নিজস্ব প্রতিবেদক : অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের মধ্যে অসচেতনতার মাত্রা বেশি। দেশের মাত্র ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে ধারণা রাখেন। এদের অধিকাংশই আবার জীববিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়ছেন। তবে প্রায় ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থীই অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে সচেতন নন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ও মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল ডিফেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
‘নলেজ, অ্যাটিটিউডস অ্যান্ড প্র্যাকটিসেস অব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ইউজেস অ্যান্ড রেজিস্ট্যান্ট অ্যামং পাবলিক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন’ জার্নালে প্রকাশিত হয়।
গবেষণায় জানা যায়, ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা শুরু করেন। কিন্তু চিকিৎসার মাঝপথে রোগের লক্ষণ অদৃশ্য হলে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ বন্ধ করে দেন তারা। এক্ষেত্রে জীববিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ৪৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থী এমনটি করেন। একই কাজ অন্যান্য বিভাগের ৩২ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী করেন।
এভাবে হঠাৎ বন্ধ করলে এবং যথেচ্ছ ব্যবহারে জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। ফলে নতুন করে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে তা রোগের বিরুদ্ধে লড়তে পারে না। এছাড়া প্রয়োজনের অতিরিক্ত সেবনে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়ে।
গবেষণাটি পরিচালনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক সালেকুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক মাহফুজা মারজান ও দেওয়ান জুবায়ের ইসলাম। তাদের সঙ্গে মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল ডিফেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন গবেষক হ্যালেনা লুগোভা, অ্যাম্বিগা কৃষ্ণপিল্লাই ও মইনুল হক গবেষণায় যুক্ত ছিলেন।
অধ্যাপক সালেকুল ইসলাম বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ২০৫ জন শিক্ষার্থীর ওপর এ গবেষণাটি চালানো হয়। যার মধ্যে ৯২জন জীববিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিষয়ের এবং ১১৩ জন অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্টেন্ট, অর্থাৎ মানুষের শরীরের জীবাণু ধ্বংস করতে ওষুধের কার্যকারিতা হারানোর পেছনে নানা কারণ কাজ করে। এর মধ্যে এ গবেষণায় উঠে এসেছে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শেষ না করা। ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্টেন্ট’ কমাতে চিকিৎসকদের আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি রোগীদের সচেতন হতে হবে। এছাড়া ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির ওপর সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে।