অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ঃ বিশ্বে রিজার্ভ কারেন্সি হিসাবে পোর্টফলিও বড় করবার প্রয়াস সম্প্রতি বেশ গতি পেয়েছে। পূর্বের লেখায় বলেছিলাম ডলারের উপর আস্থার ঘাটতি ডলারের একক ডমিনেন্সের জন্য হুমকি। একারনেই অন্যধরনের অবরোধ আর রিজার্ভ কারেন্সির উপর অবরোধ আলাদা বার্তা বহন করে। কোন কারেন্সিকে বৈশ্বিক হবার জন্য রাজনীতি ও অন্যান্য অর্থনৈতিক শক থেকে মুক্ত ও নিরাপদ প্রমানিত হতে হয়। রিজার্ভ কারেন্সিকে অবরোধের অস্ত্র হিসাবে ব্যাবহার এজন্যই ঝুঁকিপূর্ণ।
সম্প্রতি অপ্রচলিত রিজার্ভ কারেন্সিগুলা রিজার্ভ কারেন্সি হিসাবে যুক্ত হয়েছে অনেক দেশে। এক্ষেত্রে বিশ্বের অনেক দেশ এখন মার্কিন ডলারের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার, সুইডিং ক্রোনা, দক্ষিণ কোরিয়ার ওন এর মত বিকল্প কারেন্সিতে ভরসা পাচ্ছে। মূলত পোর্টফলিও ডাইভার্সিফিকেশন হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে চীনের ইউয়ান এর উপস্থিতি লক্ষণীয়। ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুরু করে আফ্রিকা এশিয়ার অনেক দেশেই রিজার্ভ কারেন্সিতে এখন ইউয়ান। বাংলাদেশের অনুমোদিত ফরেন কারেন্সি হিসাবে ২০১৮ সালে ইউয়ান কে অন্তর্ভক্ত করা হলেও এখনো ইউয়ানে ট্রেড গতি পায়নি। তবে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বেশ কিছু ব্যাংক ইউয়ানে এলসি খুলছে। আমার ধারনা যেহেতু বাংলাদেশের বড় বাণিজ্য পার্টনার চীন, সেক্ষেত্রে আগামী ৬-৭ বছরের ভেতর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ইউয়ানের উত্থান আসবে ভালভাবেই।
সবথেকে অবাক করার মত ঘটনা হল, ইজরাইল তাদের রিজার্ভ কারেন্সিতে ইউয়ান যোগ করেছে। বর্তমানে ইজরাইলের $২০০ বিলিয়ন রিজার্ভে ডলার হোল্ডিং কমিয়ে আনছে তারা। এখন থেকে রিজার্ভের ২% তারা চাইনিজ ইউয়ানে রাখবে। কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ান কারেন্সিতে রাখবে ৩.৫%। ইউরোর অংশ ইতোমধ্যে ৩০% থেকে কমে ২০% এ নেমেছে। রিজার্ভ কারেন্সির সংখ্যাও ইজরাইল বাড়াচ্ছে। ডলারের অংশ ৬৬.৫% থেকে কমে ৬১% এ নেমে এসেছে।
এই আলোচনার একটা উদ্দেশ্য হল, চাইনিজ ইউয়ান কি আসলেই ডলার কে রিপ্লেস করতে পারবে কিনা? সহজ ভাষায় বললে উত্তরটি হবে “না”।
এর কারন চীন এখনো তাদের বাজার উন্মুক্ত করেনি। তাদের অর্থব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রন চোখে পড়ার মত। আর মুক্তবাজার অর্থনীতিতে চীনের পক্ষে আপাতত ইউএস ফেডের মত নিরাপত্তা ও ওয়াল স্ট্রিট প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় একক মূদ্রার পরিবর্তে ডমিনেন্ট একাধিক মুদ্রার একটি হিসাবে ইউয়ান নাম লেখাতে পারে। আর ইউয়ান এর বৈশ্বিক মুদ্রা হবার চালিকা শক্তি হবে চীনের ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য। বিশ্বের প্রধান কাঁচামাল সরবরাহকারী এখন চীন। অধিকাংশ দেশের সাথে চীনের বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে যেটা ইউয়ানকে যৌক্তিক শক্তি দিবে।