সামরিক বিশ্লেষক ঃ ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন বর্বর্তার কথা সবাই জানি। মার্কিনিদের ভিয়েতনাম ক্যাম্পেইন চলাকালে লাওসের ওপর প্রায় ২৭০ মিলিয়ন বোমা নিক্ষেপ করেছিল ইউএস এয়ারফোর্স। অর্থাৎ টানা ৯ বছর ধরে দিন রাত ২৪ ঘন্টা প্রতি ৮ মিনিট অন্তর অন্তর লাওসের উপর বোমা হামলা চালিয়ে গিয়েছিল মার্কিনিরা।
আরো একটি চমকপ্রদ তথ্য হল ২৭০ মিলিয়ন বোমার মধ্যে প্রায় ৮০ মিলিয়ন বোমা বিষ্ফোরিত হয়নি। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় পাইলটরা যদি কোন কারণে মিশন কমপ্লিট করতে না পারত তখন তারা লাওসকে ডাম্পিং গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করত। অর্থাৎ বোমাগুলো নিয়ে বেজে না ফিরে তারা লাওসের উপর ফেলে দিত।
যা এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই বোমাগুলো বিষ্ফোরিত না হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল আবহাওয়ার। লাওসের অত্যাধিক বৃষ্টি হওয়র কারণে এর ভূমি প্রায়ই কর্দমাক্ত থাকত। মার্কিন বম্ব গুলোর ডেটোনেটর মুলত ফিউজ ইম্প্যাক্ট মেথডে বিষ্ফোরিত হত, অর্থাৎ শক্ত মাটিতে আঘাত পেয়ে ফিউজ এক্টিভ হয়ে ডেটোনেট হত। কিন্তু কর্দমাক্ত মাটিতে বোমাগুলো পড়ার কারণে ফিউজ এক্টিভ হতনা। তাই এত বিশাল সংখ্যক অবিষ্ফোরিত বোমা রয়ে গেছে।
যুদ্ধ পরবর্তীতে মিলিটারির পাশাপাশি ভলান্টিয়ার নিয়োগ দেয়া হয় এসব বোমা খুঁজে বের করে নিরাপদ করার।
৮০ মিলিয়ন বোমা খুঁজে বের করে সেগুলোকে নিরাপদ করা তো আর চাট্রিখানা কথা নয়। এবার এগিয়ে আসে গ্রামবাসী। তাদের বাড়ির আশপাশে থাকা বোমা গুলোকে নিজেদের মত করে সংগ্রহ করে, এক্সপ্লোসিভ সরিয়ে নিজেদের মত ব্যবহার করতে শুরু করে। সেসব বোমার স্ট্র্যাকচার দিয়ে কেউ নৌকা বানায়, কেউ চামচ, কেউ সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে বা কেউ ঘরের খুঁটি হিসেবে। এ
এভাবে চলছে অবিষ্ফোরিত বোমা উদ্ধারের কাজ। এখনো পর্যন্ত লাওসের ১৬০০ একর ভূমি অতি ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে অবিষ্ফোরিত বোমার কারণে। শেষ ছবিতে যেসব স্হানে বোমা হামলা হয়েছিল তার একটা চিত্র দেখতে পাচ্ছেন।
