হু হু করে পানি ঢুকছে লোকালয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক : ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে গত রাত থেকেই দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। উত্তাল হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগরসহ উপকূলীয় এলাকার নদ-নদী। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কয়েক ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উপকূল সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাটে পানি উঠছে। পানিবন্দি হয়ে পড়ছে হাজার হাজার মানুষ।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাঠানো প্রতিনিধিদের তথ্যে রিপোর্ট:
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াসের’ প্রভাবে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি উচ্চতায় উঠে উপকূলে আছড়ে পড়ছে। বাগেরহাটে ইয়াসের প্রভাবে মঙ্গলবার সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্নসহ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। সকাল থেকেই শরণখোলার বলেশ্বর, মোরেলগঞ্জের পানগুছি, মোংলার পশুর, বাগেরহাটের ভৈরব, দড়াটানাসহ সব নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে এক থেকে দেড় ফুট বেড়েছে।
এরই মধ্যে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে মোরেলগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকাসহ সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম। মোরেলগঞ্জ উপজেলার পানগুছি নদীর তীরে থাকা শানকিভাঙ্গা ও বদনী ভাঙ্গা গ্রামে বেড়িবাঁধ না থাকায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা। ঝড়ের প্রভাব শুরুর আগেই তারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মোরেলগঞ্জ সদরের গাবতলা গ্রামের সালেহা বেগম বলেন, ‘সকাল থাইক্কা গাঙ্গের পানি বাড়তেছে। সহাল ১০টার দিকে পানিতে মোগো বাড়ি-ঘর তলাই গেছে।’ একই গ্রামের জামাল ফজলু হাওলাদার বলেন, ‘জোয়ারে গাঙ্গের পানি যেভাবে বারতিছে, তাকে দুপুরে আসতে আসতে মোগা ভাইসা যামু।’
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৌদ্ধ বলেন, ‘পূর্ণিমার ও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে উপকূলীয় এলাকায় নদী-খালের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দুপুর নাগাদ এ পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ভাটিতে এ পানি আবার নেমে যাবে।’
সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় এবং ঝড়ো বাতাস বয়ে যাওয়ায় সুন্দরবনের বিভিন্ন সাইক্লোন শেল্টারসহ কোস্টগার্ডের ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নতুন করে সিগনাল না বাড়ায় এবং আবহওয়া এখনও বেশি খারাপ না হওয়ায় মোংলা বন্দরে অবস্থানরত ১১টি বিদেশি জাহাজের পণ্য ওঠানামা ও পরিবহনের কাজ স্বাভাবিক রয়েছে। বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখরউদ্দীন বলেন, সিগনাল ৪ নম্বর না হওয়া পর্যন্ত বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকবে।
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র প্রভাবে সোমবার রাত থেকে দ্বীপজেলা ভোলায় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। উত্তাল হয়ে উঠেছে উপকূলীয় এলাকার নদ-নদী। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে ভোলার সর্ব দক্ষিণের চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন চর ইউনিয়ন ঢালচর ও চরকুকরি মুকরি ইউনিয়ন চার থেকে পাঁচ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে করে দুই ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল সালাম হাওলাদার জানান, সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ করেই পানি বাড়তে শুরু করে। এতে করে ওই চরটিতে থাকা অন্তত ৭হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠে ঘরের আসবাবপত্রসহ খাবার-দাবার নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া জোয়ারের পানিতে রাস্তাসহ চলাচলের পথ ডুবে গেছে। রাতে পানি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে এমন আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের কোস্ট ট্রাষ্টের অফিস ও পুলিশ ফাঁড়ির ভবনে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে কুকরি মুকরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম মহাজন জানান, সকাল থেকে তার ইউনিয়নের কুকরি মুকরি ও চর পাতিলা ৪ থেকে ৫ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সেখানে প্রায় ৮ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিকেলে এসব বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে নদীতে থাকা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার তীরবর্তী এলাকায় নিরাপদে চলে আসতে শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড় থেকে উপকূলের বাসিন্দাদের সতর্ক করতে মাইকিং করছে কোস্টগার্ডসহ সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো।
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী পানিবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঝুঁকিপূর্ণ চরগুলোতে আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধারে ইতিমধ্যে কোস্টগার্ড ও জেলা প্রশাসনের দুটি ইউনিট ঢালচরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের গ্রহণ করা হয়েছে। ভোলার উপকূলের ৪০টি দ্বীপচরকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে সেখান থেকে ৩ লাখ ১৮ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জেলার ৭০৯ টি আশ্রয় কেন্দ্র। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে ৮টি কন্ট্রোল রুম। পাশাপাশি ৭৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
অন্যদিকে সিপিপি’র ১৩ হাজার সেচ্ছাসেবী ছাড়াও রেডক্রিসেন্ট এবং স্কাউটস কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিবন্ধী, নারী ও শিশুদের নিরাপত্তায়ও আলাদা টিম গঠন করা হবে। প্রস্তুত থাকবে ফায়ার সার্ভিসের ১৪ টিম ও স্বাস্থ্য বিভাগের ২০০ কমিউনিটি ক্লিনিক।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পটুয়াখালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল রয়েছে। বাতাসের গতিবেগ অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। পটুয়াখালী উপকূলে থেমে থেমে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। জেলার কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী ও গলাচিপা এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের ভাংগা বেড়িবাঁধদিয়ে রাবনাবাদ নদীর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে ১০ গ্রাম পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। একই অবস্থা ধানখালী ইউনিয়নের দেবপুর গ্রামে। এছাড়া মহিপুরের নিজামপুর গ্রামের বেড়িবাঁধ টপকে চার গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ওইসব গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চরকাসেম এলাকা, চরমোন্তাজ ইউনিয়নের মিটার বাজার এলাকা, ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কাউখালি এলাকা, বড়বাইসদিয়া ইউনিয়নের হালিম চার এলাকা, চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের বিবিরহাওলা, গরুভাঙ্গা, মরাজাঙ্গি, গোলবুনিয়া, চিনাবুনিয়া ও চারলতা এলাকা পানিতে পুরাপুরি প্লাবিত হয়েছে।
উপকূলবর্তী স্থানীয়রা জানায়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সাগরপাড়ে বসবাসরত অস্থায়ী বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এছাড়া দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সিপিপি, রেড ক্রিসিন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ ফায়ার সার্ভিসের কমিউনিটি ভলান্টিয়ার টিমের সদস্যরা প্রস্ততি নিয়েছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৮০ কিমি দক্ষিণ দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার ভোর নাগাদ উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় পোঁছতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিমি এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিমি যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ (দুই) নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলবর্তী ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ তালুকদার বলেন, দেবপুর বেড়িবাঁধ ভেঙে দেবপুর, লোন্দা, ধানখালী ও পাঁচজুনিয়া গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া নিশান বাড়িয় বেড়িবাঁধ টপকে পানি প্রবেশ করেছে।
লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, অস্বাভাবিক জোয়ারে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে রাবনাবাদ নদীর জোয়ারে পানি প্রবেশ করে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে পুকুর, মাছের ঘেরসহ ফসলি জমি। অনেকের বাড়িতে উনুনে হাড়ি ওঠেনি। এছাড়া নতুন করে আরো বেড়িবাঁধ ভাঙার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট সুাপার সাইক্লোন ইয়াস ক্রমেই সাতক্ষীরার উপকূলে ধেয়ে আসছে। দুপুর থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর ও আশাশুনির কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীসহ উপকূলের সকল নদ-নদীর জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট বৃদ্বি পেয়েছে।
দুপুরের দিকে গাবুরা ইউনিয়নের নেবুবুনিয়া এলাকায় কপোতাক্ষ নদের বাঁধ ছাপিয়ে হু হু করে লোকালয়ে পানি প্রবেশ শুরু করে। ফলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামবাসীরা তাৎক্ষণিক বাঁধে মাটি ফেলে মেরামত করে সেগুলো রক্ষা করে। গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, গাবুরা, মুন্সিগঞ্জ ও পদ্মপুকুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৭কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ৪৩টি পয়েন্টে ভয়াবহ ভাঙন ও ফাঁটল দেখা দিয়েছে।
সাতক্ষীরা-৪ আসনের সাংসদ এসএম জগলুল হায়দার ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকূলবাসীকে নিরাপদে স্থানে ও সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নেওয়ার জন্য দিনভর মাইকিং করা হয়েছে। সুমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদেরকে উপকুলে ফিরে এসে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, উপকূলবাসীকে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য জেলার মোট ১৪৫টি সাইক্লোন সেল্টার, ১৫০০ স্কুল,কলেজ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ১৮৩ মেট্রিকটন খাদ্য শষ্য মজুদ রাখা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত খাবার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও নগদ কোটি ৮৮লাখ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব থেকে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য উপকূলীয় এলাকা আশাশুনির প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া, খাজরা এবং শ্যামনগরের পদ্মপুকুর, গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, কৈখালি, ঈশ্বরীপুর, রমজাননগর, কাশিমারি, মুন্সিগঞ্জসহ সুন্দরবন লাগোয়া মুন্সিগঞ্জ হরিনগর এলাকায় মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতার জন্য উপকূলে নৌযানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আবু জার গিফারি জানান, উপকূলবর্তী এলাকার ভেড়িবাঁধের ৪৩টি পয়েন্টে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সাইক্লোন সেল্টারের পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ১৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে মেডিকেল টিম। কোভিড পিরিয়ডে নিরাপত্তা বজায় রেখে তাদের খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন বিভাগের ৮টি টহল ফাঁড়ির সব সদস্যকে নিরাপদে সরে যাবার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সহকারী বন সংরক্ষক এমএ হাসান জানান, ইয়াস আঘাত করলে এবং অস্বাভাবিক জলোচ্ছাস হলে উপকূলবাসীকে উদ্ধার করে আনার জন্য নৌযানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ইতিমধ্যে ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে বরিশাল বিভাগীয় অঞ্চল পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী ও গলাচিপা এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ধীরে ধীরে প্রভাব পড়ছে বরিশালেও। জেলার কীর্তনখোলা নদীসহ আশপাশের এলাকার সকল নদীর পানি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। বিরাজ করছে গুমোট আবহাওয়া।
ঘূর্ণিঝড় এর প্রভাবে জানমালের ক্ষতি কমাতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বরিশাল বিভাগীয় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)। এছাড়া বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসন দফায় দফায় বৈঠক করে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
মঙ্গলবার সকাল ১১টায় নগরীর ভাটারখাল এলাকায় কীর্তনখোলা নদীর তীরে সিপিপি কার্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালক শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, বরিশাল বিভাগে ৩৩ হাজার ৪শ’স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। সিগন্যাল ৪ নম্বর হলে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যওয়ার জন্য তারা পতাকা উত্তোলন ও মাইকিং করবেন।
অপরদিকে জানমালের ক্ষতি কমাতে বিভাগীয়, জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন দফায় দফায় সভা করে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩১৬টি বিশেষায়িত সাইক্লোন শেল্টার এবং আরও ৭৫৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সাইক্লোন শেল্টার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জেলার ৬ লাখ ৪২ হাজার মানুষ এবং প্রায় ৩১ হাজার গবাদী পশু নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে পারবে। ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য আঘাত হানার খবরে ওইসব সাইক্লোন শেল্টার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাথরুম-টয়লেট ব্যবহার উপযোগী এবং সুপেয় পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা, বিদ্যুত না থাকলে বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া শুকনা খাবার এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে স্থানীয় জনগণের মাঝে বিতরণের জন্য জেলায় ৮৪ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১৫ লাখ টাকা রয়েছে।
ইয়াস এর প্রভাবে কক্সবাজার জেলার বিস্তীর্ণ উপকূলীয় বেড়িবাঁধের ক্ষতি হচ্ছে। টেকনাফ থেকে কুতুবদিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধের অংশ। ভাঙা অংশ দিয়ে প্লাবিত হচ্ছে স্থানীয় বসতি ও লবণের মাঠ। ইতোম্যেই বেড়িবাঁধ ভেঙে সদরের উপকূলীয় বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত এবং লবণচাষিদের বিপুল পরিমান ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ভাঙাচোরা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে কুতুবদিয়ায় তলীয়ে গেছে বিস্তীর্ণ জনবসতি।