌপথ নিরাপদ করার জন্য যা করণীয় তা করা হচ্ছে । আপনাদের যথেষ্ট তৎপরতা আছে বলেই আমার মনে হয় এগুলো কমেছে। প্রতিবছর যখনই কোন ছুটি আসে তখন আমরা দেখতাম একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটতো। সেগুলো একদম চলে গেছে বলবোনা, হ্রাস পেয়েছে। সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপের কারণে নৌখাত দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে, যেভাবে আমরা অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছি সেভাবে নৌখাতও এগিয়ে চলছে।
মন্ত্রী নৌখাতের আরো উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহবাণ জানান। কালবৈশাখী ঝড়ের সময়ে নদীপথে জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হওয়ার আহবান জানান মন্ত্রী। যাত্রীসাধারণের প্রতি সতর্কতার সাথে চলার অনুরোধ জানান। তিনি সাবধান করে বলেন, এ ধরণের দুর্ঘটনা যেন না ঘটে। নৌপথ দেশের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি হিসেবে রয়েছে। নৌপথে সংরক্ষণ কেবল সৌন্দর্য নয়; দেশের অর্থনীতি বিকাশেরও ধারা।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আগের চেয়ে নৌপথ এখন অনেক বেশি নিরাপদ এবং পরিবেশ বান্ধব। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, বিশেষ করে নৌযান মালিক ও শ্রমিকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা, বিআইডাব্লিউটিএ, নৌপরিবহন অধিদপ্তর, নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ড কর্মকর্তাদের পদক্ষেপ এবং জনসাধারণের সচেতনতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধির ফলে যাত্রীবাহী নৌযানের দুর্ঘটনা অনেক কমে এসেছে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার নৌ সেক্টরের উন্নয়নের লক্ষ্যে নৌপথের সংরক্ষণ ও নৌপরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের সকল নদীকে দখলমুক্ত করা এবং নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে নদীসমূহকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে এবং পাশাপাশি নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে সামাজিক ভাবেও সোচ্চার ও কঠোর হতে হবে । এক্ষেত্রে বর্তমান সরকার “জিরো টলারেন্স নীতি” গ্রহণ করেছে। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। দেশের ভাবমূর্তি ও উন্নয়ন সমুজ্জ্বল রাখার জন্য নিরাপদ এবং দুর্ঘটনামুক্ত নৌ চলাচল ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়াসে আমরা সকলেই যে যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাব।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই পঞ্চাশের দশক থেকে নদী ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ভাবতেন। তিনি সদ্য স্বাধীন মাতৃভূমির শাসনভার হাতে নিয়েই নদীমাতৃক বাংলাদেশের নৌচলাচল ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নৌপথের পলি অপসারন ও নদী খননের জন্য স্বাধীন দেশে ৭টি ড্রেজার আমদানির মতো সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নদীর প্রতি তার ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণের দ্বারপ্রান্তে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হতে চলেছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় নৌ শিল্পের বিকাশ তথা নৌপথের উন্নয়নে বর্তমান সরকার বাজেটে প্রচুর অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে এবং নিরাপদ নৌযান নির্মাণ ও নৌযানে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করে নৌপথের যাত্রীদের মধ্যে আমরা আস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। মানসম্মত নৌযান নির্মাণ ও মেরামতের জন্য ডকইয়ার্ড নীতিমালা প্রণয়ন ও অভ্যন্তরীণ জাহাজে রিভারসিবল গিয়ার সংযোজন করে দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস করা হয়েছে।