রাজস্ব বাড়াতে জেলা-উপজেলায় কমিটি চান ডিসিরা

জাতীয় জীবন-যাপন রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্থানীয়ভাবে সরকারের রাজস্ব আহরণ বাড়াতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ডিসি-ইউএনওদের নেতৃত্বে কমিটি চেয়েছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। ডিসিদের এই প্রস্তাবকে সরকার ‘ভালো প্রস্তাব’ হিসেবই দেখছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সোমবার সকালে সচিবালয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, অর্থ বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং পরিকল্পনা বিভাগের কার্য-অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মসিউর। তিনি বলেন, ডিসি সাহেবদের প্রস্তাব ছিল জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করা, ডিসি এবং ইউএওদেরকে নিয়ে। তাহলে তারা আয়কর বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। এটা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে বলেছে যে, এটা ভালো প্রস্তাব বলে তারা মনে করেন। তবে এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের আগে এর ভেতরে ডিটেইল কি আছে তা এটা তাদের কাছে স্পষ্ট করে জানা দরকার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার যে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ধরে এগোচ্ছে, সেখানে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে সরকার আশা করছে, যার ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে তিনি এবার নতুন কোনো কর আরোপ করছেন না। বরং করের আওতা বাড়িয়ে তিনি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চান। কিন্তু গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে যেখানে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা থেকে ৩ লাখ ১৬৬১২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনতে হয়েছিল, সেখানে এবার আরও বড় লক্ষ্য কীভাবে পূরণ করা সম্ভব- সেই প্রশ্ন রয়েছে অর্থনীতিবিদদের। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে এনবিআরের। জেলা প্রশাসকদের প্রস্তাবের সঙ্গে এনবিআরের প্রস্তাবের সমন্বয় প্রয়োজন হবে। তখন হয়ত বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করা যাবে। কার্য-অধিবেশনের আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে মসিউর বলেন, ডিসিরা যেসব প্রস্তাব দিয়েছেন বা যেসব বিষয় উত্থাপন করেছেন বেশির ভাগ হল ঋণ ও সরকারের অন্যান্য ব্যয় বরাদ্দ, এটা কীভাবে মানুষের উপকারে আরও কাজে লাগানো যায়, যেটি বরাদ্দ করা আছে এবং যে অর্থটা আছে সেটা কীভাবে দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে বিতরণ করা যায় এটাই ছিল তাদের মূল বিষয়। এসব প্রস্তাবের কিছু বাস্তবায়ন সম্ভব, আবার বাজেট সীমাবদ্ধতা বা জবাবদিহিতার বাধ্যবাধকতার কারণে কিছু ‘সম্ভব নয়’ বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। তবে সার্বিকভাবে তিনি জেলা প্রশাসকদের মনোভাবের প্রশংসাই করেছেন। আমার ধারণা সরকারি কর্মকর্তারা মানুষের প্রতি যে অনুভূতি প্রকাশ করেছেন এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়, এটা আমার মনে হয় একটা নতুন দিক। এদের ব্যবহারের নতুন দিক যে মানুষের কল্যাণের জন্য নিয়মকানুন যেটা আছে সেটা যদি বাধা হয়ে দাঁড়ায় এ নিয়মকানুনগুলোকে পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজন মত যতদূর সম্ভব সেগুলোর পরিবর্তন সাধন করা। ঋণ বিতরণ নিয়ে ডিসিরা কী ধরনের সমস্যা মোকাবেলার কথা জানিয়েছেন- এ প্রশ্নে মসিউর বলেন, সমস্যা হয় মূলত কৃষি ঋণ এবং নারী উদ্যোক্তা ঋণে। ব্যাংকে যে পরিমাণ বরাদ্দ থাকে ওই ব্রাঞ্চ হয়ত সে পরিমাণে ঋণ দিতে পারে না। যেসব তথ্য ও শর্ত পূরণ করতে হয় মহিলারা সেসব সব সময় দিতে পারেন না। সেই শর্ত হল তার একটি সার্টিফিকেট লাগবে, তার একজন গ্যারান্টার লাগবে। তারপরে সবাই জানেন আমাদের গ্রামের গবীর মহিলাদের প্রায় কারও জমি নেই বা জমি থাকলেও তার বাবা, ভাই, স্বামী না থাকলে স্বামীর ভাইদের অনুমতি বা সমর্থন সে এগুলোর কোনো কিছু করতে পারে না। ফলে মহিলাদের জন্য যে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়ার মত থাকে সেগুলো দেওয়াতে অসুবিধা হয়ে যায়। তাদের পরিচয় নিশ্চিত না, আইডেন্টিফিকেশন নম্বর, ঠিকানাসহ অনেক তথ্য দিতে হয়। ডিসিদের প্রস্তাব হল একটু সহজ করা। ডিসিদের অনুকূলে এক কোটি টাকা করে বরাদ্দ এবং ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আলোচনা প্রসঙ্গে মসিউর বলেন, এটা আজকে আসেনি, কারণ এটা তো গতকালই (গত রোববার) চেয়েছে। প্রস্তাব হিসেবে সরকারের নথিতে আসবে তারপরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে, তারপরে বোঝা যাবে কী করবে, এটা আজকের আলোচনায় আসেনি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *