মোস্তাফিজুর রহমান : মো. জমির হোসেন (৫৫)। একজন সৎ মানুষ এবং আমার অফিসেই দীর্ঘদীন কর্মরত। ডায়াবেটিস জনিত রোগে আক্রান্ত আগ থেকেই। আজ থেকে তিনদিন আগে হঠাৎ করেই দুটি চোখের আলো সম্পূর্ণই নিভে যায়। বাসা থেকে অন্যের হাত ধরে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয় এবং দুই চোখেই মারাত্মক ছানি পড়াসহ চোখার মারাত্মক ক্ষতিসাধন হয়েছে বলে ডাক্তার জানিয়ে দেয়। দু একদিনের মধ্যে অপারেশন না করলে চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ডাক্তারের চিকিৎসাপত্র সহ অন্যের হাত ধরে যথারীতি আমার অফিসে উপস্থিত হয়ে অঝোর ধারায় কান্না করে যাচ্ছে। স্যার আমার তিনটি মেয়ে, ওদের পরীক্ষা চলছে, ওরা গ্রামে থাকে। ছেলে সন্তান নেই। আমার কাছে চিকিৎসার কোন টাকাও নেই। ডাক্তার বলেছে আজ কালের মধ্যে চোখের অপারেশন না হলে আমি আর কিছুই দেখতে পাবোনা।
জমিরের দৃষ্টি হারানো দুচোখ দিয়ে অসহায়ত্বের জল গড়িয়ে পড়ছে আর বিলোপ করছে। স্যার, আমার চিকিৎসার ব্যবস্থাটা আপনি করে দিন। জমিরকে নিয়ে অফিসেই লাঞ্চ করলাম। আস্বস্ত করলাম যে একটা ব্যবস্থা হয়েই যাবে। ডাক্তারের ভাষ্য অনুযায়ী খরচ হবে ৩০০০০/= টাকা। এ যেন ফকিরের নিকট অন্য ফকিরের ভিক্ষা প্রার্থনার মতোই মনে হলো। তবুও হাল না ছেড়ে কয়েকজন কাছের মানুষকে ফোন করে জমিরের সমস্যার কথা জানালাম। দশ মিনিটেই জমিরের অপারেশনের খরচ বাবদ সমূদয় অর্থের অনেকটা নিশ্চিত ম্যাসেজ পেলাম আলহামদুলিল্লাহ।
আগামীকাল জমিরের দুটি চোখের অপারেশন হবে কয়েকজন কাছের মানুষের আর্থিক অনুদানে। জমির তার দুচোখের দৃষ্টি আগের মতোই ফিরে পেয়ে তিনটি কন্যা সন্তানকে পরান ভরে দেখুক এবং অভিভাবক হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করুক। জমিরের চোখের সফল অস্ত্রোপচারের জন্য সকলের নিকট দোয়া প্রার্থনা করছি।
জমিরের চিকিৎসার বিষয়ে আমার এমন ভূমিকা নেই, ভূমিকার মধ্যে আজ দুপুরে দৃষ্টি হারানো জমিরের সাথে লাঞ্চ করেই নিজের অসহায়ত্ব ছাড়া কিছু খুজে পেলাম না।
এমন অসংখ্য জমিরেরা আমাদের আশপাশেই চোখের আলো হারিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। আপনি চাইলে অন্যের উপকারের জন্য ” মানবিক ভিক্ষাবৃত্তিকে” অস্থায়ী নেশা হিসেবে নিতে পারেন, তাতে এমন সম্মানহানি হবে বলে মনে হয় না। দিনশেষে জমিরেরা যেন আমাদের মতোই পরিবারের সদস্যদের আলোকিত মুখ দেখার সুযোগ পায়।
ভাল কাজের সাক্ষী হতে পেরে “আমরা কজন বন্ধু-৯১ ” এর সদস্য হিসেবে আমিও গর্বিত।