জাজিম-আলমিরাও খালে ফেলে ঢাকাবাসী!
খালের ওপর তৈরি হচ্ছে ময়লার সেতু
বিশেষ প্রতিবেদক : পানি নিষ্কাষণের খাল নিয়ে কম কথা হয় না। পর্যাপ্ত খালের অভাবে ভোগা ঢাকা শহরে বৃষ্টি হলেই এই সমস্যা সামনে আসে। কিন্তু নগরবাসী কতটা সচেতন হচ্ছে? খাল পরিচ্ছন্ন করতে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নানা সময়ের কার্যক্রম বলছে, নগরবাসীর মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব স্পষ্ট। নিত্য ব্যবহার্য আসবাব থেকে শুরু করে এহেন কিছু নেই যা তারা খালে ফেলে না।
ঢাকাবাসীর কাছে পয়ঃনিষ্কাশন খাল যেন ময়লা ফেলার জায়গা। বাদ যাচ্ছে না ঘরের বাতিল তোশক, কম্বল, লেপ-কাঁথা, বালিশ, মশারি, বোতল কিছুই। এ যেন আবর্জনা ফেলার প্রতিযোগিতা। খালে ময়লা ফেলার হিড়িকের মধ্যে আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। প্রতি বছরই এ খাতে বাড়ছে ব্যয়ের পরিমাণ। অথচ সমাধানের পথ এখনো অজানা।
গত ২৩ এপ্রিল মিরপুরের কালসি এলাকায় খাল পরিষ্কার অভিযানে নামে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। কালসি এলাকার বাইশটেকি খাল, সাংবাদিক কলোনি খাল ও মুসলিম বাজার খাল পরিষ্কার করতে গিয়ে অবাক হতে হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। খালে পলিথিন, প্লাস্টিক, কাগজের পাশাপাশি মিলেছে মশারি, তোশক, পানির জারসহ নানা কিছু। জনগণের এমন অচেতনতায় হতাশ নগর কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা করেছে ডিএনসিসি। আর সেখানেও বর্জ্য ব্যবস্থার সব খাতেই বেড়েছে ব্যয়। নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যয় গত অর্থবছরে ৬৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এবার ৩৫ শতাংশ বাড়িয়ে তা করা হয়েছে ৮৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া বর্জ্য বিভাগের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও ক্রয়ের ক্ষেত্রে গত অর্ধবছরে সাড়ে নয় কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সেই ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ১১১ শতাংশ। ফলে এই খাতে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি টাকা। আর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ট্রাক ও মোটরসাইকেলের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা। যা গত অর্থ বছরের চেয়ে নয় গুণ।
প্রতিবছর ব্যয়ের পরিমাণ বাড়লেও কার্যত কোনো সমাধান আসছে না। ঢাকার প্রায় অধিকাংশ খালেই দেখা গেছে নগরবাসীর অসচেতনার ছাপ। যে যার মতো অবর্জনা ফেলে যাচ্ছেন পয়ঃনিষ্কাশন খালগুলোতে। যার ফলে ‘ময়লার সেতু’ তৈরি হচ্ছে খালের ওপর। মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খাল, কল্যাণপুর খাল, মিরপুর খাল, শেওরাপাড়া খালসহ সকল খালের পড়ছে স্থানীয়দের ময়লা।
সম্প্রতি ঈদুল আজহায়ও ঘটেছে একই চিত্র। কোরবানির বর্জ্য অপসারণের জন্য নগর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বিস্তারিত ব্যবস্থা গ্রহণের পরেও ময়লা পড়েছে খালেই।
নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, একদল খাল নোংরা করবে, আরেক দল খাল পরিষ্কার করতে থাকবে এই ধারাবাহিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে খাল নোংরাকারীদের বিরুদ্ধে সাজার ব্যবস্থা করা হোক।
রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা দীন ইসলাম বলেন, প্রতিটা এলাকায় সিটি করপোরেশনের বাসা থেকে ময়লা নিতে যায়। সবাই টাকাও দেয়। কিন্তু লেপ-তোষক, জাজিম, বালিশ- এগুলোতো ময়লাওয়ালারা নেয় না। নিলেও ওদের আলাদা কিছু টাকা দিতে হয়। তাই সবাই এগুলা খালে ফেলায়। খালে ফালাইলে তো আর কেউ কিছু বলে না। তাই ফালায়।
বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তরের বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, কালসি খাল পরিষ্কার করতে গিয়ে আমরা সেখানে সাতটি জাজিম, আলমারি, বালিশ, বিপুল পরিমাণ ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন আবর্জনা পেয়েছি। এখন জনগণকেও তো সচেতন হবে। আমরা সবাই সচেতন না হলে সমাধান আসবে না।
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, পরিস্থিতি আমাদের জনগণকে একটি অভিশপ্ত চক্রের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। জনগণ এর সম্ভাবনা এবং প্রয়োজনীয়তা শুকনা দিনে বোঝে না। জনগণ ও এই নর্দমা এবং নালার মতো করে এগুলোকে তারা ময়লা ফেলার ভাগাড় মনে করে।