স্বর্ণালংকারের লোভে বিশ্বস্ত কাজের লোক কর্তৃক অভিনব কায়দায় গৃহকত্রীসহ জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই

অন্যান্য এইমাত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ গত ০১/১১/২০১৯ তারিখে ধানমন্ডির ১৫ নং রোডের লোবেলিয়া এ্যাপার্টমেন্টে ঘটে যাওয়া এই লোমহর্ষক ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই।


বিজ্ঞাপন

অভিযুক্ত ২ জন আসামী গ্রেফতারসহ উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি, ভিকটিমের মোবাইল ফোন ও লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার। মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে।


বিজ্ঞাপন

আসামী মোঃ বাচ্চু মিয়া (৩৪) দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ভিকটিম আফরোজা বেগমের (৬৫)বাসায় বিশ^স্ততার সাথে কাজ করে আসছিল।

আসামী বাচ্চু মিয়ার মধ্যে বিলাসী জীবন যাপনের জন্য ভিকটিমের বাসার অর্থ সম্পদর প্রতি ও লোভ জন্মায়।
স্বর্ণালংকার লুণ্ঠনের লোভ হওয়ায় সে কৌশল খুজতে থাকে। সহযোগী সুরভী আক্তার নাহিদা (২২) বাসায় কাজ খুজতে ধানমন্ডি এলাকায় আসে।

ধানমন্ডি এলাকায় হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায় বাচ্চু মিয়ার সাথে কাজ খোঁজার সুবাদে কথাবার্তা ও ফোন নম্বর
আদান-প্রদান হয়। আসামী বাচ্চু মিয়া পরর্তীতে সুরভী আক্তার নাহিদাকে সাথে নিয়ে স্বর্ণালংকার লুটের পরিকল্পনা করে।

বাচ্চু মিয়া নাহিদাকে লোভনীয় প্রলোভন দেখায় ও পরিকল্পনা অনুযায়ী সহযোগী সুরভী আক্তার কে দিয়ে আগারগাঁও মার্কেট হতে ছুরি ক্রয় করায়। নাহিদাকে নতুন কাজের লোক সাজিয়ে ০১/১১/২০১৯ তারিখে ভিকটিমের বাসায় নিয়ে যায় ও কাজের
জন্য কথাবার্তা বলে। নাহিদা প্রায় দুই ঘন্টা অবস্থান করে ও কিছু কাজ করে। বিকাল ৪ টার দিকে আসামী বাচ্চুমিয়া
বাসায় প্রবেশ করে ভিকটিমের কাছে আলমারীর চাবি চায়। এসময় সুরভীও ছুরি নিয়ে ভিকটিমের শয়ন কক্ষে যায়।

ভিকটিম চাবি দিতে অস্বীকার করলে আসামী মোঃ বাচ্চু মিয়া ও সুরভী আক্তার নাহিদা ভিকটিমকে ছুরি দ্বারা শরীরে গলায় ও বিভিন্ন স্থানে একাধিক আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে তারপর বাচ্চু ভিকটিমের বালিশের নিচ থেকে চাবি নিয়ে
আলমারি খুলে ১টি স্বর্ণের চেইন, ০২ টি স্বর্ণের চুড়ি, ১টি মোবাইল সেট লুণ্ঠন করে নিয়ে যায়।

উক্ত ঘটনা ভিকটিমের
বাসার অপর কাজের মেয়ে দিতি পাশের কক্ষ থেকে দেখে ফেলায় তাকেও নাহিদা ছুরি দ্বারা একাধিক আঘাত করে গুরুত্বর জখম করে পালিয়ে যায়। ফলে ভিকটিমদ্বয় ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।
উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের মেয়ে এ্যাডঃ দিলরুবা সুলতানা রুবা (৪২) বাদী হয়ে গত ০৩/১১/২০১৯ তারিখ ধানমন্ডি মডেল থানার মামলা নং-০২, ধারা ৩৯৬ পেনাল কোড দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর ধানমন্ডি থানা ও ডিবি ডিএমপি, ঢাকা তদন্ত শুরু করে।
তারা ২৬ দিন তদন্ত করে মূল ২ আসামীসহ সন্দেহভাজন ৫ জনকে আটক করে।

আসামী সুরভী দোষ স্বীকার করে আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ আইনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করে।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে পিবিআই গত ০১/১২/২০১৯ তারিখে তদন্ত শুরু করে।

পিবিআই পুনরায় তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করে। রিমান্ডে এসে সুরভীর দেয়া তথ্যমতে তার আগারগাঁও এর ভাড়া বাসার মাটি খুঁড়ে স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়।

এ সময় সুরভী মোবাইল বিক্রির কথা স্বীকার করে। সুরভী দোষ স্বীকার করে
পুনরায় বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ আইনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করে।

মামলাটি বর্তমানে পিবিআই অর্গানাইজড ক্রাইম (উত্তর) এর পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোঃ মজিবুর রহমান তদন্ত করে ধারা ৩০২/৩৯৪/৩৪ পেনাল কোড অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য প্রস্তুত করেছেন।

কাজের লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে পিবিআই এর পরামর্শ যথাক্রমে,
নিয়োগের আগে নাম ঠিকানা যাচাই করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি নিতে হবে।
অপরিচিত কাউকে হঠাৎ বাসায় কাজের লোক হিসেবে না নেয়া। দীর্ঘ দিনের কাজের লোককে অতিরিক্ত বিশ্বাস না করে তার দিকে সতর্ক নজর রাখা। মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে যাচাই করা। মোবাইলে ছবি তোলে রাখা।