বিশেষ প্রতিবেদক : রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হচ্ছেন তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। প্রায় এক দশক আগে অভিমান করে আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় চার নেতা তাজউদ্দিন আহমেদের ছেলে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। তারও দুই বছর পর সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতিতে আর না জড়ানোর কথা বলেছিলেন। তবে রক্তে যেহেতু রাজনীতি তাই তিনি আবারও ফিরছেন তার ঘর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। দলের ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়ার পরই তিনি বাবার তথা পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সোহেল তাজ আত্ম-অভিমান ছেড়ে ফিরছেন রাজনীতিতে। আসন্ন কাউন্সিলের মাধ্যমেই সোহেল তাজকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে বলে আভাস পাওয়া গেছে। কাউন্সিলে এই নজির দেখা যাবে বলে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা ও নীতি-নির্ধারকরা বলছেন।
বহুদিন পর গত সোমবার (১ জুলাই) রাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান সোহেল তাজ। সভানেত্রীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি সভানেত্রীর দোয়া নেন তিনি। এ সময় তাকে বেশ উৎফুল্ল ও ইতিবাচক দেখা গেছে। তারপর থেকেই গুঞ্জন ওঠেছে তাহলে কি রাজনীতিতে ফিরছেন সোহেল তাজ?
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সোহেল তাজ প্রায় ১০ মিনিট অবস্থান করেন কার্যালয়ে। পরে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাতে ছেলের বিয়ের কার্ড তুলে দেন। সোহেল তাজের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, রাজনীতিতে আসার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। তবে রাজনীতিতে ফিরে আসার বিষয়ে এখন বেশ ইতিবাচক সোহেল তাজ। আওয়ামী লীগের রাজনীতির বাইরে তিনি কখনও ছিলেন না। প্রত্যক্ষভাবে দলের সঙ্গে না থাকলেও পরোক্ষভাবে সবসময়ই ছিলেন। যেহেতু তিনি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে পারেন না। ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সোহেল তাজ। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সোহেল তাজ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেও ২০০৯ সালের ৩১ মে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। পরে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১২ সালের ৭ জুলাই সংসদ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করেন। রাজনীতিতে না জড়ানোর কথা বললেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৪ আসনে বোন সিমিন হোসেন রিমির নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। বোনের নির্বাচন উপলক্ষে দীর্ঘদিন পর এলাকাবাসী সোহেল তাজকে পেয়ে বেশ খুশিই হন। মূলত তারপর থেকেই আলোচনা জোরালো হতে থাকে রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন তিনি।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে সোহেল তাজ দলীয় পদ পাচ্ছেন- এমন খবর ছড়িয়ে পড়লেও শেষ পর্যন্ত রাজনীতির মাঠে তাকে আর দেখা যায়নি। তবে দলীয় সূত্র বলছে, এবার দলের ২১তম কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ তরুণ-নির্ভর কমিটির দিকে ঝুঁকছে। কাউন্সিলে দলের নতুন পদ পেতে পারেন এই উদীয়মান তরুণ নেতা। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোহেল তাজকে খুবই পছন্দ করেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত এপ্রিলে গণভবনে সোহেল তাজ যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান তখন তাকে পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে নেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী চান না সোহেল তাজ রাজনীতির বাইরে থাকুক।
রাজনীতিতে ফিরে আসার ব্যাপারে মন্তব্য জানার জন্য সোহেল তাজের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে এ সম্পর্কে তার এপিএস আবু কাওসার গণমাধ্যমকে জানান, রাজনীতির পরিবার থেকে তিনি (সোহেল তাজ) উঠে এসেছেন। রাজনীতি তার রক্তে বইছে। রাজনীতির বাইরে কার্যত তিনি থাকতে পারেন না। সুতরাং যে কোনও সময়ে তার রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি জানান, ব্যক্তিগত জীবনে সোহেল তাজের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। ছেলে ব্যারিস্টার তুরাজ আহমদের বিয়ে করছেন ড. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া এবং ড. আবিদা সুলতানা ইভার একমাত্র কন্যা লাবিবা জামানকে। সে বিয়ের কার্ড নিয়ে গণভবনে সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে গিয়েছিলেন নিমন্ত্রণ দেয়ার জন্য।