প্রাইভেটকারে অভিনব পন্থায় ছিনতাই

অপরাধ এইমাত্র

বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানীর ফার্মগেট থেকে আব্দুল্লাহপুর, আজিমপুর থেকে আমিনবাজার আবার গুলিস্তান থেকে কাঁচপুর ও যাত্রাবাড়ি থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিনবপন্থায় অপহরণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এসব অপহরণ বা ছিনতাইচক্রের সদস্যদের রয়েছে প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকসা ও মাইক্রোবাসসহ অর্ধশত যানবাহান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীর খিলক্ষেত, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে ভুলতা-গাউছিয়া ও এয়ারপোর্ট থেকে ময়মনসিংহ, শেরপুরে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে কৌশলে যাত্রী গাড়িতে উঠায়। এরপর যাত্রীবেশী ছিনতাই অপহরণচক্রের সদস্য গাড়ির ভেতরে মারধর করে এবং খুনের ভয় দেখিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিচ্ছে।
জানা গেছে, রাজধানীর যে সব রাস্তায় সাধারণ যাত্রীদের যানবাহন থাকে না, সেই এলাকায় সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারকচক্রের সদস্যরা যাত্রীবেশী রাস্তায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।একপর্যায়ে ছিনতাইচক্রের নির্ধারিত প্রাইভেটকার বা সিএনজির চালকদের গোপনে ফোন করা হয়। আর তাদের ফোন পেয়ে তাদের কাছাকাছি জায়গায় সেই গাড়ি থামানো হয়। তখন যাত্রীবেশী ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা দৌড়ে গিয়ে ওই প্রাইভেটকার বা সিএনজি এবং মাইক্রোবাসের কাছে গিয়ে গন্তব্যে যেতে গাড়িতে উঠে। আর তাদের প্রতারণা বুঝতে না পেরেই ওই গাড়িতে সাধারণ যাত্রীরা উঠেন।তখন ছিনতাইচক্রের সদস্যরা বমি হওয়ার অজুহাতে তারা জানালার কাছে বসেন। আর প্রকৃত যাত্রীদের গাড়ির মাঝখানের সিটে বসাতে দেন। কিছুদুর যাওয়ার পর চক্রের সদস্যরা ওই যাত্রীর চোঁখে মুখে স্প্রে দিয়ে চোঁখ বেঁধে ফেলা হয়। এরপর তারা গাড়ি নিয়ে ঢাকার বাইরে নিয়ে তার কাছ থেকে টাকা পয়সা মোবাইলসহ সব কিছুই ছিনিয়ে নিয়ে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এই চক্রের সদস্যরা গাড়ির মধ্যে মারধর করেই ক্ষ্যান্ত হচ্ছে না। তারা বিকাশের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
আরিফুল ইসলাম নামের একজন ভ্ক্তুভোগি জানান, গতমাসের শেষের দিকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডেমরার কুড়াতলী বিআরটিসি বাস কাউন্টারের সামনে ভুলতা গাউছিয়াগামী রোডের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে ছিলাম। সেখানে আরো ২ থেকে ৩ জন অপেক্ষা করছিল। এসময় সাদা রংয়ের একটি প্রাইভেটকার সেখানে এসে দাঁড়ায়। তখন তাদের সাথে উক্ত প্রাইভেটকারে উঠেন তিনি। উক্ত প্রাইভেটকারটি গাউছিয়ার উদ্দেশ্যে ছাড়া হয়। সেখান থেকে কিছুদুর যাওয়ার পর পিছনের সিটের তার দুই পাশে বসা দুইজন যাত্রী তার হাত চাপ দিয়ে ধরে। আর গামছা দিয়ে বেঁধে কিল ঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে তার গলায় ধারালো ছুরি চেপে ধরে তাকে ভয় দেখানো হয়। একপর্যায়ে তার কাছে থাকা টাকা পয়সাসহ সব কিছুই ছিনিয়ে নিয়ে তাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায় চক্রের সদস্যরা।
এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চক্রের ৫জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন, সংঘবদ্ধ চক্রের প্রধান মো. মানিক মিয়া, মো. জাকির হোসেন, মো. আরিফ, মো. হযরত আলী ও মো. জাহিদ হোসেন। এদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার,
একটি মোবাইল ফোন, একটি ধারালো ছুরি, একটি গামছা, একটি খাকি রংয়ের স্কচটেপ, লাল-কালো রংয়ের ইলেকট্রিক তার ও একটি স্ক্রু-ড্রাইভার উদ্ধার করা হয়।
গোয়েন্দা সুত্র জানায়, এই চক্রের সদস্যরা প্রথমে যাত্রীবেশী রাস্তায় অবস্থান করে। এরপর প্রকৃত যাত্রীদের কৌশলে তাদের নির্ধারিত গাড়িতে তুলে যাত্রী হিসেবে তুলে নেয়। পরে তার কাছে থাকা মোবাইল সেট, নগদ অর্থ ও ব্যবহৃত বিকাশ এ্যাকাউন্টের পিন কোড জোর পূর্বক ছিনিয়ে নেয়। একজন ভুক্তভোগির অভিযোগের ভিত্তিতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের প্রদানসহ ৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, প্রাইভেটকারের যাত্রীদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ এলাকায় চোখে স্প্রে করে নামিয়ে দেয়। ওই যাত্রী তখন বুঝতে পারে প্রাইভেটকারে থাকা সকলেই ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। পরে তিনি বাসায় গিয়ে দেখতে পান, ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা তার বিকাশ নাম্বারে থাকা টাকা সেন্ড মানি করে নিয়ে নিয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার জানান, একজন ভুক্তভোগি খিলক্ষেত এলাকায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। উক্ত মামলাটি থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশের বিমান বন্দর জোনাল টিম। এই মামলার ঘটনা তদন্তে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। আর ওই ফুটেজের ভিত্তিতেই জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, রাস্তায় চলাচলকারী যাত্রীর গলায় ইলেকট্রিক তার পেঁচিয়ে, গামছা দিয়ে চোঁখ ও হাত বেঁধে, মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে, গলায় ছুরি ধরে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে সর্বস্ব লুট নেয়। পরে তাদেরকে নির্জন স্থানে নিয়ে ফেলে দেয়। তিনি সাধারণ যাত্রীদের এধরণের প্রতারক অপহরণকারীদের খপ্পর থেকে সর্তক্য হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন