তাজমহল ভ্রমণ

উপ-সম্পাদকীয়/মতামত

মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরী : পৃথিবীর মানুষ আজ দু’ভাগে বিভক্ত এক ভাগ যারা তাজমহলের সৌন্দর্য দেখেছেন অপর ভাগ যারা তাজমহল দেখেনি – তাজের সৌন্দর্য দেখে সাবেক ইউ এস প্রেসিডেন্ট এমন মন্তব্য করেছিলেন । আমি বহুদিন আগে তাজমহল পরিদর্শনে যাই। প্রথম যেদিন The Taj দেখেছিলাম এক ঝলকে যে কেমন লেগেছিল তা ভাষায় প্রকাশ আমার মত ক্ষুদ্র মানুষের নেই, যাহোক সে সময় তাজে প্রবেশ মুল্য ছিল ২.০০ দুই রুপি, যা এখন ভারতীয়দদের জন্য ২০ রুপি আর বিদেশীদের জন্য ১০ মা:ডলার।


বিজ্ঞাপন

আপনারা ছবিতে বা বিভিন্ন ডকুমেন্টারিতে তাজমহল দেখেছেন বা তাজের বিষয়ে পড়েছেন, তবে আমি তিন বার তাজ দেখেছি (মে, জুলাই, ডিসেম্বর মাসে) যা দেখেছি তার বর্ননা হলো;


বিজ্ঞাপন

পুরো তাজ কমপ্লেক্সটি ১৭ হেক্টর জায়গার উপর অবস্থিত। তাজের মুল গেট পার হয়ে এক নজরে তাজ চোখে পড়তেই আপনার চোখ ঝলসে উঠবে। তারপর সাজানো ফুলের বাগান, বাগানের মাঝখান দিয়ে তাজে যাওয়াআসার প্রবেশ পথ। পথের শেষ প্রান্তে তাজের প্রথম গোলাপি স্যান্ড স্টোন এর ভিটে, এটি তাজের মুল ভিটে, আর এই ভিটের উপর মুল তাজের ভিটে যা মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি। প্রথম বেলে পাথরের ভিটে যা মাটি থেকে ৬ ফুট উচু আবার ২য় মার্বেল পাথরের ভিটে বেলে পাথরের ভিটে থেকে ৬/৮ ফুট উচুতে আর এই ভিটের উপর দাঁড়িয়ে আছে The Taj.

মুল তাজমহলের বিশাল যে গোলাপি বেলে পাথরের ভিটের ডানে বামে দুটি মোঘল স্থাপত্য। তার একটি হলো মসজিদ, এ মসজিদে এখনো জুমার নামাজ হয়, আমি নিজে এ মসজিদে জুমার নামাজ পড়েছি। অপরটি হলো গেস্ট হাউস যা একি মসজিদের আদলে তৈরি। গেস্ট হাউস টি অবশ্য আমি বন্ধ দেখতে পাই।

তাজমহল এর পেছনে যমুনা নদী, একেবারে তাজের বেলে পাথরের যে ভিটে তার সাথে লাগোয়া। আর যমুনা এখন আর সেই প্রমত্তা যমুনা নেই শীত কালে দেখে মনে হয় একটা মৃত প্রায় খাল। আর এই খালের মধ্যে দিয়ে পুরো আগ্রা শহরের দুষিত পানি প্রবাহিত হয়। আর বষাকালে মৃত যমুনার পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। যমুনা তাজের এত কাছে যে বরষা কালে যদি আপনি তাজের ভিটে থেকে লাফ দেন তাহলে যমুনায় গিয়ে পড়বেন।

মুল তাজের মার্বেল পাথেরের যে ভিটে, এই ভিটের চার কোনায় রয়েছে চারটি বড় মিনার, আর মুল তাজ এমন বর্গাকারে বানানো চারিদিক থেকে একি ডিজাইন দেখতে। পুরো তাজ মার্বেল পাথরের তৈরি তবে পাথর গুলো উচ্চ গ্রেডের ফলে এখনো নতুনের মত চকচক করে। মার্বেল গাঁথুনিতে চুন ব্যবহার করা হয়েছে। আবার মার্বেল গুলোতে কেটে কেটে ফুল বসানো হয়েছে, যে ফুল যে কালারের সেগুলো সেই কালার মার্বেল কেটে কেটে মুল মার্বেল এর ভিতর সেটে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। একটি বিষয় অবাক লেগেছে মুল যে বড় গম্বুজ তার মার্বেল এর ফাঁকেফাঁকে লোহার হুক লাগানো আমি কৌতুহলী হয়ে স্থানীয় লোকজন এর কাছে জানতে চেয়েছি গম্বুজে এভাবে শতশত লোহার হুক লাগানোর কারণ কি? তারা জানালেম চন্দ্ররাতে চাদের আলোয় হুক গুলো নাকি তারার মত লাগে, আমার দূ:ভাগ্য রাতে থেকে তা পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ হয়নি।

আবার মুল মার্বেল এর গায়ে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ক্যালিওগ্রাফী করে পবিত্র আল কোরআন এর আয়াত কালো মার্বেল কেটে কেটে মুল মার্বেলের ভিতর সেটে দেয়া হয়েছে। যতদূর জানা গেল পবিত্র কোরআন এর জীবন মৃত্যু নিয়ে যে আয়াত গুলো নাজিল হয়েছে, ক্যালিওগ্রাফীতে সেই আয়াত গুলো লিখে দেয়া হয়েছে।

যেদিক থেকে আপনি তাজে প্রবেশ করেছেন সেদিক দিয়ে তাজে প্রবেশের পথ। ভেতরে মাঝ খানে কবর এর ডামি তার চারিদিক রেলিং দিয়ে ঘেরা ঠিক আমাদের দেশে অনেক মাজার যেমন মাঝখানে কবর রেখে চারিদিক কোমর পরিমাণ রেলিং ঠিক তেমনি। তাজের ভেতরের দেয়াল একি ভাবে বাহিরের মত ফুল আকা।

মুল যে দরজা দিয়ে প্রবেশ মুখ তার নীচে যাওয়ার পথ রয়েছে, সেই নীচ তলায় রয়েছে মুমতাজ ও শাহজাহানের আসল কবর। আমি তাজের মুল দরজা দিয়ে প্রবেশ করে ভিতরে যে ডামি কবর তার চারদিক ঘুরে দেখেছি,যেহেতু নীচে আসল কবর তাই কিছু দোয়া পড়েছি।

এই মুমতাজ কে জানেন? ইনি হলেন অপর মুঘল সম্রাজ্ঞী নুরজাহান এর ভাই আসফ খানের কন্যা। তিনি ছিলেন ফুফু এর মত সুন্দরি। মুমতাজ তার ১৪ তম সন্তান জম্ম দেয়ার সময় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে সম্রাট শাহজাহান এতই ভেংগে পড়েন যে আর শান্তিময় রাজকার্য চালাতে পারেননি। সে সুযোগেই আওরংগজেব সিংহাসন দখল করেন।

সম্রাট শাহজাহান ভালবাসার নিদর্শন স্বরুপ ১৬৩২ সালে তাজের কাজ শুরু করেন আর শেষ করেন ১৬৫২ সালে, আর কাজ করেন ২০ হাজার শ্রমিক, আর ব্যয় করেছিলেন ৩,২০,০০,০০০ রুপি যা দিয়ে সে সময়ে ১ টাকায় ৮ মন চাউল পাওয়া যেতো এবার ভাবুন এ টাকা দিয়ে আমার ধারণা মোটামুটি একটা দেশ কেনা যেতো, পাবলিক কি বলেন?

আর তাজের আর্কিটেক্ট কে ছিলেন জানেন? তিনি হলেন মাস্টার আহম্মদ লাহৌরি।