নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদযাত্রায় পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এবার ভাড়া বেশি আদায় হয়েছে, সেটা আমরা জানি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি। গতকাল সোমবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। সড়ক পরিবহন আইন সংসদে পাশ হওয়ার পরেও তা কার্যকর হয়নি, এমন অভিযোগের ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা দেখেছেন তারা (পরিবহন শ্রমিক) কী পরিমাণ আন্দোলন করেছিল, জনগণকে জিম্মি করেছিল। তারা কিছু দাবি পেশ করেছে, আমরা সেগুলো সমন্বয় করার চেষ্টা করছি। ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের আন্দোলন রাতারাতি বন্ধ করা যায় না। এখাতের সঙ্গে আরো অনেক কিছু সংশ্লিষ্ট রয়েছে। শ্রমিকরা ভিন্নমতের ছিলো না। তারা ঐক্যবদ্ধ ছিলো। প্রাথমিকভাবে যুক্তিতর্ক দিয়ে সমাধান করতে দেরি হয়ে গেছে। এটা হয়েছে আমার দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির কারণে। এখন এ বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এআইনের সঙ্গে নতুন কোনোকিছু যোগ করা যায় কিনা। তিনি বলেন, পরিবহন খাতের কাছে সরকার জিম্মি হয়নি। পরিবহন খাতে জনস্বার্থ যাতে জিম্মি না হয়, সে বিষয় সবার সহযোগিতা চেয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। কাদের বলেন, এবার সড়ক পরিবহনে দুর্ঘটনার চেয়ে মৃত্যুর হার বেশি ছিল। এবার দুর্ঘটনা হয়েছে ৬৬টি, কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। মূলত ইজিবাইক-সিএনজিচালিত অটোরিকশার কারণেই দুর্ঘটনা বেশি হয়। আর এসব দুর্ঘটনায় গাড়িতে থাকা সবাই মারা যায়। লং রুটে ড্রাইভিং ও রাস্তার পাশে যানবাহন রাখায় দুর্ঘটনাও দুর্ভোগ হয়। তিনি বলেন, এবার রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি ছিলো। চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়ে সন্তোষজনক অবস্থানে যেতে পারিনি। বিআরটিএ এবার ২৫৫টি মামলা করেছে। এর বিপরীতে ৫ লাখ ২০০ টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে। এ ছাড়া টাঙ্গাইল রুটে যানজট হয়েছে। এর অন্যতম কারণ লং রুটের গাড়ি ও রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে হোটেলে খাবার খাওয়ার প্রবণতা। এর বাইরে এবারের ঈদে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সড়কে ইজিবাইক নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইজিবাইক-সিএনজি বন্ধ করতে হলে আমাদের বিকল্প পথে যেতে হবে। কারণ যারা এসব যানবাহন চালান তারা গরিব মানুষ। আর যারা গাড়িতে চলাচল করে তারা বাধ্য হয়েই করেন। কারণ ঐসব স্থানে যানবাহনের সংকটের কারণে এসব যানবাহনেই চলাচল করতে হয়। আমরা এগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। তবে হাইওয়েতে ইজিবাইক-সিএনজি চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। সবকিছু বিবেচনা করেই ইজিবাইক বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। পরিবহন খাতে শৃঙ্খলার অভাব রয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সড়কে শৃঙ্খলার সংকট রয়েছে। বেপরোয়া গাড়ি চালক ও বেপরোয়া যাত্রীর জন্য বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এজন্য মিটিং ডাকছি স্বল্প, মধ্য, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া হবে। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে না পারলে কোনো পরিকল্পনা কাজে আসবে না। এজন্য শুধু পরিকাঠামো পরিবর্তন করলে হবে না। জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। আশা করছি আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারবো। রাজধানীতে রাইড শেয়ারিং বিষয়ে তিনি বলেন, দেশে উবার, পাঠাও-এর মতো ২০ থেকে ২২টি কোম্পানি রাইড শেয়ারিং রয়েছে। রাইড শেয়ারিংয়ের কারণে পরিবহন খাতে অনেকটা সংকট নিরসন হয়েছে। অটোরিকশায় ভাড়া বেশি নেওয়ার বা জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। রাইড শেয়ারিং নিয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। কোনো ধরনের জালিয়াতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামি এক মাসের মধ্যে রাইড শেয়ারিংয়ের নীতিমালা করা হবে বলেও জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বিএনপির নেতারা নিজ নিজ এলাকায় যেতে পারছেন না এমন অভিযোগের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আমার এলাকার নেতা (মওদুদ আহমেদ) এলাকায় গিয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে গোসল করেছেন। ওই ছবি ভাইরাল হয়েছে। যদি এলাকায় যেতে না পারতেন, তাহলে তিনি গোসল করলেন কিভাবে? উনিই সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করছেন। বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য শপথ নিয়ে রুমিন ফারহানা যে একাদশ সংসদকে অবৈধ বলেছেন, সেই সংসদেই তার যোগ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ওবায়দুল কাদের। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, সংসদ যদি অবৈধ হয়, তিনি অবৈধ সংসদের অবৈধ সাংসদ কিনা? সেটা বলুন। যে সংসদ অবৈধ সে সংসদের সদস্য হওয়ার জন্য এত সিরিয়াস হলেন কেন? সংসদ অবৈধ হলে তিনি কি বৈধ? তাহলে কোন বৈধতার সূত্রে তিনি কথা বলবেন? সংসদ সদস্য হিসেবে গত রোববার শপথ নেওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় রুমিন ফারহানা বলেন, এই সংসদটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। খুব খুশি হব, আমার সাংসদ হওয়ার মেয়াদ একদিনের বেশি না হলে। আমি চাই যেন অতিদ্রুত একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠিত হয়। একাদশ সংসদকে অবৈধ বলে তার সদস্য হিসেবে কেন শপথ নিলেন তার ব্যাখ্যায় রুমিন জাতীয় সংসদকে ‘গণতান্ত্রিক স্পেস’ উল্লেখ করে সেখানে দল, দেশ ও মানুষের কথা বলার জন্য তার সংসদে যোগ দেওয়া বলে জানান। একাদশ সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪৩ জন, জাতীয় পার্টির চার জন, ওয়ার্কার্স পার্টির একজন এবং স্বতন্ত্র জোটের একজন রয়েছেন। একাদশ নির্বাচনে জয়ী বিএনপির ছয়জনের মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল বাদে বাকিরা আগেই সাংসদ হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, সংসদ নিয়ে বিএনপির স্ববিরোধীতা পরিষ্কার। পার্টির মহাসচিব নির্বাচিত হয়েও শপথ নিলেন না, তার জায়গায় আবার বিএনপির জেলা সভাপতি নির্বাচন করছেন। এই নীতি নিয়ে যারা চলেন তারা আন্দোলনে অতীতেও ব্যর্থ হয়েছেন, আগামীতে ব্যর্থ হবেন। নির্বাচনের সময় ‘রাজনীতির পরিবেশ’ না থাকায় বিএনপি নেতারা এলাকায় যেতে পারেননি বলে যে অভিযোগ করেন, সে বিষয়ে কাদের বলেন, এসব ব্যাপরে সবেচেয়ে বেশি অভিযোগ করেন করেন মওদুদ আহমেদ। তিনি তো এলাকায় ছিলেন। তিনি কি কোনো অভিযোগ করেছেন? এবার এ রকম কোনো পরিবেশগত সমস্যা কোথাও ছিল না। এটা বিরোধীদলের একটা সুবিধা- তাদের ইচ্ছে হলেই তারা যান না, আর পরিবেশের অভিযোগ তোলেন।
পরোয়ানা মাথায় নিয়ে লাপাত্তা ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে খুঁজে বের করতে ‘চেষ্টার কোনো ক্রটি হচ্ছে না’ বলে মন্তব্য করে কাদের বলেন, খুব শিগগিরই হয়ত শুনবেন ধরা পড়েছে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফেনীতে হত্যাকা-ের শিকার মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানোয় অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলার আসামি সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনাল পুলিশের এই পরিদর্শকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও তা তামিল নিয়ে ফেনী ও রংপুর পুলিশের মধ্যে চলছে ঠেলাঠেলি। ফলে পুলিশ বাহিনী তাদের কর্মকর্তা মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতারে আদৌ আন্তরিক কি না- সেই প্রশ্ন তুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। এই প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গত রোববার সাংবাদিকদের বলেন, যদি কেউ পলাতক হয়ে যায়, একটু সময় তো লাগবে তাকে খুঁজতে। সাংবাদিকরা গতকাল সোমবার এ বিষয়ে সেতুমন্ত্রী কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনিও একই সুরে কথা বলেন। ওসিকে গ্রেফতার করতে না পারায় সরকারের ব্যর্থতা আছে কিনা- এই প্রশ্নে কাদের বলেন, অ্যারেস্ট দেখুন একটা লোক পলাতক হলে তাকে অ্যারেস্ট করা কষ্টকরই হয়। তবে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টার কোনো ক্রটি হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়- দে আর ভেরি সিরিয়াস। মোয়াজ্জেমের গ্রেফতার না হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক কোনো প্রভাব কাজ করেছে কি না- সেই প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার তা মনে হয় না। এ বিষয়টা নিয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে এবং প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে খুব সিরিয়াস। সোনাগাজী আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট এ মামলায় কারাগারে আছে, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার গাফিলতি, কোনো প্রকার দুর্বলতা নেই। গত মার্চ মাসে নুসরাত জাহান রাফি তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করার পর তার তদন্তে তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম সোনাগাজী থানায় ডেকে নিয়ে ওই মাদ্রাসাছাত্রীর জবানবন্দি নিয়েছিলেন। তার কয়েক দিনের মাথায় নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগ করা হলে তা নিয়ে সারাদেশে আলোচনার মধ্যে ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যুর পর গত ১৫ এপ্রিল ওই ভিডিও ছড়ানোর জন্য ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ওই ঘটনার তদন্ত করে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানালে গত ২৭ মে পুলিশ পরিদর্শক মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনাল। নুসরাতের মৃত্যুর পর মোয়াজ্জেমকে সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার করে রংপুর রেঞ্জে পাঠান হয়। কিন্তু সেখানেও তিনি এখন নেই। ঈদের আগে মোয়াজ্জেম হোসেনের একটি আগাম জামিনের আবেদন হাই কোর্টে জমা পড়লেও সেই শুনানি এখনও হয়নি। ফলে আদালতেও তাকে দেখা যায়নি।