মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদ

অপরাধ

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরে সরকারী কর্মকর্তা কতৃক এক কলেজছাত্রীকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
রোববার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আয়োজনে প্রথমে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে বিচারের দাবীতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
ঘন্টাব্যাপী চলা মানববন্ধনে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন।


বিজ্ঞাপন

এ সময় বক্তারা অভিযোগ করেন, গত শনিবার দুপুরে শহরের সরকারি গণগ্রন্থাগারে বই পড়তে যায় সরকারী সুফিয়া মহিলা কলেজের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। এ সময় বই চুরির অভিযোগ এনে প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরিয়ান মোঃ বেলায়েত হোসেন তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এসময় এ ঘটনার বিচার ও লাইব্রেরিয়ান বেলায়েত হোসেনের অপসারণের দাবী করেন বক্তারা। পরে জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুনের কাছে বিচারের দাবীতে স্মারকলিপি দেন। ঐ ছাত্রী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নের সবুজ বাংলাদেশের সদস্য।


বিজ্ঞাপন

এসময় বক্তব্য রাখেন নকশি কাথার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশী, উপদেষ্টা এসএম আরাফাত হাসান, দুরন্ত মাদারীপুরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান বকুল, বিডি ক্লিন মাদারীপুরের জেলা সমন্বয়কারী রাহাত হোসেন সোহান, স্বপ্নের সবুজ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ইমরান মুন্সি, বন্ধনের সভাপতি জিল্লুর রহমান সম্রাট তালুকদার, কেএম জুবায়ের জাহিদ প্রমুখ।

ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রী ও তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে কলেজ ছাত্রী মাদারীপুরের সরকারী গণগ্রন্থাগারে তিন বান্ধবী মিলে বই পড়তে যায়। এসময় ঐ ছাত্রীর ব্যক্তিগত প্রাইভেট শিক্ষক ডাক দেন। এসময় ঐ ছাত্রী এগিয়ে আসলে মাদারীপুরের সরকারী গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরীয়ান বেলায়েত হোসেন তাকে ডেকে নিয়ে বই চুরির অভিযোগ দেন। এক পর্যায়ে অকাট্যভাষায় গালি দেন এবং তাকে চড় থাপ্পড় মারেন। এই অপমান সইতে না পেরে ঐ ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে ছাত্রীর পরিবার টের পেয়ে আত্মহত্যার হাত থেকে বাচান।

কলেজ ছাত্রীর মা বলেন, আমার মেয়ের শরীরে হাত তুলেন লাইব্রেরীয়ান বেলায়েত হোসেন। সে এই কাজ করে বড় অন্যায় করেছেন। আমার মেয়ে সেই অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন। আমি এই জঘন্য ঘটনার বিচার চাই।

ভুক্তভোগী ঐ ছাত্রী বলেন, আমি বই চুরি করিনি। যদি আমি কোন অন্যায় করে থাকি তাহলে আমাকে আইনের হাতে তুলে দিতেন। কিন্তু আমাকে চড়থাপ্পড় মেরেছেন। তা কিছুতেই মানতে পারছিনা। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

স্বেচ্ছাসেবক কেএম জুবায়ের হোসেন জাহিদ বলেন, সে শুধু কলেজছাত্রী না। সে একজন স্বেচ্ছাসেবক। তার শরীরে হাত তোলা কোনভাবে মানা সম্ভব না।
বিডি ক্লিনের মাদারীপুর জেলা সমন্বয়কারী রাহাত হোসেন সোহান বলেন, উন্নত মানসিকতার মানুষগুলোই বই পড়তে লাইব্রেরীতে যান। সেই লাইব্রেরীর লাইব্রেরীয়ানের মানসিকতা এমন জঘণ্য হয় কিভাবে। আমরা তার বিচার চাই।

স্বপ্নের সবুজ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ইমরান মুন্সি বলেন, ঐ ছাত্রী আমাদের সংগঠনের সদস্য। সে সব সময় অসহায় মানুষদের পাশে থেকে নানা সহযোগিতা করেন। সেই স্বেচ্ছাসেবককে এভাবে লাঞ্ছিত করায় আমরা মর্মাহত। আমরা এর বিচার চাই।

নকশি কাথার উপদেষ্টা এসএম আরাফাত হাসান বলেন, লাইব্রেরীয়ান বেলায়েত হোসেন কলেজছাত্রীর শরীরে হাত তুলেছেন। এটা কোন ভাবেই মানা সম্ভব না। আমরা এর বিচার চাই। বিচারের দাবীতে প্রয়োজনে আরো বড় আন্দোলন করা হবে।

নকশি কাথার সাধারণ সম্পাদক আয়শা সিদ্দিকা আকাশী বলেন, একজন কলেজছাত্রীর উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনকারী বেলায়েত হোসেনের বিচার দাবী করছি। যদি সঠিক বিচার না হয় তাহলে আমরা বৃহত্তম আন্দোলন করাবো। যাতে করে এমন ঘটনা আর না ঘটে।

অভিযুক্ত লাইব্রেরীয়ান বেলায়েত হোসেনের কাছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। এজন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি।

এ ব্যাপারে মাদারীপুুর মহিলা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মাহমুদা আক্তার কণা বলেন, ঘটনাটি খুবই জঘন্যতম। কোনভাবেই একজন লাইব্রেরীয়ান একজন কলেজছাত্রীর শরীরে হাত তুলতে পারেনা। অবশ্যই অপরাধীর বিচার হওয়া উচিত।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, এই ঘটনার ব্যাপারে তদন্ত কমিটি করা হবে। আর ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই অপরাধীকে আইনের মাধ্যমে বিচার করা হবে।