কিশোর গ্যাং
মহসীন আহেমদ স্বপন: সারাদেশে কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রক গডফাদারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পরিবারের উদাসীনতা ও নোংরা রাজনীতির কারণেই ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। রাজধানীতে এলাকা ভিত্তিক গড়ে উঠছে আলাদা আলাদা গ্যাং। কোনো কোনো এলাকায় একাধিক গ্রুপ গড়ে উঠেছে। এসব গ্যাং ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তারে মারামারি, খুনখারাবি, মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন, ইভটিজিং সবই করছে। নিজেদের অবস্থান জানান দিতে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা স্ট্যাটাস দেয়। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমুতে তারা একে অপরের সঙ্গে ভাব বিনিময় করে। বিপক্ষ গ্রুপকে প্রতিহত করার জন্য প্রকাশ্য হুমকি-ধমকি দেয়া তাদের নিত্যদিনের কাজ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, এরা কথায় কথায় মারামারিতে জড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি ভাড়াটে হিসাবেও ব্যবহার হচ্ছে। এদের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত। কেউ কেউ আবার মাদকের ব্যবসার সাথেও জড়িত। প্রভাবশালীরা তাদের ফায়দা হাসিলের জন্য এদেরকে ব্যবহার করে থাকে। শহর থেকে গ্রামে কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে স্থানীয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ছাত্র-যুব নেতাদের আশ্রয় প্রচ্ছয়ে। তাদের কারণে অপরাধ করেও এরা সহজে পার পেয়ে যাচ্ছে। কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ঙ্কর রূপ নেওয়ায় সরকার প্রধান দুর্নীতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ছাত্রলীগ দিয়ে শুরু করে যুবলীগ ও আওয়ামী নামধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী নামধারীদের আশ্রয়-প্রচ্ছয় সারাদেশে কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে।
আমাদের চট্রগ্রাম প্রতিনিধি জানান, দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নগরীর চকবাজার এলাকার দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ, একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রক যুবলীগ নেতা পরিচয়দানকারী নুর মোস্তফা টিনু র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর এই আতঙ্ক এখন সব গ্যাং নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত নুর মোস্তফা টিনু নগরীর চকবাজার, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, বাকলিয়া কেন্দ্রীক একজন দুর্র্ধষ চাঁদাবাজ ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হিসেবে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কের নাম ছিলো। বর্ণিত এলাকার শত শত দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিনুকে চাঁদা দিয়েই ব্যবসা করতো। তার নিয়ন্ত্রণে উক্ত এলাকায় একাধিক কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রিত হতো। এসব গ্যাংয়ের মাধ্যমেও খুন, চাঁদাবাজী, চুরি, ছিনতাইয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন টিনু। যুবলীগের কোন পদ-পদবীতে না থাকলেও নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকায় নিজের আধিপত্য গত ১০ বছর ধরেই বহাল রেখেছেন টিনু।
সর্বশেষ ঢাকা থেকে ছাত্রলীগ, যুবলীগের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু হলে আতঙ্ক ছড়ায় চট্টগ্রামেও। রোববার রাতে নগরীর চকবাজার এলাকায় র্যাব সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে দু’টি অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ যুবলীগ নেতা পরিচয়দানকারী টিনুকে গ্রেপ্তার করেন। টিনুর গ্রেপ্তারের পর পরই এলাকায় নিজেদের নিষ্ক্রিয় করে গা ঢাকা দিয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়ে সন্ত্রাস পরিচালনাকারী এবং কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রকরা।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরজুড়ে প্রায় ২৫টির বেশি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। এসব গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রক যুবলীগ নেতা পরিচয়দানকারী সন্ত্রাসীরা। এসব গ্যাং এর মাধ্যমে গত এক বছরে ৪টি খুনের ঘটনা ঘটেছে নগরীতে। আর চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চুরি ছিনতাইয়ে ঘটনা ঘটছে হার-হামেশা।
এসব গ্যাং নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে আসলেও গ্যাং নিয়ন্ত্রক নেতা পরিচয়দানকারীদের কারণে শতভাগ সফলতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চলমান শুদ্ধি অভিযানে আতঙ্ক ছড়িয়েছে গ্যাং নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে।
দুদিন পূর্বে চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সন্ত্রাস অনিয়মের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামেও অভিযান চলবে। কোন রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা করা হবে না। যারাই সন্ত্রাস করবে, যারাই অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এর একদিন পরেই চট্টগ্রাম র্যাব-৭ এর একটি চৌকস দল নগরীর চকবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে বড় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রক নুর মোস্তফা টিনুকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে একটি শর্টগান, একটি বিদেশী পিস্তল এবং ৬৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে দু’টি মামলা দায়ের করে পাঁচলাইশ থানায় হস্তান্তর করে র্যাব।
এ প্রসঙ্গে পাঁচলাইশ থানার ওসি (তদন্ত) শাহদাত হোসেন জানান, টিনুকে অস্ত্র আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের লক্ষ্যে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছে আদালতে। রিমান্ড শুনানী শেষে আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলে তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।