নিজস্ব প্রতিবেদক : এক সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ ভাগ্নের সন্ধান চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ।
রাজধানীর সেগুনবাগিচার ডিআরইউ’র সাগর-রুনি মিলনায়তনে সোমবার দুপুরে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সোহেল তাজ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। কোনোভাবেই এ অবস্থা আমরা আশা করতে পারি না; কোনো নাগরিক গুম কিংবা অপহৃত হোক। কার কী পরিচয় তা মুখ্য বিষয় নয়। এ ধরনের ঘটনা কারও জন্য কাম্য নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। আশা করছি ভাগ্নেকে ফিরে পাব।
গত ৯ জুন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে ভাগ্নে সৈয়দ ইফতেখার আলম ওরফে সৌরভ অপহৃত হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে সৌরভকে অপহরণ করা হয় বলে ওই দিন রাতে তার বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ ইদ্রিস আলম পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এর আগে শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে তার ভাগ্নেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিখোঁজের মা সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান ও বাবা মো. ইদ্রিস আলম।
লিখিত বক্তব্যে সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান বলেন, ‘আমি একজন মা হিসেবে আমার হারানো ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি আমার ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে সৌরভের তৈরি সিনেমা ‘‘বেঙ্গলী বিউটি’’ দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করে। সে সময় সওদা নামে এক মেয়ের সঙ্গে পরিচয় ও যোগাযোগ শুরু হয়। পর্দাশীল পরিবারের সদস্য সওদা মোবাইল ফোনেই বিবাহ সম্পন্ন করার প্রস্তাব দেয়। তাতে রাজি না হলে নিজের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এর মধ্যে সওদার অমতে পরিবার সওদাকে অন্যত্র বিয়ে দেয়। তবে সে বিয়ে ২০১৮ সালেই ভেঙে যায়। এরপর থেকে সওদার বাবা আজাদ চৌধুরী আমার ছেলেকে দোষারোপ করে এবং আমার ছেলেকে ও আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এরই জেরে ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সৌরভকে উত্তরা র্যাব সদর দফতরে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও ভয়ভীতি দেখানো হয়। মোবাইলের সব ডাটা ডিলেট করে সেখানেও সওদার ব্যাপারে তথ্য জানতে চাওয়া হয়। সৌরভের মা আরও জানান, ১২ ফেব্রুয়ারি বনানী থানায় ওসি সৌরভকে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। এক সপ্তাহ পর এনএসআইয়ের দুই কর্মকর্তার সঙ্গে এক রেস্টুরেন্টে বৈঠক হয়। সেখানে সৌরভের ঘটনা তদন্ত করার কথা জানানো হয়। সেখানেও সওদার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। কোন কোন দেশ ঘুরেছে সৌরভ তা জানতে চায়। পরে তারা প্রাপ্ত তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানোর কথা বলে চলে যায়।
২০১৮ সালের ১৬ মে বনানীর বন্ধুর বাসা থেকে ডিজিএফআই ও র্যাব পরিচয়ে একদল লোক সৌরভকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর গত ১৭ মে রাত পৌনে ১২টায় একই কায়দায় ফেরত দিয়ে যায়। এ দীর্ঘ সময় তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সওদা-সংক্রান্ত।
তিনি আরও বলেন, ‘র্যাব জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে চাকরির প্রলোভন দেখায়। কাগজপত্র চায়। এরপর গত ৮ জুন দুপুরে ১১-১২টার দিকে র্যাব ফোন করে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রেডি করতে বলে। এরপর বিকেল ৩টার দিকে সৌরভকে চট্টগ্রাম মিমি সুপার মার্কেটের আগোরার সামনে থেকে তুলে নেয়া হয়। এরপর আর ফিরে আসেনি সৌরভ। আমরা সৌরভকে ফিরে পেতে চাই।
যার মামা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তার ক্ষেত্রে যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে অন্য সাধারণ নাগরিকের ক্ষেত্রে কী হতে পারে? এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল তাজ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা আশা করব না অন্য কোনো নাগরিকের ক্ষেত্রে এমন কিছু হোক। আজকে আমার ভাগ্নে, কালকে হয় তো আপনার ভাই হতে পারে। আরেক দিন হয়তো আপনার সন্তান হতে পারে। এটা আমাদের কারও কাম্য নয়। কার কী পরিচয় সেটা মুখ্য বিষয় নয়, আমার কী পরিচয় তাও মুখ্য বিষয় নয়। এখানে আইনের শাসনে রাষ্ট্র চলবে। ন্যায়বিচার সুবিচারের রাষ্ট্রে এ রকমটা হওয়া বা এমন পরিণতির শিকার হওয়া কাম্য নয়।’
অপহরণকারীরা কী প্রভাবশালী, তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে- এমন প্রশ্নে সোহেল তাজ বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, লোকাল পুলিশ যোগাযোগ করছে। রাষ্ট্রীয় সংস্থার কর্মকর্তার নম্বর থেকে কল গেছে সৌরভের ফোনে। সেটা আমরা জানতে পেরেছি। এ অবস্থায় আমাদের একটাই লক্ষ্য আমাদের ছেলেকে ফিরে পাওয়া। ৮ দিন হয়ে গেছে। সৌরভকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় আছি।’