নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি), ঢাকা মেট্রোঃ কার্যালয় (দক্ষিণ) কর্তৃক ভয়ংকর মাদক এলএসডি (লাইসার্জিক এসিড ডাইথ্যালামাইড) চক্রের অন্যতম মূলহোতা নাজমুল ইসলাম বিশ্বাস গ্রেপ্তার, ১৩৮ পিস এলএসডি (৯৬ পিস রঙ্গিন প্রিন্টেড ব্লট পেপার স্ট্রিপ এবং ৪২ পিস হোয়াইট ব্লট পেপার স্ট্রিপ) জব্দ করা হয়েছে, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।
জানা গেছে, মাদকাসক্তি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দেশব্যাপী জীবন বাজি রেখে মাদক বিরোধী দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
এর ধারাবাহিকতায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) এর ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ জাফরুল্ল্যাহ কাজল এর সার্বিক দিক নির্দেশনায় এবং ঢাকা মেট্রো (দক্ষিণ) কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ মাসুদ হোসেন এবং সহকারী পরিচালক সুব্রত সরকার শুভ এর তত্ত্বাবধানে ঢাকা মেট্রো (দক্ষিণ) কার্যালয়ের খিলগাঁও সার্কেলের পরিদর্শক মোঃ আব্দুর রহিম এর নেতৃত্বে খিলগাঁও সার্কেলের একটি অপারেশনাল টিম গতকাল মঙ্গলবার ৫ জুলাই, রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ভাটারা জামিয়া মাদানি মসজিদ রোড থেকে ক্রেতা সেজে ২৫ পিস রঙ্গিন প্রিন্টেড ব্লট পেপার স্ট্রিপ এলএসডি সহ নাজমুল ইসলাম বিশ্বাস (২৬)কে হাতেনাতে আটক করেন।
পরে তার দেয়া তথ্যমতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি ব্লকের ০৭ নম্বর রোডের তার দখলীয় ফ্লাটে তল্লাশী চালিয়ে কাঠের টেবিলের ড্রয়ার থেকে আরো ৭১ পিস রঙ্গিন প্রিন্টেড ব্লট পেপার স্ট্রিপ এলএসডি এবং ৪২ পিস হোয়াইট ব্লট পেপার স্ট্রিপ এলএসডি উদ্ধার করা হয়। এসময় অনুসন্ধানের স্বার্থে আসামীর ব্যবহৃত ১টি ল্যাপটপ এবং ১টি মোবাইল সেট জব্দ করা হয়।
গ্রেফতার কৃত আসামীর নাম ও ঠিকানা যথাক্রমে উল্লেখ করা হলো,
নাজমুল ইসলাম বিশ্বাস (২৬), পিতা- মৃত মোঃ নজরুল ইসলাম বিশ্বাস, মাতা- কাজী নাছিমা খানম, স্থায়ী ঠিকানা-গ্রামঃ নগরবাড়ি, থানাঃ আগৈলঝাড়া, জেলাঃ বরিশাল, বর্তমান ঠিকানা- বাসা নং- ৩/এইচ, রোড-৭, ব্লক-জি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ভাটারা, ঢাকা।
গ্রেপ্তার কৃত নাজমুল ইসলাম বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ২০১৭ সালে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি) পরিবেশ বিজ্ঞানে স্মাতকে অধ্যয়নের সময়ে সে এই মাদকের সংস্পর্শে আসে। তখন বিদেশে অধ্যয়নরত তার বন্ধুদের থেকে সে এই মাদক সংগ্রহ করতো বলে জানায়। পরবর্তিতে তথ্য প্রযুক্তি যেমন, ডার্ক ওয়েব ও বিটকয়েন ব্যবহার করে এই মাদক বিদেশ থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে এর বাজার সৃষ্টির প্রয়াস চালায়। ইতোপূর্বে ২০২১ সালে পুলিশের হাতে ১০ পিস এলএসডি সহ সে ধরা পরে। জামিনে বের হয়ে এসে পুনরায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সে ১৪০ পিস এলএসডি সে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসে।
এর মধ্যে ১৩৮ পিস এলএসডিসহ (৯৬ পিস রঙ্গিন প্রিন্টেড ব্লট পেপার স্ট্রিপ এলএসডি এবং ৪২ পিস হোয়াইট ব্লট পেপার স্ট্রিপ এলএসডি) গতকাল তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামীর ব্যবহৃত ল্যাপটপ এবং মোবাইল তাৎক্ষণিক অনুসন্ধানে মাদক বিক্রির একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের অন্যান্যদের আটক করতে অনুসন্ধান চলমান।
লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড (এলএসডি) (ইংরেজি: Lysergic acid diethylamide), এক ধরনের সাইকেডেলিক ওষুধ যা মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবের জন্য পরিচিত।
এটি প্রধানত প্রমোদমূলক ওষুধ হিসেবে এবং আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য ব্যবহৃত হয়। এলএসডি সাধারণত জিভের নিচে কিংবা ধোয়ার সাহায্যে কিংবা ইনজেকশানের সাহায্যে গ্রহণ করা হয়। প্রতিকূল মনস্তত্ত্ব প্রতিক্রিয়া যেমন উদ্বেগ, প্যারানয়া এবং বিভ্রম ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
এলএসডি মাদক মানুষের মধ্যে বিভ্রম (হেলুসিনেশন) তৈরি করে। এটা সেবন করার পর মস্তিষ্কে হেলুসিনোজেনিক অ্যাফেক্ট তৈরি হয়, যা ব্যক্তির ব্যবহার ও চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
বিশেষ করে এটা গ্রহণের পর সাধারণভাবে যে ধরনের রং প্রকৃতিতে দেখা যায়, তার থেকেও বেশি রং দেখতে পাওয়া যায়।
এলএসডি গ্রহণে মানুষের হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যা শুরু হয়।
এ ছাড়া অনেকের ক্ষেত্রে অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, অতিরিক্ত ঘাম সহ বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যাও তৈরি হয় ।