চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের নির্যাতিতা শিক্ষার্থী তানজিনা বাঁচতে চান

অন্যান্য এইমাত্র

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী তানজিনা সুলতানা বাঁচতে চান।


বিজ্ঞাপন

ভূমি খেকো স্থানীয় চেয়ারম্যানের নির্যাতনের শিকার তানজিনা সুস্থভাবে বাঁচার জন্য সাংবাদিক সমাজ, সহপাঠী, দেশবাসী ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন

গত সোমবার (৩০ জানুয়ারি) তানজিনার এ নির্মমতার চিত্র তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আর রাজি। তার স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।

এ বিষয়ে তিনি তার ফেসবুক আইডিতে লেখেন, কতো দুর্যোগ দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে নিত্য দিন পার করি আমরা। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কিছু এক্কেবারে মুখোমুখি এসে দাঁড়ায় যখন তা এড়ানো কঠিন হয়ে যায়।

তানজিনা সুলতানা। অতিসম্প্রতি সাবেক হওয়া ছাত্রী আমাদের, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চবি’র। কুতুবদিয়া বাড়ি। বাবা ৬ মাস আগে মারা গেছেন। ভাইবোন কেউ থাকেন না কুতুবদিয়ায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে মা’র কাছে গ্রামে ফিরে গেছেন, চাকুরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে। কিন্তু, এরমধ্যে তাদের বাস্তুভিটা ও জায়গাজমি দখল করে নেয়ার আয়োজন করেছেন তাদেরই স্থানীয় চেয়ারম্যান। তানজিনা লিখেছেন তার ফেসবুক পোস্টে। ঘটনাগুলো একেবারে সিনেমার গল্পের মতো।

তানজিনা যা লিখেছেন, আর আমাকে সময়ে সময়ে যা জানিয়েছেন, তাতে ঘটনাগুলো অনেকটা এরকম-

মাসখানেক আগে চেয়ারম্যানের ষড়যন্ত্র মাথায় নিয়ে তানজিনার ওয়ারিশান সংক্রান্ত মামলার সাক্ষীকে মারধর করে ধরে নিয়ে যান চেয়ারম্যান। এ ঘটনা লিখিতভাবে থানায় জানানোর জন্য স্থানীয় বাজারে যখন কম্পিউটার প্রিন্ট নিতে যায় তানজিনা, সেখান আগে থেকেই হাজির ছিলেন চেয়ারম্যান। ওকে দেখে ডেকে নিয়ে ওরই গলার ওড়না পেঁচিয়ে টেনে হিঁচড়ে একটা কক্ষে নিয়ে যায়।

সেখানে শ্বাস বন্ধ হয়ে মেঝেতে পড়ে যান তানজিনা। সে অবস্থায় আরও লোকজন মারপিট করে তাকে। অনেক অনেক মানুষ উপস্থিত হয়। খবর পেয়ে পুলিশও আসে। পুলিশ না কি চেয়ারম্যানেরই লোক। ওকে হাসপাতালে নিতে দেয়নি। বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য করেছে। মেয়েটি হাসপাতালে যেতে যেন না পারে তার জন্য পাহারা বসিয়ে রেখেছে।

তানজিনার মরণ দশা। হাসপাতালে যাওয়া জরুরি। রাতের অন্ধকারে ছদ্মবেশে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। হাসপাতালের রেজিস্টারে লেখা আছে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যাচেষ্টা, শরীরে বিভিন্ন আঘাত জখমের কথা। কিন্তু সনদ সেভাবে মেলেনি। পরিস্থিতি খারাপ হলে রাতেই কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিতে হয় তাকে।

এরপর মামলা করতে চাইলে মামলা নেয়নি স্থানীয় পুলিশ। আপোষ করার জন্য চাপ দিয়েছে উলটো। লড়াকু তানজিনা স্থানীয় আদালতে গিয়েছেন। ৩০৭ ধারায় মামলা নিয়েছেন আদালত। শুনানি ২ রা ফেব্রুয়ারি। এরমধ্যে, ওই চেয়ারম্যানও মামলা করেছেন তানজিনার বিরুদ্ধে। তার ৩০/৪০ জন লোককে একাই নাকি পিটিয়েছেন তানজিনা!

কিন্তু, পরিস্থিতি এখন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। সারাক্ষণ নানানভাবে হুমকি আসছে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য। ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেন যেতে বাধ্য হয়, তার নানান কৌশল উনি প্রয়োগ করে চলেছেন। চেয়ারম্যান নাকি এভাবেই অসহায়ের জায়গা-জমি দখল করে নেন। স্থানীয় পুলিশ কোনো সহযোগিতাই নাকি করে না। পুলিশ বরং নিজেদের অসহায়ত্বের কথা বলে কেবলই চেয়ারম্যানের সাথে আপোষ করার তাগাদা দেয়।

কাল রাতে আবারও কথা হলো তানজিনার সাথে। জানতে চায়, তার জীবন বাঁচাতে, বাবার রেখে যাওয়া ভিটেবাড়ি বাঁচাতে কিছু কি করার আছে আমার?

আমি কী করতে পারি? আমার কিছু করার ক্ষমতা কোথায়? কিন্তু আমি জানি, আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব-ছাত্র-ছাত্রী আছেন যারা এ পিতৃহীন অসহায় মেয়েটিকে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে সহায়তা করতে পারেন। প্লিজ, আপনারা তানজিনার জন্য কিছু একটা করুন। দানবের হাত থেকে মেয়েটিকে বাঁচান।

স্ট্যাটাস প্রদানকারী আর রাজি তার স্ট্যাটাসে চরম অসহায়ত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি নিজে একজন অসহায় মানুষ হিসেবে আরেক অসহায়ত্ব তানজিনার জন্য সবার কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর রাজি তার মানবিক দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে মূলতঃ এ কাজটি করেছেন।