নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ সরকারি-বেসরকারি সকল কাঁচা বাজার সমন্বিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফরিদ আহাম্মদ।
আজ মঙ্গলবার (৭ জুন) দুপুরে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত “সিটি-লেভেল সেমিনার — ঢাকা সাউথ সিটি করপোরেশন’স প্রায়োরিটিজ এন্ড কন্ট্রিবিউশন্স ফর দ্যা ঢাকা ফুড এজেন্ডা ২০৪১” শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে ঢাদসিক সিইও ফরিদ আহাম্মদ এ কথা জানান।
ঢাদসিক সিইও ফরিদ আহাম্মদ বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় দুই শতাধিক কাঁচা বাজার রয়েছে। যত্রতত্র সেসব কাঁচা বাজার গড়ে ওঠেছে। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী কাঁচা বাজারগুলো নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনেরই। সেজন্য আইনের আলোকে প্রবিধান করার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। কিন্তু ইতোপূর্বে সেই প্রবিধান কখনোই করা হয়নি। বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের নেতৃত্বে আমরা সেই প্রবিধানমালা প্রণয়ন করেছি। প্রবিধানটি ২ সপ্তাহ আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী জুলাইয়ের মধ্যে সেটার অনুমোদন পাবো। অনুমোদনের প্রাপ্তির পর প্রবিধানের আলোকে আমরা সমন্বিতভাবে সরকারি-বেসরকারি সকল কাঁচা বাজার নিয়ন্ত্রণ করব এবং সেগুলোকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসা হবে।”
সেমিনারে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা’র ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার জন টেলর (John Taylor) বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হল ঢাকার খাদ্য ব্যবস্থাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিস্থাপক এবং টেকসই করে ঢাকা ফুড এজেন্ডা ২০৪১ তৈরিতে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করা। এটি সরকার ও অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থাগুলোকেও নির্দেশনা দিতে পারবে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যায়সঙ্গত, সহজলভ্য এবং স্থিতিস্থাপক খাদ্য ব্যবস্থায় অবদান রাখতে পারে। আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে, শুধু ঢাকা না বরং সারাদেশের অনেক শহর একই ধরনের কৌশল তৈরি করতে পারে এবং তা করা উচিত।”
নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ ঢাকা উত্তর, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য ‘ঢাকা ফুড সিস্টেম ২০৪১’ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। শহরের বাসিন্দাদের জন্য ২০৪১ সালে সাশ্রয়ী মূল্যে, উন্নতমানের খাবার সরবরাহের ব্যবস্থাপনা সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারকে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিনজেন (Wageningen) ইউনিভার্সিটি এন্ড রিসার্চ এর প্রযুক্তিগত সহায়তায় সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে একটি প্রমাণ-ভিত্তিক এবং সহযোগিতামূলক পদ্ধতিতে ঢাকা ফুড এজেন্ডা ২০৪১ তৈরি করতে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করছে। এটি জাতিসংঘের খাদ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত শীর্ষ সম্মেলনের পরিকল্পনাগুলোকে বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
উল্লেখ্য যে, ঢাকা ফুড এজেন্ডা ২০৪১ প্রণয়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এ বছর এপ্রিল মাসে জাতীয় খাদ্য ব্যবস্থার অগ্রাধিকার ও ‘ঢাকা খাদ্য এজেন্ডা ২০৪১’ শীর্ষক একটি জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেই সেমিনারেই প্রস্তাব করা হয় যে, ঢাকা ফুড এজেন্ডা ২০৪১ এর গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং সিটি-লেভেল এর স্টেকহোল্ডারদেরকে সম্পৃক্ত করতে জাতীয় সেমিনারটির পরেই পর্যায়ক্রমে চার সিটি করপোরেশনে চারটি শহর-পর্যায়ের সেমিনার আয়োজন করতে হবে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রথম সেমিনারটি আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শহিদ উল্লাহ মিনু, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব ও ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর সিতওয়াত নাঈম, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের মধ্যে অঞ্চল-৪ এর মো. হায়দর আলী, অঞ্চল-৩ এর বাবর আলী মীর, অঞ্চল-২ এর সোয়ে মেন জো ও অঞ্চল-৫ এর মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সরকার, কাউন্সিলরদের মধ্যে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের আ স ম ফেরদৌস আলম ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের আয়শা মোকাররম, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরদের মধ্যে ৬ নম্বর আসনের নারগীস মাহতাব, ১৯ নম্বর আসনের শেফালী আক্তার, ২১ নম্বর আসনের সেলিনা খাঁন, ঢাকা জেলার মৎস্য কর্মকর্তা, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকা ও কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিবৃন্দ অংশ নেন।