সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর অসুস্থ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ওপেন হার্ট সার্জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকরা। সপ্তাহখানেক পর তার ওপেন হার্ট সার্জারির পরিকল্পনা করছেন মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক আবু নাসের রিজভী। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরের ডাক্তাররা তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন কিডনিতে একটু সমস্যা এবং কিছু ইনফেকশন রয়েছে। এগুলো কন্ট্রোল করেই তার বাইপাস সার্জারি করা হতে পারে।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ)চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওবায়দুল কাদেরের এনজিওগ্রাম করা হয়। এতে দেখা যায় তার হার্টে তিনটি ব্লক।
এনজিওগ্রাম করে দেখা যায় তার হার্টের প্রধান আর্টারিসহ তিন রক্তনালিতে বড় ধরনের ব্লক রয়েছে।এছাড়া আরও কিছু ছোট ছোট ব্লক রয়েছে। তিনটি রক্তনালিতে ব্লকের পরিমাণ যথাক্রমে ১০০ ভাগ, ৯৯ ভাগ এবং ৮০ ভাগ। পরে দ্রুততার সঙ্গে বিকল্প পদ্ধতিতে স্টান্টিং করে (রিং পরিয়ে) একটি ব্লক অপসারণ করা হয়।
এছাড়া শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে একটি এক্সটার্নাল পেসমেকারও লাগানো হয়। তার হার্টের তিনটি রক্তনালীর মধ্যে একটি আগে এক সময় হার্ট অ্যাটাকে ১০০ শতাংশ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বাকি দুটি রক্তনালীর মধ্যে একটি ৮০ শতাংশ বন্ধ।
আর এলএডি (লেফট এন্টেরিয়র ডিসেন্ডিং) নামের যে আর্টারি হার্টের দুই তৃতীয়াংশে রক্ত সরবরাহ করে, তার ৯৯ শতাংশ ছিল বন্ধ।
ওবায়দুল কাদেরের শরীরে কিডনিসহ অন্যান্য সমস্যা থাকায় বিএসএমএমইউর চিকিৎসকরা ওপেন হার্ট সার্জারির সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। গত দুদিনে তার অন্যান্য শারীরিক জটিলতা কমে আসায় এবং হৃদপিন্ডে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার ওপেন হার্ট সার্জারির সিদ্ধান্ত নিলেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল চিকিৎসার হালনাগাদ বিষয়াদি আজ মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে ব্রিফ করেন ডা. ফিলিপ কোহের নেতৃত্বাধীন মেডিকেল বোর্ড। তার বক্তব্যের আলোকে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার আপডেট গণমাধ্যমের জন্য জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. আবু নাসের রিজভী।
আগামীকাল বুধবার (৬ মার্চ) দুপুর সাড়ে বারটায় ডা. ফিলিপ ফের ব্রিফ করবেন বলে জানা গেছে।
আবু নাসের রিজভী বলেন, ‘গতকাল বাংলাদেশ রাত ১১টায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে আনা হয়। পরে জরুরি ভিত্তিতে একটি মেডিকেল বোর্ড করা হয়। সেখানে ছিলেন কার্ডিওলজিস্ট ডা. ফিলিপ কোহ, ডা. শ্রীবাস্তব কুমার, অশোক কুমার, কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. হু চি কো এবং সং কি মিন।’
তিনি বলেন, ‘তারা পাঁচজন মিলে তাকে গভীর নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আজকে সকালে আমাদের সঙ্গে বসেন এবং তার ফিডব্যাক দেন। প্রথমত তারা গত দুইদিনের বাংলাদেশের চিকিৎসার জন্য প্রশংসা করেন। এখন তার অবস্থা মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে কিন্তু কিডনিতে একটু সমস্যা এবং কিছু ইনফেকশন রয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কিডনি সমস্যা এবং ইনফেকশনকে কন্ট্রোল করে বাইপাস সার্জারি করার চিন্তা করছেন তারা। বর্তমানে তার অবস্থা ক্রমেই উন্নতির দিকে যাচ্ছে।’
মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ড. ফিলিপ কোহের তত্ত্বাবধানে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা চলছে। আইসিইউ ৩০০৮ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন ওবায়দুল কাদের।
সেখানে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে রয়েছেন তার স্ত্রী ইশরাতুন্নেসা কাদের ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. আবু নাসের রিজভী।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে সেখানে অবস্থান করছেন গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।
সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাস ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দূতাবাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দলীয় সাধারণ সম্পাদকের চিকিৎসার বিষয়ে সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছেন।
এর আগে সোমবার বিকাল সোয়া ৪টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদেরকে নিয়ে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। বাংলাদেশ সময় রাত ৭টা ৫০ মিনিটে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সিঙ্গাপুরে পৌঁছে বলে সেদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস জানান।
প্রসঙ্গত, রোববার সকালে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকের পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। সিসিইউর ২ নম্বর বেডে লাইফসাপোর্টে চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে। পরে সোমবার উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠির পরামর্শে ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার সিদ্ধান্ত দেয় তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড।